Latest News

দেশপ্রেম বুকে যাঁর : গণ-মানুষের কবি দিলওয়ার

দীনুল ইসলাম বাবুল :: আটষষ্টি-উন সত্তোরের আগুন ঝরা দিনে আমরা এক ঝাঁক তরুন , কবি দিলওয়ারের আহ্বানে “ সমস্বর ” , পরবর্তীতে “ সমস্বর লেখক ও শিল্পী সংস্থার” কাজে ঝাঁপ দেই।
অত:পর তাঁরই নেতৃত্বে “ কলম তুলি সংঘ ”সহ নামে আরো  কয়েকটি সংগঠন গড়ে তুলি। স্বাধীনতার আন্দোলনকে আরো বেশী বেগবান করতে আমরা সিলেট শহরের প্রায় সকল পাড়া-মহল্লায় বিভীন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্টান ও গণ-সঙ্গীতের আসর করি।

এই সময় হিমাংশু বিশ্বাস, দুলাল ভৌমিক, হিমাংশু গৌস্বামী, আরতী ধর, রামকানাই দাশ , রাখি চক্রবর্তী , আক্রামুল ইসলাম, সুবীর নন্দী, সূজেয় শ্যাম, সহ বহু শিল্পীরা কবি দিলোওয়ার রচিত সঙ্গীত পরিবেশন করতেন। উস্তাদ আলী আকবর , রামকানাই দাশ ঐ সব অধিকাংশ গানেই সুরারোপ করেন। এই গান গুলোর অনেক গুলোই- ‘স্বাধীন বাংল বেতার’ থেকে নিয়মিত প্রচারিত হতো। তাঁর রচিত গানগুলো তখন এতোই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল যে , আমরা চলার পথে মানুষের মুখে মুখে ঐ গুলো গীত হতে শুনেছি। যেমন :
এক ॥ দিকে দিকে , ধিকি ধিকি লাল উত্তাল / দূর্জয় জনতার প্রানের মশাল , গানের মশাল। দুই ॥ হিন্দু কী মুসলিম , বৌদ্ধ কী খ্রীষ্টান , বাংলার মাটি আর চায়না / সব মন এক মন , সব প্রাণ এক প্রাণ / বুক তার বিশ্বের আয়না। তিন ॥ আমাদের ইতিহাস পৃথ্বি , সমুদ্র সম্ভাষে ধন্যা / সংগ্রাম আমাদের ভিত্তি , ভালবাসা রক্তের বন্যা। চার ॥ গোলামীর জিঞ্জির ছিঁড়েছে , নিজ দেশে পরবাসী নই আর / কোটি প্রাণে মুক্তির ঝংকার , বন্দরে তরী এসে ভিড়েছে। পাঁচ ॥ মা আমার গলা ধরে বলেছে , হয়নিরে শেষ তোর যুদ্ধ / হয়নিরে সবপ্রাণ শুদ্ধ , মা আমার গলা ধরে বলেছে।

দুই ॥ “ চিরদিন স্বদেশের ”- এর প্রধান অতিথি : গণ-মানুষের কবি দিলওয়ার ॥
২১শে মার্চ , ২০০৮। সিলেট জিলাপরিষদ মিলনায়তনে আমার প্রথম কাব্য গ্রন্থ “ চিরদিন স্বদেশ ” প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি কবি দিলওয়ার বইটির মোড়ক উন্মোচন প্রাক্কালে আমার গলায় তাঁর নিজ হাতে একটি উত্তরীয় পরিয়ে ঘোষনা করে ছিলেন : “ দেশপ্রেম বুকে যার , আমি তার চিরকাল সঙ্গী। ”

স্বাধীনতা উত্তর জাসদ সমর্থিত বৈঞ্জানিক ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসাবে গোয়েন্দাপুলিশ , রক্ষীবাহিনী শ্যান দৃষ্টিতে পড়ায় ও জগন্নাথপুর থনার শাহারপাড়া পুলিশ এসোল্ট মামলার আসামী হওয়ায় শহরে ও গ্রামে  ঐসব বাহিনীর তাড়া খেতে খেতে শেষ পর্য্যন্ত নিরুপায় হয়ে অপরাপর নিজ দলীয় নেতা-কর্মীদের মত পশ্চিম জার্মানীতে রাজনৈতীক আশ্রয়ে চলে যাই ও জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করে ১৯৮৮ সনে সুনামগঞ্জ জিলাধীন , জগন্নাথপুর উপজেলার ৮নং আশারকান্দি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হই।

গ্রাম্য সালিশ-পঞ্চায়েত সহ বিবিধ কাজে সম্পৃক্ত থাকায় সিলেটের সাহিত্য-সাংস্কৃতিক অঙ্গনে আমার দীর্ঘ অনুপস্থিতি ঘটে যায়।
যে কারনে আমার প্রথম কাব্য গ্রন্থ “ চিরদিন স্বদেশ ” প্রকাশনা উৎসবে প্রধান অতিথি কবি দিলওয়ার তাঁর লিখিত বক্তব্যের শিরোনাম দিয়েছিলেন “ একজন কবির নতুন জন্ম দিনে। ” বলা বাহুল্য যে , আমার প্রতি তাঁর এই ক্ষোভদ্ধতার কারনই ছিল আমার দীর্ঘ অনুপস্থিতি। তাই তিনি তাঁর ব্ক্তব্যের শুরুতেই বলেছিলেন : “ একজন স্বল্প পরিচিত কবি-দীনুল ইসলাম বাবুল , তার প্রথম প্রকাশিত কাব্য গ্রন্থ “ চিরদিন স্বদেশ ”। প্রকাশ কাল ২০০৮। আমরা আজ এখানে সমেবেত হয়েছি এই কাব্য-গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবকে কেন্দ্র করে। কবির সনির্বন্ধ অনুরোধে আমাকে হতে হয়েছে প্রধান অতিথি। যদিও চিকিৎসা বিঞ্জানের মতে আমার দেহ সত্তা অনেকটা আজ আর আমার মাধ্যে নাই। তারপরেও কবির সাথে আমার দীর্ঘ কালের এক হার্দিক সম্পর্ক বেঁচে থাকার কারনে আমি কিছু বক্তব্য রাখতে এসেছি। ”

এর পর ক্ষোভে দু:খে আমাকে ‘ স্বল্প পরিচিত ’ কবি বলার কারন ব্যাখ্যার্থে কবি বলেছেন : “ বৃহত্তরো সিলেট সাহিত্যাঙ্গনে নতুন প্রজন্মের যেসব কবি-সাহিত্যিক রয়েছে , তাদের কারো মুখে আমি দীনুল ইসলাম বাবুলের কথা শুনতে পাইনি। কবির প্রতি আমার যে স্বল্প পরিচিতির অভিযোগ , তার মূল কারন এখানেই নিহত। ”
শিরোনাম ভিত্তিক আমার ঐ গ্রন্থের প্রথম কবিতা ‘ চিরদিন স্বদেশ ’-এর প্রায় পুরোটাই উল্লেখ করে কবি-দিলওয়ার বলেছিলেন :
“ আজ থেকে ৩৫ বছর আগে লেখা এই কবিতাটি কী বলে ? একজন তরুন তার স্বাভাবিক দেশত্ববোধ ব্যক্ত করেছে অসংখ্য শব্দ প্রয়োগের মাধ্যমে। আমি বলবোনা এরকম কবিতা আর লেখা হয়নি। কিন্তু বৃহত্তরো সিলেটের প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে সেদিনের কবি দীনুল ইসলাম বাবুলের এরকম উচ্চারন ছিলো নতুন সৃষ্টির স্বপক্ষে। ”(পুরো বক্তব্য প্রকাশ : দৈনিক উত্তর পূর্ব / শুক্রবার , ৪ঠা , এপ্রিল , ২০০৮ )।

তিন ॥ দ্রেনাচর্য্য : দিলওয়ার ॥
অতি কাছ থেকে আমার দেখা ও জানা মতে বৃহত্তরো সিলেটের প্রায় সকল শব্দ-চাষী তরুন , কলম সৈনিকেরাই গণ-মানুষের কবি দিলওয়ারের সতীর্থ ছিলেন। যে কারনে সিলেটের বহু লেখক-কবির লেখায় ‘দিলওয়ার বলয়ের’ প্রতিচ্ছবি পরিলক্ষিত হয়। আর হয়ত তারই পরিপ্রেক্ষিতে প্রখ্যাত লেখক-সাংবাদিক-সাহিত্যিক-সমালোচক আব্দুল হামিদ মানিক আমার “চিরদিন স্বদেশ” গ্রন্থের প্রকাশনা উৎসবে প্রধান বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এক পর্য্যাযে বলেছিলেন : “ দীনুল ইসলাম বাবুলের লেখার মধ্যে কবি দিলওয়ারের ছায়া অনুভূত হয়। ” 

অত:পর আমার বক্তব্যে আমি তাই অনেকটা স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দীর মতই বলেছিলাম,-‘ রবীন্দ্র-নজরুল বলয়’ যেমন অনেকেই ভাঙ্গতে পারেননি , তেমনি বৃহত্তরো সিলেটের পর্য্যায়ে আমরা অনেকেই দিলওয়ারের পুরোপুরি ছায়া-মুক্ত হতে পারিনি। তার কারন আমরা কেউ “ একলব্য ” মুণির মত কবি দিলওযার কতৃক প্রত্যাখ্যিত হইনি। বরং আমরা প্রায় সকলেই তার স্বযতেœ সাজানো ও লালিত ছোট-বড় কুসুমাদি ছিলাম।

কবি দিলওয়ারের কবিতায় অবাধ পৌরাণিক বিচরন , শব্দ চয়ন , উপমা ইত্যাদি আমাদেরকে কোরান-বেদ-বাইবেল-জেন্দ আবেস্থা-ত্রিপিটক-গ্রন্থসাহেব-বেদান্ত-উপনিষদ-পুরাণ-মহাভারত-রামায়ন-মনসা মঙ্গল-চর্য্যাপদ-ইতিহাস-দর্শন ইত্যাদির প্রতি ধাবিত করে।
তাঁর লেখা  আমাদেরকে-কবীর জোলা , গারিব , মৌলানা রুমী , ইমাম গাজ্জালী , আল বেরুনী , ইবনে খালদুন , আল কিন্দি , আল ফারাবী ,ইবনে রুশদ , আল কেমি , ইকবাল , নাজিম হিকমত সহ বহু মনিষীদের জীবনি , লিখা , বাণী পাঠে উৎসাহী করে তুলতো।
তাঁর লেখা আমাদেরকে প্রাচ্য-পাশ্চাত্য দর্শন সম্পর্কে অগ্রহী করতো বিধায় আমরা ,  থেলিস , সক্রেটিস , প্লুটো , এরিস্টটল , মাইনষ্টার , আলেকজান্ডার , প্লোটাগোরাস , প্লোটিনাস , এম্পিডকিস , টমাস একুইনাস প্রমুখদের দর্শন সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হতাম। কবি দিলওয়ার আমাদেরকে ‘ মাইলেসীয় দর্শন ’ সম্পর্কে জানার বা বুঝার তাগদা দিতেন।

তাঁর লিখা আমাদেরকে রুশ-বিপ্লব , ফরাসী-বিপ্লব , চীনের বিপ্লব-প্রতি বিপ্লব সম্পর্কে জানার জোর তাগিদ দিতো। এবং বিপ্লবী লেলিন , মাও সেতুং , স্টেলিন , হোচিমিন , কাষ্ট্রো-চেগুয়েভারা , চারু মজুমদার সহ বির্শ্বে বড় বড় বিপ্লবীদের অর্জনের কথা , ঘটনা , কর্মকান্ডের কথা শুনাতেন যার ফলে ঐসব মহা মানবদের সম্পর্কে জানার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠতাম।

চার ॥ আমার জনক ওয়াজিব উল্লাহ মাষ্টার ও কবি দিলওয়ার ॥
আমার অক্ষয়-অব্যয় স্মৃতিপটে দুই ব্যক্তিত্বের অপূর্ব মিল কাকতলীয়। আমার জনক মরহুম ওয়াজিব উল্লাহ মাষ্টার ও গণ-মানুষের কবি দিলয়ার। রতনে রতন চিনার মত একজন অপরজনকে চিনেছিলেন একাত্তোরের প্রথম দিকে যখন দেশের মাটিতে নর-দানবের যুদ্ধ চলছিল , তখন কবি দিলওয়ার আমাদের গ্রামে আসায় এবং এখানে কিছুদিন অবস্থান করায় বাবার সম্পর্কে অনেক কিছু জানার পর তাঁদের মধ্যে একটা প্রগাঢ় বন্ধুত্ব সৃষ্টি হয়েছিল। যে কারনে  কবি দিলওয়ার বাবার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতিও লিখেছিলেন। বাবা ও মরহুম কমরেড আসাদ্দর আলী ( সাম্যবাদী দলের প্রাক্তন সভাপতি ) ছিলেন সহপাঠি , ঘনিষ্ট বন্ধু ও ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের সহ যুদ্ধা। বাবা তাঁর ছাত্র রাজনীতির সময়ে “নর্থ সিলেট স্টুডেন্ট ফেডারেশনের” সেক্রেটারী ছিলেন। পিতৃ-মাতৃ হীন হয়ে , পারিবারিক বিবিধ কারনে তাঁকে শেষ পর্য্যন্ত বাধ্য হয়ে যুক্তরাজ্য প্রবাসী হতে হয়েছিলো। বিচার-বৈঠকে , সালিশ-পঞ্চায়িতে তিনি ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদী। কথবার্তাও সুস্পষ্ট-ক্ষুরধার। তিনি বলতেন : “ কুত্তার বাচ্চার মত একশ’ বছর বাঁচার চেয়ে মানুষের বাচ্চার মত এক দিন বাঁচারও সার্থকতা আছে।”
আর কবি দিলওয়ার বলতেন : “ যতোদিন বেঁচে আছো ততোদিন মুক্ত হয়ে বাঁচো / আকাশ মাটির কন্ঠে শুনি যেন তুমি বেঁচে আছো। ” একজন বলতেন কথায় কথায় , বক্তব্যে বক্তৃতায়। আরেক জন বলতেন কবিতার প্রাঞ্জল ভাষায়। 

পাঁচ ॥ সব্যসাচী কবি দিলওয়ার ॥
 আজীবন রোগী কবি দিলওয়ার ছিলেন সত্যাশ্রয়ী , স্পষ্টভাষী বিপ্লবী চেতনায় , চির বিদ্রোহী , সংগ্রামী কলম সৈনিক। অত্যাধুনিক মারনাস্ত্রের চেয়েও ভয়ংকর ছিলো তাঁর হাতের কলম আর দীপ্র মনন। বিষ্ণুর সুদর্শন চক্রের চেয়েও দূর্ভেদ্য ছিলো তাঁর লেখনি শক্তি। তাঁর হাতের কলম নামক মারনাস্ত্র ‘আত্তিলার’ অশ্বের ক্ষিপ্রতাকেও হার মানিয়ে কম্পিত করেছে গণ-মানুষে হৃদয় , মন ও চেতনাকে। তাঁর কথাই ছিলো যেন গণ-মানষের কথা। তাই তাঁর প্রতিটি কবিতার শব্দাবলী মানুষের মনকে স্পন্দিত করতো। যেমন :“ আমি সেই মানুষের বাংলা , যারা আর দাস হতে রাজী নয় / দানবের গ্রাস হতে রাজী নয় ,দিনরাত যারা যারা জাগে / প্রভাতের পুরো ভাগে , শোষে নিতে শোষিতের কান্না ॥ (কবি দিলওয়ার রচিত , “ মাষ্টার সাহেব মো: ওয়াজিব উল্লাহ : একটি পরিচিতি ”-এর প্রচ্ছদ ফ্যাপের কবিতাংশ )

ছয় ॥ শুদ্ধতম একজন গণ-মানুষের কবি দিলওয়ার ॥
শুদ্ধতম একজন গণ-মানুষের কবির বুকে , মন ও মননে স্বদেশপ্রেম যে কতটুকু একান্ত সান্দ্র ও তীব্রতরো হতে পারে গণ-মানুষের কবি দিলওয়ারের শাণিত , বিশুদ্ধ শব্দাবলীতেই তার প্রমাণ : “ স্বাধীনতা আমাকে বিলাও : যে মন্ত্রে চুর্নীত হয় বিমগ্ধ দাসের মনোভাব / গণচিত্তে মুক্তি পায় দূর্বীনিত সাম্যের স্বভাব / রাত্রী হয় প্রভাতে উধাও। ”‘বিপ্লব স্পন্দিত বুকে মনে হয় আমিই লেলিন’- বিপ্লবী কবি সুকান্ত ভট্রাচার্য্যরে মত গণ-মানুষের কবি দিলওয়ারকে ও দেকি প্রচন্ড আত্মপ্রত্যয় ও সুতীব্র-দ্রীপ্ত প্রতিঞ্জায় কঠিন-কঠোর। মাতৃমুক্তি পণে তাঁর সুদৃঢ় ঘোষনা : “ আমি পুত্র বিনতার , কুটিলা কদ্রুর সর্বনাশ / আমি দৃপ্ত নচিকেতা : নতুন আলোর ইতিহাস /প্রিয়জন প্রস্তুতি নাও ‘ কংসবধ ’ পালা এলো / মারনাস্ত্র শাণাও শাণাও। ”

সাত ॥ চলমান বিশ্ব সচেতন কবি দিলওয়ার ॥
“ শোনো তার ডাক শোনো , ইস্পাত নির্মিত তরবারি / মর্মের গভীরে হানে উজ্জ্বল দ্বিধাহীন / পৃথিবী স্বদেশ যার আমি তার সঙ্গী চিরদিন / আমাকে সমুদ্রে খুঁজো হে প্রিয় সংগ্রামী নর নারী। ” বিশ্বের নাগরিক হিসাবে স্বঘোষিত ভাষায় দিলওয়ার এমন কথাই নির্দ্বিধায় বলতে পেরেছিলেন। চলমান বিশ্বের সামাজিক , রাজনৈতিক ও নৈতিক অবক্ষয়ে সদা জাগ্রত , সচেতন কবি ছিল ক্ষত-বিক্ষত। তাই তাঁকে বলতে শুনি :“ বিলগেট লক্ষী মিত্তালের মত ধনকুবের গোষ্টি , তাদের খাসরুমে চিত্রিত করে রেখেছে স্বর্গ এবং নরক। ”

তাই তাঁর জিঞ্জাসা ছিল ‘ ধনবানের বোঝা বওয়ার মত ‘জাতিসংঘের’-প্রতি : “ পিরামিডের চুড়ায় মাঝে মাঝে , নূড়ি পাথরের মত / ঈগল বাজ পাখিদের বিষ্টা নামে / কোটি অসহায় শ্রমজিবীর প্রতীক্ষার কাল শেষ হল বুঝি ? ” এই জিঞ্জাসার জবাবের প্রতীক্ষায় ছিলেন কবি দিলওয়ার। জবাব পাবেন না হয়ত তা ও জানতেন। তাই তাঁর “ পবিত্র থুথু ” কবিতায় দেখি কবি বলছেন :“ ওরা হাসেনা , চুপি চুপি মন্ত্রনা করে / হিংস্্র দাঁতগুলোয় মানুষের রক্ত / গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রবাদ আর রাক্ষুসে মৌলবাদ / ওদের গলার শেকল নিয়ন্ত্রন করে। ” বর্তমানে বিশ্বগ্রাসী আমেরিকা কুটিল দাপটে অশান্ত পৃথিবী সম্পর্কে সচেতন কবিকে বলতে শুনি : “ পরলোকে গেছে মেঘনাদ , তবে কিনা রেখে গেছে মারাত্মক দৈবী এক সাধ / মায়াবিদ্যা এক তামসী-কে মর্ত্যে রেখে গেছে /এই বিদ্যা বলে অন্তরালে যুদ্ধ করা চলে / পেন্টাগন তামসী-কে বৈঞ্জানিক পন্থায় নিয়েছে ! ” আমরা জানি কবি দিলওয়ারের প্রকাশিত প্রথম কাব্যটিই ছিল-“ জিঞ্জাসা ”। এই জিঞ্জাসাই দেখি কবিকে আজীবন তাঁর কাব্য সাধনায় রেখে দিয়েছিলো। তাঁর অজ¯্র জিঞ্জাসার মধ্যে এও দেখতে পাই : কোরান , তৌরাত , বেদ , গীতা , ত্রিপিটক / জেন্দেআবেস্থা আর গ্রীসের নাটক / ক্রোশবিদ্ধ বাইবেল পাঠ , পেরুলো কি যুদ্ধেও মাঠ ? ”

আট ॥ দেশপ্রেম বুকে যাঁর : গণ-মানুষের কবি দিলওয়ার ॥   
তারপরও বলবো দেশপ্রেম বুকে যাঁর সেই গণ-মানুষের কবি দিলওয়ার বালাদেশের চুড়ান্ত বিজয় দেখে কবিতায় প্রকাশ করেছিলেন তাঁর অহংকার : “ আমি সেই মানুষের বাংলা / যারা আর দাস হতে রাজী নয় /দানবের গ্রাস হতে রাজী নয় /দিনরাত যারা জাগে প্রভাতের পুরোভাগে / শোষে নিতে শোষিতের কান্না ॥ ক্রীতদাসী জননীর বুকে দুধ জমেনা /নিদারুন হতাশার যন্ত্রনা কমেনা ॥ / আমি সেই মানুষের বাংলা /সাগরের বুকে যারা ঝাঁপ দেয় / মরণের হিমাংগে তাপ দেয় / তারা ঢেউ দূর্বার , বাধাকরে চুরমার ,তুলে আনে হীরা-চুনী-পান্না ॥ (আমার কাছে রক্ষিত-এটি তাঁর অপ্রকাশিত মূল্যবান একটি গণসঙ্গীত। তাই পুরোটাই উল্লেখ করলাম। )
নয় ॥ শেষ নিবেদন :
আমি পশ্চিম জার্মানীতে থাকাকালীন সময়ে “মৌমাছি” নামক সংগঠনের কথা। জার্মান থেকে ফিরার পর “ কবি দিলওযার পরিষদের” কথাও শুনেছিলাম। কিন্তু আমার দূর্ভাগ্য আমি আর যোগাযোগ করতে পারি নাই বা আমার খোঁজ খবর ও কেউ নেয় নাই। এতে আমার বিন্দু মাত্র ক্ষোভ বা দু:খ নেই। কারন আমি ‘একলব্য’ মুনির মতই তাঁর আপাদ মস্তক শিষ্য। তাই তাঁর অজান্তেই আমার প্রকাশিত দ্বিতীয় গ্রন্থটি-“ এইতো স্বদেশ ”  উৎস্বর্গ করেছিলাম। যাই হোক আমার অত্র লেখার মাধ্যমে গণ-মানুষের কবি দিলওযার প্রেমিক , ভক্ত , অনুরাগী সকলের প্রতি আমার স্ববিনয় নিবেদন : এক ॥ বিগত ১৪ই অক্টোবর সিলেট সার্কিট হাউস মিলনায়তনে “চৌদ্ধ ভুবন” আয়োজিত কবি শুভেন্দু ইমামের সভাপতিত্বে  ‘কবি দিলওযার স্মরণে’ একটি শোক সভায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী জনাব নূরুল ইসলাম নাহিদ সাহেব বরাবরে জোরালো দাবী জানিয়েছি যে , সর্বজন স্বীকৃত গণ-মানুষের কবি দিলওয়ারের লিখা যেন ‘ পাঠ্য সূচীতে’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই দাবী যেন দলমত নির্বিশেষে সকল মহল থেকে আসে। সকলের প্রতি সেই উত্তমাশা ও নিবেদন রইলো।

দুই ॥ কবি দিলওয়ারের সাথে আমার আরো অনেকের মত দীর্ঘ দিনের চলা-ফেরা , তাই অনেকের মত আমিও জানি বিশেষত: বৃহত্তরো সিলেটের এমন কোন লোক নেই যারা ম্যাগাজিন , স্মরনিকায় দিলু ভাইর কাছে লিখা চেয়ে বিফল হয়েছে। যে কারনে আমার বিশ্বাস তাঁর অসংখ্য লেখা , বহু স্থানে অসংখ্য লোকের কাছে হয়তবা এখনো রয়ে গেছে। তাই সকলের প্রতি সনির্বন্ধ অনুরোধ কবি দিলওযারের বিদেহী প্রতি শ্রদ্ধা রেখে , তাঁর অমর সৃষ্টিকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে যার কাছে দিলওয়ারের যে লেখাটিই আছে , তা “ কবি দিলওয়ার পরিষদ” কিংবা দক্ষিন সুমায় কবি দিলওয়ারের বাড়ী ভার্থখলাস্থ-“খাঁন মঞ্জিলে” পাঠিয়ে দিতে পারেন। তাঁর ছেলে কামরান ইবনে দিলওয়ার বাড়ীতে আছে। যে বা যারা তাঁর লিখা পাঠাবেন আমরা তাদের নাম কৃতঞ্জতার সহিত স্মরন করবো।

[দীনুল ইসলাম বাবুল। সত্তর দশকের শক্তিমান কবি ও গবেষক। সাবেক চেযারম্যান , ৮নং , আশারকান্দি ইউনিয়ন ,জগন্নাথপুর , সুনামগঞ্জ। প্রকাশিত গ্রন্থ :: চিরদিন স্বদেশ/বাবুল বার্তা/ এইতো স্বদেশ। প্রকাশিতব্য ঃ বাউল স্বদেশ/ শ্রীচৈতন্যের স্বদেশ/ স্মৃতিময় স্বদেশ : জগন্নাথপুর / লোক সাহিত্যে স্বদেশ /  ]

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com