Latest News

গল্পের আদলে সত্য কাহিনী


এস.এইচ.রনি, বার্সেলোনা,স্পেন  ।
আপনজনের কাছ থেকে একটু আদর, সামান্য ভালবাসা সবসময় মানুষেরই কাম্য। জিনিসগুলোর জন্য আদিকাল থেকে আজবদি অনেক কাহিনী অনেক ইতিহাস রচনা হয়েছে। কেউ ভালভাসা নামক বস্তু থেকে বহুকিছু পেয়েছেন আবার অনেকেই প্রতারিত হয়েছেন। লেখক হলে হয়তো আমার লিখাটা কিছুটা পাঠক প্রিয়তা পেয়ে যেত, তারপরও আমার চেষ্টা। পরিবারের বড়কর্তা বরাবরই চাইবেন উনার সংসারের প্রতিটি সদস্যই যেন প্রতিষ্টিত হয়। আর বৃষ্টির বাবা তার মেয়ে কে আজ থেকে বৎসর আগে যখন তাঁর বয়স ছিলো এগার তখন তাঁর এক বোনের ছেলের সাথে স্পেনের অলিম্পিক নগরী খ্যাত বার্সেলোনা শহরে পাঠিয়ে দেন প্রতিষ্ঠিত বা সমাজের সঠিক স্থানে পৌছানোর প্রয়াসে। প্রকৃতির অনুকুলে দিন আর সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে বৃষ্টি বড় হতে থাকে তাঁর ফুফাত ভাইয়ের সংসারে অন্যান্য সদস্যদের  সাথে। বাস্তবতার কারনে পাঁচ বছর ফুফাতো ভাইয়ের সংসারে থাকলেও শেষাবদি আশ্রয় নিতে হয় সরকারি মহিলা আশ্রমে। শুরু হয় যুদ্ধ, বেঁচে থাকার যুদ্ধ। নিজে নিজে বেঁচে থাকার জন্য সব ধরনের চেষ্টা, সময়ের সাথে নতুন নতুন মানুষের পরিচয়। চলমান ধারায় একদিন ওর নিকটতম এক পরিবারের বাসায় থাকার সুযোগ হাতছাড়া না করে উনাদের প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেল ভাগ্যবতী বৃষ্টি। তখন বৃষ্টির নিজেকে কেবল জয়ী জয়ী ভাবতে ইচ্ছে করলো। স্বামী স্ত্রীর সংসারে ছিল তাদের বৃষ্টির বয়সি এক মেয়ে মিলা এবং বৃষ্টির থেকে পাঁচ বছরের বড় এক ছেলে নাম রবিন। কাজ কর্ম না থাকা বৃষ্টিকে এই দম্পতি তাদের মেয়ে মিলার মতই লালন পালন করতে থাকেন, বৃষ্টিকে আস্বস্ত করেনও বিষয়টি।একসাথে বসবাসের কারণে হউক বা অন্য কারণেই  রবিনকে ভাললাগতে থাকে বৃষ্টির আর ভাললাগা থেকে প্রকৃ্তরি নিয়মেই উভয় সম্মতিতে তা ভালবাসায় রুপান্তরিত হয়। তারা লোকচক্ষুর আড়ালে প্রায় সময়ই অত্যান্ত ঘনিষ্টভাবেই একে অপরের কাছে সপে দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না। বৃষ্টি এক সময় রবিনকে বিয়ে করার কথা বললে রবিন তার পরিবারকে জানাতে অপারগ হয়ায় তারই এক বন্ধুর সহায়তায়  বাবা মাকে জানাতে তারা সত্যতা যাছাই করেই বিষয়টি মেনে নিলেন। ঠিক এই সময়ই মিলার দেশের এক পাত্রের সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ায় রবিনদের পারিবারিক অনুরোধে বৃষ্টি তাদের সাথে দেশে যেতে রাজি হল এবং বাংলাদেশেই তাদেরকেও ধুমধাম করে বিয়ে দেয়ার আশ্বাস প্রদান করেন তার হবু শশুর শাশুড়ী। প্রিয়জনকে আরো কাছে পাবার আশায় ব্যাকুল হয়ে উঠে বৃষ্টির উড়ন্ত মন। এদিকে বৃষ্টির চোখের অগুছরেই রবিন দেশে ঠিকই আরেক জনের সাথে প্রেমের সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছিল এবং এই মেয়ের সাথেই রবিনের বাবা মা বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে রাখেন অনেক গুপনিয়তায়। দেশে যাওয়ার পর মিলার বিয়ের জন্যই হোক বা স্বার্থের কারণেই হোক বৃষ্টিকে কিন্তু ওর আসল বাবা মায়ের বাড়িতে যেতে দেয়নি রবিনের পরিবার।এতক্ষন কেবলই গল্পের সূচনা বা ভুমিকা যাই বলেন না কেন এটাই ছিল। কাহিনীটা কিন্তু ক্ষানিকটা অন্য দিকে মোড় নিল। রবিনদের পরিবার যুক্তি করেই আটারো লক্ষ টাকার বিনিময়ে  তাদেরই এক আত্মীয়ের সাথে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজে রাজি করালেন বৃষ্টিকে। আর সবকিছুতে রাজি হল ভালবাসার কাঙ্গাল বৃষ্টি তার ভালবাসার মানুষকে পাবার জন্য। কাগজে কলমে বিয়েও হল আগ্রীম দশ লক্ষ টাকার বিনিময়ে। বিয়ের পরে বৃষ্টি টাকাগুলো তার মা বাবাকে দিতে চাইলে রবিনের বাবা মা বুঝিয়ে মানা করলেন টাকা না দিতে কারণ তার বাবা হয়তো টাকা গুলো খরচ করে ফেলবেন এই বলে। এদিকে এটা ওটা করতে করতে আবার স্পেনে আসার সময় হয়ে যাচ্ছে তাই তারা বৃষ্টিকে তার মা বাবার কাছে পাঠিয়ে দিলেন কিছুদিনের জন্য। এবার কিন্তু ঘটলো আসল কাহিনী। রবিন বৃষ্টিকে আস্বস্ত করেই চলেছে তাকে সে বিয়ে করবে কিন্তু রবিনের পরিবার বৃষ্টি বাড়িতে থাকা কালিন এই কয়েকদিনের মধ্যেই তাকে না জানিয়েই রবিনকে বিয়ে দিয়ে দিলেন তার দেশে থাকা প্রেমিকার সাথে। এর মধ্যে অনেক ঘটনা রটনার পর বৃষ্টি যখন খবর পেল তখন তার বিলাপ করা ছাড়া কিছুই ছিল না। সময়ের পরিক্রমায় পাগলপ্রায় বৃষ্টি তার বাবাকে দোষারোপ করতে শুরু করে মনের দুঃখে।দীর্ঘ সময় দেশে অতিবাহিত হয়ায় এবং স্পেনে নিকটাত্মীয় না থাকায় আবার তাদের সাথেই ফেরত এসে উঠতে হল জমপুরির একই বাসায়। অস্বস্থিকর পরিস্থিতে কিছু দিন অতিবাহিত হওয়ার কিছুদিন পরই কাজ না থাকা বৃষ্টির হাতের রবিনের পিতা মাতা চার লক্ষ টাকার একটি লিষ্ট ধরিয়ে দিলেন যাতে দেশে যাওয়া আসা থেকে শুরু করে পরিধেয় কাপড়ের দামও উল্লেখ ছিল। কি আর করা আবারও কঠিন যুদ্ধ মোকাবেলায় সেই আশ্রমেই চলে যায় বৃষ্টি। সাথে ভাগ্য বিধাতা যুক্ত করে দেন ছোট একটি কাজেরও। কিন্তু কি আর করা মাস শেষে বেতনের সিংহভাগই চলে যেতে থাকে রবিনদের পারিবারিক ব্যাংকে।জীবন বাস্তবতায় অতিষ্ট বৃষ্টি এক সময় জানিয়ে দেয় দেশের কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ করা ব্যাক্তিকে কোন ভাবেই সে এখানে আনতে পারবে না এবং সাথে সাথে চাপ দেয় দশ লক্ষ টাকা ফেরত দেয়ার যা কন্ট্রাক্ট ম্যারেজের সময় অগ্রীম নেয়া হয়েছিল। টাকা খরচ করে ফেলার অজুহাতে তারা বৃষ্টির কাছ থেকে ছয় মাসের সময় নিয়ে ব্যার্থ হয়ে পুনরায় আরোও ছয় মাসের সময় চেয়ে নেয়। দিন যায় এভাবে একের পর এক ছয় মাস কেটে গেল কিন্তু দশ লক্ষ টাকা ঠিক একই যায়গায় বসে রইলো। টাকা দেবার কোন নামগন্ধই নেই বরং এখন বৃষ্টির দেশে থাকা বাবা ভাইয়ের উপর থানায় মামলা করারও হুমকি দিচ্ছে যার সাথে কন্ট্রাক্ট ম্যারেজ হয়েছিল তাঁর পরিবার। এখন জীবনের আসল স্বাদ থেকে বিচ্ছিন্ন বৃষ্টির মনে একটাই প্রশ্ন আসলেই কি এই পরিস্থিতি থেকে কখনও উতরাতে পারবে সে বা জীবনে কখনও কি আবার কাউকে ভালবাসতে পারবে মনের মত করে ? এই কাহিনীর উপসংহার আমি অতি সামান্যের পক্ষে টানা কোন দিনও হয়তো সম্ভব হবে না। আমারও মনে এখন বৃষ্টির মত অনেক প্রশ্নের মধ্যে একটি, দালালী আর ভালবাসা শব্দটি কি একই?  

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com