Latest News

নারায়ণগঞ্জে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় শান্তিপূর্ণ ভোট!

এসবিএন ডেস্ক: নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের (শহর ও বন্দর এলাকা নিয়ে গঠিত) উপনির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের উদ্বেগ-উত্কণ্ঠা থাকলেও কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ও সহিংস ঘটনা ছাড়াই ভোটগ্রহণ শেষ হয়। সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হলেন একেএম সেলিম ওসমান তবে নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। সকাল ৮টায় নির্বাচন শুরু হলেও বৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতি ছিল একেবারেই কম। সকাল ১১টার পর বৃষ্টি থামলে ভোটার উপস্থিতি কিছুটা বাড়তে থাকে। তবে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ভোটারদের দীর্ঘ লাইন চোখে পড়েনি। 
উপনির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মিহির সারোয়ার মোর্শেদ জানান, ভোটারদের কেন্দ্রে আনার দায়িত্ব প্রার্থীদের। আমাদের দায়িত্ব ছিল ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রাখা। উপনির্বাচন শান্তিপূর্ণ হলেও জালভোট দেয়া ও কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অনেকে কেন্দ্রে গেলেও ভোটার তালিকায় নাম খুঁজে না পেয়ে ভোট দিতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে বাধ্য হন। ভোটের ফল প্রকাশের পর কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন বিরোধী স্বতন্ত্র প্রার্থী। তবে এই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে প্রেস ব্রিফিং করেছেন নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)। ফল প্রকাশের আগে জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী একেএম সেলিম ওসমান বলেন, ‘নির্বাচনে জয়-পরাজয় রয়েছে। কেউ জয়ী হবে আর কারও পরাজয় হবে। পরাজয় মেনে নিয়ে নির্বাচনে এসেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়-পরাজয় যা-ই হোক মেনে নেব।’ গতকাল দুপুরে গণবিদ্যানিকেতন ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন করতে এসে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘সকালের বৈরী আবহাওয়ার কারণে ভোটাররা কেন্দ্রে আসতে পারেননি। এখন আসতে শুরু করেছেন। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে। আশা করছি, ভোটাররা ভোটের মাধ্যমে সুষ্ঠু একটা নির্বাচন উপহার দেবেন।’ অন্যদিকে, নাগরিক কমিটি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম আকরাম বলেন, ‘দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হচ্ছে। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে জয়-পরাজয় যা-ই হোক মেনে নেব।’ গতকাল দুপুর ১২টায় গণবিদ্যানিকেতনে ভোট দেওয়া শেষে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি বলেন, ‘দুপুরের পর কয়েকটি ভোটকেন্দ্র দখলের খবর আমরা পেয়েছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখন পর্যন্ত তত্পর রয়েছে। যদি ভোটকেন্দ্র দখল হয়, তাহলে এটা সরকারের জন্যই অমঙ্গল হবে।’ এদিকে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে কেউ অপরাধ করলে এবং তা প্রমাণিত হলে সে সংসদ সদস্য হলেও তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতা হলে সেটিও কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। ভোটগ্রহণ শেষে বিকেলে ইসির মিডিয়া সেন্টারে তিনি এ কথা বলেন। ভোটগ্রহণ চলাকালীন পুলিশ কর্মকর্তাকে সংসদ সদস্য শামীম ওসমানের হুমকি দেয়া প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিষয়টি তদন্ত করা হবে। এতে অপরাধ প্রমাণ হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিবেদন অনুযায়ী নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে মন্তব্য করেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘১৪১টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হয়েছে। এর মধ্যে মাত্র একটি কেন্দ্রে সহিংস ঘটনা ঘটায় আমরা ভোট বাতিল করে দিয়েছি।’ আওয়ামী লীগের আলোচিত সাংসদ (নারায়ণগঞ্জ-৪) শামীম ওসমানের ভাই জাতীয় পার্টির সাংসদ নাসিম ওসমান গত ২৯ এপ্রিল মারা গেলে আসনটি শূন্য হয়। এই আসনে তাদের আরেক ভাই সেলিম ওসমান জাতীয় পার্টির মনোনয়নে প্রার্থী হন। আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে এখানে কোনো প্রার্থী দেয়নি। এই আসনে আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক আহ্বায়ক এসএম আকরাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হন। 
ভোটার কম : উদ্বেগ-উত্কণ্ঠার নারায়ণগঞ্জ-৫ উপনির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল কম। সকাল ১০টার দিকে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ভোটার উপস্থিতি খুব কম। মাত্র ১০ থেকে ১২ জন ভোটার লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন। একই অবস্থা শহর ও বন্দরের অন্যান্য কেন্দ্রেও দেখা গেছে। তবে বৃষ্টির কারণে ভোটার উপস্থিতি কম বলে জানিয়েছে প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা। নারায়ণগঞ্জের বন্দর কলোনির সিকদার আব্দুল মালেক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম বলেন, তাঁর কেন্দ্রে মোট ভোটার দুই হাজার ২৫০ জন। বৃষ্টির কারণে লোকজন বের হচ্ছে না। বৃষ্টি কমলে আসবে। নারায়ণগঞ্জের খানপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নারায়ণ চন্দ্র মণ্ডলও বলেন প্রায় একই ধরণের কথা। তবে বেলা বাড়ার পরও ভোটার উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল। দুপুর তিনটায় বাবুরাইল বালক/বালিকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪০ নং কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে ২৪৫৬ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৩২৪ জন। দুপুর আড়াইটায় জয় গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩৯৮১ জন ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৮৪৫ জন। এই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা খন্দকার আবুল বাসার বলেন, এ কেন্দ্রে ভোট পড়েছে ২১ ভাগ। পাইকপাড়া আদর্শ বালিকা বিদ্যালয় ও কলেজে ৩৪০১ জনের মধ্যে দুপুর দুইটা পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন ১০৪৪ জন।
ভোট না দিয়েই ফিরে গেলেন : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপনির্বাচনে ভোটার ক্রমিক নম্বর খুজে না পেয়ে ভোট না দিয়েই কেন্দ্র থেকে ফিরে যেতে হয়েছে অনেককে। গতকাল দুপুরে জয় গোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় কয়েকজন নারী ভোটার ভোট না দিয়েই ফিরে যাচ্ছেন। এছাড়া যারা ভোট দিতে পেরেছেন তাদের নাম তালিকায় খুঁজে পেতেও সীমাহীন বেগ পেতে হয়েছে। নিতাইগঞ্জের কহিনুর জানান, দুই ঘণ্টারও বেশি সময় খুঁজে তার নাম পাওয়া গেছে। তবে তার খালা উম্মে কুলসুম বেগমের নাম ভোটার তালিকায় না পেয়ে তিনি ফিরে যাচ্ছেন। নিতাইগঞ্জের প্রদীপ দেবও একই অভিযোগ করেন। এছাড়া গতকাল সকালে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কেন্দ্রেও দেখা যায় একই অবস্থা। ২০ জনকে ভোট না দিয়েই ফিরে যেতে দেখা যায়। ভোটার ক্রমিক নম্বর না পাওয়ার কারণেই অনেক ভোটার ভোট না দিয়েই ফিরে যাচ্ছেন বলে স্বীকার করেন কেন্দ্রটির ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা। তবে এ ব্যাপারে তাদের করণীয় কিছু নেই বলে জানান তারা। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের এ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন তাদের ওয়েবসাইট ও মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে ভোটারদের কেন্দ্র ও তাদের ভোটার নম্বর জানানোর ব্যবস্থা করে। আগের বিভিন্ন নির্বাচনে প্রার্থীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তথ্য সরবরাহ করলেও এবার তারা তা করেননি বলে জানা গেছে। বিষয়টি নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অনুযোগও করছেন অনেক ভোটার। তবে কেন্দ্র ফেরত ভোটারদের সামনে ‘অসহায়’ রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ। নারায়ণগঞ্জ ক্লাব কেন্দ্রের সামনেই এ বিষয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, বাড়ি বাড়ি ভোটার স্লিপ পৌঁছানোর কথা প্রার্থীদের। ভোটকেন্দ্রের ৪০০ গজের বাইরে প্রার্থীদের অনুমোদিত এজেন্টদেরও ভোটার নম্বর দেওয়ার কথা। এখন তারা না করলে আমরা কী করতে পারি? 
জাল ভোট, আটক দুই : দুপুর ২টার পর থেকেই উপ নির্বাচনের বিভিন্ন কেন্দ্রে অনেকটাই প্রকাশ্যে চলে জাল ভোট প্রদান। অনেক কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসারের সামনেই লাঙ্গল প্রতীকে সিল মারতে থাকেন প্রভাবশালীদের সমর্থকরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কেন্দ্রের বাইরে কঠোরভাবে টহলে থাকলেও কেন্দ্রের ভিতরেই চলে লাঙ্গল প্রতীকের কর্মীদের ‘নীরব ভোট বিপ্লব’। বন্দরে জাল ভোট দেয়ার সময়ে দুইজনকে আটক করা হয়। দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরে অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ বার একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, আনারস মার্কার প্রার্থীর পোলিং এজেন্ট না থাকলেও রয়েছে অন্য প্রার্থীর এজেন্টরা। ভোট কাস্ট হয়েছে ১৬০টি। বুথের দায়িত্বে থাকা সহকারী প্রিসাইডিং অফিসারের সামনে স্বাক্ষরসহ ব্যালট পেপারের বই। যার ৪০ পৃষ্ঠাই রয়েছে সিল মারার জন্য তৈরি। তার সামনেই রয়েছে আরো একটি একশ পৃষ্ঠার বই। নিয়মবহির্ভূত এ সকল বিষয়ে জানতে চাইলে সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার আনসার আলী বলেন, ভোটারদের সুবিধার জন্য স্বাক্ষর দিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে ভোট গ্রহণে বিলম্ব না হয়। অতিরিক্ত ব্যালট বই আনা হয়েছে একই কারণে। তবে আনারসের প্রার্থীর এজেন্ট না থাকার কথা স্বীকার করে বলেন, আনারসের এজেন্ট ছিল, এখন দেখছি না। এরকম একাধিক কেন্দ্রে জালভোট ও ব্যালটে সিল মারতে দেখা গেছে প্রভাবশালী সমর্থকদের। আমলা পাড়ার আইডিয়াল স্কুল কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার খোরশেদ আলমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে দেখা গেলো রুম বাইরে থেকে তালা, কিন্তু তিনি ভেতরে বসে আছেন। সাংবাদিকদের দেখেই দ্রুত তার কক্ষ খুলে দেয় আনসার সদস্যরা। তাকে বাহিরে রেখে কেন তালা লাগানো হয়েছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি তিনি। জালভোটের বিষয়েও ছিল না কোনো সদুত্তর। চাষাঢ়ায় নারায়ণগঞ্জ সরকারী মহিলা কলেজের পুরুষ কেন্দ্রে দেখা গেল জালভোটের মহোত্সব। একটি দলের সমর্থকরা প্রবেশ করছে আর বের হচ্ছে। এই কেন্দ্রের এক নম্বর বুথের ভোটার (নং ১৯১ ) বঙ্গবন্ধু রোডের বাসিন্দা গার্মেন্ট কর্মকর্তা ইমতিয়াজ আলম এসেছিলেন ভোট দিতে। বিকাল পৌনে ৪টার দিকে জানতে পারেন তার ভোটটি দেয়া হয়ে গেছে। এদিকে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগে সৈয়দপুর বঙ্গবন্ধু উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ ১০ মিনিটের জন্য বন্ধ রাখা হয়। প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মুহিবুল হোসেন জানান, ওই কেন্দ্রে লাঙ্গল প্রতীকের একাধিক এজেন্ট ছিলেন। লাঙ্গল প্রতীকের এজেন্টদের মধ্য থেকে জাল ভোট দেয়ার অভিযোগ উঠলে সকাল ১১টার পর ১০ মিনিট ভোট গ্রহণ বন্ধ রাখা হয়। পরে আবারো ভোট গ্রহণ শুরু হয়। দুপুর ২টায় বন্দরের কেওঢালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি কেন্দ্র থেকে আমিনুল ইসলাম ও স্বপন নামের ওই দুইজনকে আটক করা হয় জানিয়েছেন প্রিসাইডিং অফিসার নজরুল ইসলাম। তিনি জানান, জাল ভোট দেয়ার সময়ে দুইজনকে আটক করা হয়। তবে স্থানীয় সূত্র জানান, আটককৃত দুইজন লাঙ্গলে সিল মারছিল। তখনই তাদের আটক করা হয়। 
বের করে দেয়া হয় পোলিং এজেন্ট : নির্বাচনে চলাকালীন কেন্দ্র থেকে পোলিং এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এস এম আকরাম। আকরামের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট মাহবুবুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট, ১৩ নম্বর নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (পুরুষ), ১৩ নম্বর নলুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (মহিলা), মাধবপাশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দাসেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে তাদের এজেন্টদের বের করে দেয়া হয়েছে। সকালে কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট কেন্দ্রে গিয়ে আকরামের এজেন্টদের দেখা যায়নি। তবে এ বিষয়টি মিথ্যা দাবি করেছেন কুমুদিনী ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্ট কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা রুহুল আমিন। তিনি দুপুরে বলেন, পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়ার তথ্য সত্য নয়। এস এম আকরামের পোলিং এজেন্টরা দেরিতে এসেছেন। এখন তারা কেন্দ্রে আছেন। অভিযোগ প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারোয়ার মোর্শেদ দাবি করেন, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু অভিযোগ পেয়ে তাত্ক্ষণিকভাবে খোঁজ নেয়া হয়েছে। অনেকাংশে অভিযোগের সত্যতা মেলেনি। এখন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে ভোট চলছে। আরও একাধিক কেন্দ্রে জালভোটসহ নানারকম অনিয়মের অভিযোগ সমর্থক ও ভোটারদের কাছ থেকে পাওয়া গেছে। 
এএসপিকে ‘দেখে নেয়ার হুমকি’ : নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের উপ নির্বাচনে বন্দরের একটি কেন্দ্র দখলের চেষ্টায় বাধা দেয়ায় জেলা পুলিশের একজন সহকারী পুলিশ সুপারকে ‘দেখে নেয়ার হুমকি’ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে সেলিম ওসমানের ছোট ভাই ও নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের এমপি শামীম ওসমানের বিরুদ্ধে। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) বশিরউদ্দিন জানান, উপ নির্বাচনের ভোট চলাকালে দুপুর ১টার দিকে বন্দরের কেওঢালা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার ও দখলের চেষ্টা করে মদনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম। তখন সালাম বিষয়টি শামীমকে জানান। কিছুক্ষণ পরই তাকে (বশির) শামীম ওসমান বেশ কয়েকবার ফোন করেন। বশিরের কক্তব্য অনুযায়ি, ‘শামীম ওসমান আমাকে বলেছেন, সালাম যা খুশি তাই করবে তাকে কোন ধরনের বাধা দেয়া যাবে না। তোমার বিষয়টা আমি দেখবো।’ উত্তরে বশির বলেছেন বলে জানান, ‘আমি এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের আওতায় আছি। ইসি যদি আমাকে বলে তাহলে কিছু করা সম্ভব। এর বাইরে আমার পক্ষে কোন ধরনের অনৈতিক কাজ তথা কেন্দ্র দখলের চেষ্টায় সহযোগিতা করতে পারবো না।’ পরে শামীম ওসমান বশিরকে দেখে নেয়ার হুমকি দেন বলে জানান ওই পুলিশ কর্মকর্তা। তার ভাষ্যমতে, ‘তুমি কিভাবে চাকরি করো তা আমি দেখে নিব।’ এ বিষয়ে দুপুর আড়াইটায় শামীম ওসমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এখন এ ধরনের অভিযোগ শোনার সময় নাই’।
নির্বাচন বয়কটের নামে লাঙ্গলের পক্ষেই ছিল বিএনপি : আগে থেকেই উপ-নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দিয়েছিল বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৯ দলীয় জোট। দলীয়ভাবে এ নির্বাচন বয়কট করা হলেও ১৯ দলের অনেক নেতাকর্মীরাই নিজ পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণাসহ ভোট প্রার্থনা করেছেন। বন্দর কদমরসুল কলেজে সেলিম ওসমানের সভায় উপস্থিত ছিলেন বন্দর থানা বিএনপির উপজেলা চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মুকুল। নির্বাচনের দিন মুকুল সমর্থিত থানা বিএনপির বিদ্রোহী কমিটির সহ-সভাপতি আব্দুল হক, মুছাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক খোকন, সহ-সভাপতি আলম মেম্বার ভোট কেন্দ্রে গিয়ে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চেয়েছেন। এদিকে নগরীর বার একাডেমি বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছিলেন জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব। রাজীব দাবি করেছেন তিনি নির্বাচন দেখতে গিয়েছেন মাত্র। অন্যদিকে নির্বাচনের দিন লাঙ্গল প্রতীকে পুরোদমে কাজ করেছেন নগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও ১৮নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হোসেন দেওয়ান। যদিও নির্বাচনের তিনদিন পূর্বে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট চাওয়ার দায়ে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। 
র‌্যাব-পুলিশের ভাষ্য : উপনির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। বৃহস্পতিবার দুপুরে বন্দরের দাসেরগাঁও এলাকাতে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান র্যাবের মিডিয়া উইংয়ের উইং কমান্ডার হাবিবুর রহমান। বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় র্যাবের এক হাজারেও বেশি সদস্য ৯০টি পেট্রোল পার্টি কাজ করছে। পুরো নির্বাচনী এলাকা আমাদের নজরদারিতে রয়েছে।একাধিক কেন্দ্রে আমি ঘুরে দেখেছি। প্রার্থীদের পক্ষ থেকে যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তার কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হচ্ছে। এদিকে ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ শান্তিপূর্ণ রয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ প্রশাসনও। নারায়ণগঞ্জের অনেক কেন্দ্র পরিদর্শন করে পুলিশের ডিআইজি (ঢাকা রেঞ্জ) নুরুজ্জামান বলেন, আবহওয়া খারাপ থাকার কারণে সকালে ভোটারদের উপস্থিতি কম থাকলেও পরে বেড়েছে। কেন্দ্র দখল ও পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়ার কথা সত্য নয়। নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার মহিদ উদ্দিন বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কঠোর ভূমিকার কারণে ভোটারদের মনে স্বস্তি ছিল। নির্বিঘ্নে ভোট দিতে আসতে ও ফিরে যেতে পারছে। আমি ভোটারদের সাথে কথা বলেছি তারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারছে। 
রিটার্নিং অফিসারের ভাষ্য : উপ-নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মিহির সারোয়ার মোর্শেদ জানান, নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবেই শেষ হয়েছে। পোলিং এজেন্ট বের করে দেয়ার অভিযোগ পেয়ে তাত্ক্ষণিক ব্যবস্থা নিয়েছি। একটি কেন্দ্রে আনারসের পোলিং এজেন্ট মোবাইল নিয়ে আসার কারণে তাকে মোবাইল রেখে আসতে বলা হয়েছিল। পরে মোবাইল রেখে সে আবার কেন্দ্রে প্রবেশ করে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) আনিসুর রহমান বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবে ভোট গ্রহণ চলছে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com