Latest News

পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে রামাদ্বান মাসের আলোচনা

এসবিএন ডেস্ক “যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের সাথে রমজানের সওম আদায় করলো সে তার অতীতের গুনাহ মাফ করিয়ে নিলো, যে ব্যক্তি ঈমান ও আত্মবিশ্লেষণের সাথে রমজান দীর্ঘ সালাত আদায় করলো সে অতীতের গুনাহ মাফ করিয়ে নিলো।



”রামাদ্বানের মাসের পরিচয়ঃ- ‘সাওম’ আরবী শব্দ। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত রোযা মূলত ফরাসী শব্দ। সাওম অর্থ বিরত থাকা, দূরে থাকা, কঠোর সাধনা। ইসলামী পরিভাষায় সোবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়তের সাথে পানাহার ও সকল প্রকার যৌন-সম্ভুগ থেকে বিরত থাকাকে সাওম বলা হয়। প্রিয় নাবী (সাঃ) এর হিজরতের আঠারো মাস পর ‘কিবলাহ’ পরিবর্তনের পরে শা’বান মাসে রামাদ্বানের রোযা ফরজ হবার নির্দেশ সম্ভলিত আয়াত নাজিল হয়। প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক, সুস্থ, মুকিম ও সুস্থ মস্তিস্ক সম্পন্ন মুসলিম নর-নারীর উপর রামাদ্বানের রোযা ফরজ।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ ‘হে ঈমানদারগন তোমাদের জন্য রোযা ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পুর্ববর্তীদের উপর। আশা করা যায় তোমাদের মধ্যে তাকওয়ার গুন ও বৈশিষ্ট জাগ্রত হবে’ (সুরা বাক্বারাঃ ১৮৩) পবিত্র কোরআনের অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলছেন, ‘রামাদ্বান মাসই হল সেই মাস, যাতে আল-কোরআন নাযিল করা হয়েছে, যা মানুষের জন্য জীবন বিধান এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্যে সুস্পস্ট পথ নির্দেশক।

আর সত্য ও মিথ্যার পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাসটি পাবে সে যেন এ মাসের রোযা রাখে। আর যে ব্যক্তি অসুস্থ বা মুসাফীর অবস্থায় থাকবে সে অন্য সময় এ সংখ্যা পুরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, তোমাদের জন্য কঠিন করতে চান না। যাতে তোমরা এ সংখ্যা পুরন করতে পারো এবং হেদায়াত দানের জন্যে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণনা করো। যাতে তোমরা কৃ্তজ্ঞতা স্বীকার করতে পার’।

(সুরা বাক্বারাঃ ১৮৫)
রামাদ্বান মাসের ফযীলতঃ এক ব্যক্তি মুসা (আঃ) কে প্রশ্ন করেছিল যে, আমরা ১০০০-১৫০০ বছর জীবন পেয়েও তেমন কিছু ইবাদাত করতে পারিনাই কিন্তু উম্মাতে মুহাম্মাদিদের জীবন মাত্র ৬০-৭০ বছর থাকবে এই বয়সে তো আমরা বালিগই হইনা তারা এই ৬০-৭০ বছর বয়সে কী ইবাদাত করবে? তিনি বলেছিলেন যে, তাদের জন্য এমন একটি রাত্রি থাকবে যা সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম। আল্লাহ এই রাত্রি সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে বলেছেন, ‘আমি এ কোরআন নাযিল করেছি মহিমান্বিত রজনীতে, মহিমান্বিত রজনী সম্পর্কে তুমি কি জান? মহিমান্বিত রজনী সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম’ (সুরা ক্বদরঃ ১-৩) আর পূর্বের আলোচনা থেকে এ কথা সুস্পস্ট যে পবিত্র কোরআন নাযিল করা হয়েছে রামাদান মাসে আর এই রাত হচ্ছে ‘কদরের রাত্রি’ এই রাত্রির ইবাদাত হাজার-হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এই রাত্রি হচ্ছে রামাদানের শেষ দশ দিনের যে কোন বেজুড় রাত্রি। হাদীসে এসেছে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নীত নাবী কারীম (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমাদের নিকট রামাদান মাস উপস্থিত, এটি অত্যান্ত বরকতময় মাস। আল্লাহ তা’লা এ মাসে তোমাদের প্রতি রোযা ফরজ করেছেন।

এ মাসে আকাশের দরজা সমূহ উন্মুক্ত হয়ে যায়, জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়। এবং এ মাসে বড় বড় ও সেরা শয়তান গুলুকে আটক করে রাখা হয়। আল্লাহর জন্যে এ মাসে একটি রাত আছে যা হাজার মাসের চেয়েও অনেক উত্তম। যে লোক এই রাত্রির মহা কল্যান লাভ হতে বঞ্চিত থাকল, সে সত্যিই বঞ্চিত ব্যক্তি’। (নাসায়ী, মুসনাদে আহমাদ ও বায়হাকি)। অন্য হাদীসে এসেছে, আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, রোযা ও কোরআন রোযাদার বান্দার জন্যে শাফায়াত করবে, রোযা বলবে, হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে দিনে খাবার ও অন্যান্য কামনা-বাসনা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি, আপনি আমার সুপারিশ গ্রহন করুন।

কোরআন বলবে, হে আল্লাহ! আমি এ ব্যক্তিকে রাতের নিদ্রা থেকে ফিরিয়ে রেখেছি, আপনি আমার সুপারিশ গ্রহন করুন। আল্লাহ তাদের সুপারিশ গ্রহন করবেন’। (বায়হাকি শুয়াইবুল ঈমান)। সুতরাং আসুন আমরা সারা রামাদান আল্লাহর ইবাদাতের মাধ্যমেই কাটাই যাতে এই মহিমান্বিত রাত্রি আমরা ইবাদাতের মধ্যেই কাটাতে পারি।
সু প্রিয় পাঠক, রামাদান মাসে শুধু পানাহার থেকে বিরত হলেই রোযার ফরজ আদায় হবেনা বরং সকল অন্যায় ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে যেমন, নাবী কারীম (সাঃ) বলেছেনঃ ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও খারাপ কাজ পরিত্যাগ করবেনা তার শুধু খানা-পিনা পরিত্যাগ করা আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই’।(মুসলিম)। সুতরাং আসুন আমরা এ মাসে শুধু খাওয়া থেকে বিরত না থেকে অন্যান্য পাপাচার কাজ থেকেও বিরত থাকি এবং এই মাস থেকে শিক্ষা নিয়ে সারা বছর পাপাচার থেকে বিরত থাকি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন-আমীন।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com