Latest News

ঈদে ঘরে না ফেরা মানুষেরা



এসবিএন ডেস্ক : চারিদিকে ঈদের আনন্দ, কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদুল ফিতর তবুও বিষণ্ণ মনে পল্টন মোড়ের ট্রফিকানা টাওয়ারের নিচে বসে আছেন রইজল ইসলাম বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি প্রায় এক বছর ধরে তিনি এখানে চাকরি করছেন ঈদে ঘরে ফেরার জন্য রাজধানীর অস্থায়ী মানুষেরা তোড়জোর শুরু করলেও ঈদের ছিটেফোঁটাও যেন ছুঁতে পারেনি রইজলকে মনটা পড়ে আছে ছোট্ট গ্রামে স্ত্রী-সন্তানদের কাছে কিন্তু তার যাওয়া হবে না কারণ, এই বিশাল ভবনটির ভেতরে তার জন্য কোনো স্থান না থাকলেও এর নিরাপত্তার দায়িত্ব তারই! রইজলের গ্রামের বাড়ি ভোলার ইলিশগুপ্তের মুন্সিচরে গ্রামে আছে দুই ছেলে দুই মেয়ে ছেলেপুলেদের পেটপুরে দুবেলা খাওয়াতে পারেন না বলে রাজধানীতে এসেছেনে এই নিষ্ঠুর শহর তাকে সিকিউরিটি গার্ডের একটা চাকরি উপহার দিয়েছে চাকরি পাওয়ার পর শেষ কবে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করেছেন তা মনে নেই তার রইজল বলেন, ‘আমরা তো মানুষ না, আমাদের ঈদ কীসের? ঈদ হলো বড় সাহেবদের জন্য আমাদের কোনো সাধ আল্লাদ নাই অন্যের সুখে আমাদের সুখ ছেলে মেয়েরা বার বার ঈদ করতে বাড়ি আসতে বলছে, তাদের সান্ত্বনা দেয়া ছাড়া কিছু বলার নাই রইজল ছাড়াও ট্রফিকানা টাওয়ারে আরো পাঁচ জন নিরাপত্তাকর্মী আছেন তাদেরও বাড়ি ফেরা হবে না ট্রফিকানা টাওয়ারে সিকিউরিটি ইনচার্জ রকিব বাংলামেইলকে বলেন, ‘ঈদের সময় চারিদিকে চুরি ডাকাতির মাত্রা বৃদ্ধি পায় সময়টায় সাবধান থাকতে হয় এছাড়া এত বড় একটি বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তা তো আমাদের হাতে আর আমরা যদি ঈদ করতে গ্রামে যাই তাহলে এই বিল্ডিংয়ের নিরাপত্তা দেবে কারা?’ তিনি বলেন, ‘লাখ লাখ মানুষ ঈদে গ্রামে যায় প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করে আমাদেরও তো মন চায় প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে কিন্তু কী করবো বলেন? বাস্তবতা ভিন্ন ইচ্ছে থাকলেও সেটা করতে পারি না শুধু নিরাপত্তা কর্মী নয়, অনেকেই আছে যারা প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে পারেন না এদের মধ্যে বাসা বাড়ির দারোয়ান, কেয়ারটেকার, পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ, সংবাদকর্মী, ডাক্তার, নার্স গৃহকর্মী অন্যতম এছাড়া এক শ্রেণীর লোক অর্থের অভাবে গ্রামের বাড়িতে যেতে পারেন না অনেকে আছেন টাকা জোগার করতে পারেননি বলে লজ্জায় বাড়ি যান না পাশের মার্কেটগুলোতে মানুষ যখন কেনাকাটায় ব্যস্ত, ঠিক তখন কাঁটাবন সিগনালে ব্যস্ত সময় পার করছেন ট্রাফিক পুলিশ বাবলু কথা হয় তার সঙ্গে ঈদে বাড়ি যাচ্ছেন কবে? এমন প্রশ্নে হাসিমাখা মুখটি মলিন হয়ে যায় তার বলেন, ‘বাড়ি যাওয়া হবে না ছুটি নেই ঢাকাতে ঈদ করতে হবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাবলু বলেন, ‘৩৫ ধরে চাকরি করছি বেশিরভাগ ঈদ কেটেছে রাস্তার উপর তারপরও তো কিছু করার নেই, অন্যের অধীনে চাকরি করলে নিজের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকে না বাবলুর গ্রামের বাড়ি গাইবান্ধার সাঘাটাতে গ্রামে স্ত্রীসহ তিন ছেলে মেয়ে আছে তারএকই কথা বললেন পুলিশ কনস্টেবল নজরুল ইসলাম ঈদের সময় তারা অন্যদের নিরাপত্তা দেয়ার মধ্যেই ঈদের আনন্দটা হাতড়ে বেড়ানধানমণ্ডি সার্কুলার রোডের ৪১/ এর বাসার দারোয়ান মিজানেরও দুঃখটা আরো বেশি ক্ষোভও আছে তার ঈদে বাড়ি যাবেন কি না জানতে চাইলে বলেন, ‘বাসার মালিকরা গ্রামের ঈদ করতে যাবে এছাড়া বাসার অন্য ভাড়াটিয়ারাও ঈদ করতে গ্রামে যাবে তাই আমার যাওয়ার কোনো সুযোগ নাই মালিকের কাছে ছুটির জন্য গেছিলাম তিনি বলেছেন, ঈদের পরে নেয়ার জন্য কী আর করার উনারা যা বলবেন, আমাদের তো তা- করতে হবে গরীবের কথার কোনো দাম মালিকদের কাছে নেই পাশের গলির গৃহকর্মী রবিনের বাড়ি নোয়াখালী বাবা-মা ছোট ভাই-বোনদের জন্য কাপড়চোপড় উপহার কিনে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে গ্রামে পাঠিয়েছেন কিন্তু তাদের সাথে থাকতে পারছেন না বলে মনে আনন্দ নেই ঈদ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই যেন কষ্ট বাড়ছে রবিন বলেন, ‘ঈদের সময় বাড়িতে থাকলে কত মজা করতাম আমরা পুরো রোজার মাস ঈদের আনন্দ করতাম রোজার সংখ্যা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের আনন্দও বাড়তো এখন ঢাকা শহরে থাকি কখন সময় যায় বলতে পারি না ভোরে সবার আগে উঠি, ঘুমাতে যাই সবার শেষে


যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com