Latest News

গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃৎ কাঙ্গাল হরিনাথ

এডিটর আমি, তোমাকে ভয় করিনা বটে, তবে তোমার শক্তি সাহসি লেখনির জন্য অনেক কুকর্ম ত্যাগে বাধ্য হয়েছে- পত্রের মাধ্যমে এভাবেই ব্রিটিশ ম্যাজিস্ট্রেট হামফ্রে অষ্টাদশ শতকের শেষদিকে যেই সাংবাদিকের কাছে মাথা নত করেছিলেন তার নাম কাঙ্গাল হরিণাথ মজুমদার। গ্রামীণ সাংবাদিকতার পথিকৃত কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদারের ১৮১ তম জন্মবার্ষিকী আজ ।

১৮৩৩ সালের আজকের এইদিনে সংস্কৃতির রাজধানী কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার কুন্ডুপাড়ার এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া উনিশ শতকের স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব হরিনাথ মজুমদার ছিলেন একাধারে সাহিত্য সাধক, সাময়িকপত্র পরিচালক, সমাজ সংস্কারক এবং ধর্মাবতার। এবার দিনটি পালনের জন্যও তেমন কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

এদিকে, অযত্ন, অবহেলায় সাংবাদিকতার এই প্রবাদ পুরুষের স্মৃতিচিহ্ন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। কুষ্টিয়ার কুমারখালীর যে ঐতিহাসিক প্রেস থেকে এক সময় ইংরেজ বেনিয়া, জমিদার-মহাজন ও নীলকরদের বুকে কাঁপন ধরানো এই উপ-মহাদেশের প্রথম সংবাদপত্র গ্রামবার্তা প্রকাশিত হতো সেই প্রেসটিও এখন ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে। কাঙাল হরিণাথ মজুমদারের মৃত্যুর পর এক শতাব্দী পেরিয়ে গেলেও তার স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার দার্ঘদিনের দাবী পুরণ হয়নি আজও।

১৮৭৩ সালের প্রথমদিকে তিনি হাতে চালিত নিজস্ব এমএন প্রেস থেকেই এই উপ-মহাদেশের প্রথম সংবাদপত্র ‘গ্রামবার্তা’ প্রকাশ করেন। তারও আগে হাতে লেখায় প্রকাশিত এই ‘গ্রামবার্তায়’ মীর মোশাররফের বিষাদ সিন্ধুসহ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, ভারতের জলধর সেনের লেখাও ছাপা হয়। তৎকালীন সময়ে ইংরেজ বেনিয়া, জমিদার-মহাজন ও নীলকরদের বুকেও কাপন ধরিয়েছিল পত্রিকাটি। ইংরেজদের অব্যাহত হুমকির মুখেও ত্রৈ-মাসিক, মাসিক-পাক্ষিক ও সাপ্তাহিক হিসেবে মোট ২২ বছর চলেছিল পত্রিকাটি। এই সময়য়ে তার কাছে সকল অপশক্তিই মাথা নত করেছিল। ১৮৯৬ সালের ১৬ এপ্রিল মাত্র ৬৩ বছর বয়সে এই মহান ব্যক্তির জীবনাবসান ঘটে।

কুমারখালীর জরাজীর্ণ কাঙ্গাল কুঠিরটি আজও সেসব দিনের স্মৃতি হয়ে আছে। পাশে একটি জাদুঘর নির্মিত হলেও পুরনো জরাজীর্ণ ওই ঘরে ক্ষয়ে ক্ষয়ে নষ্ট হচ্ছে সেই হ্যান্ডলুম প্রেস। বসত ঘরের পাশেই রয়েছে তার সমাধি। এখনও রয়েছে কাঙ্গালের স্বহস্তে লেখা পান্ডুলিপি, ঐতিহাসিক গ্রামবার্তার বেশকিছু সংখ্যা ও ব্যবহৃত আসবাবপত্র। এসব সংরক্ষনে এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী পুরণ হয়নি আজও। এখনই ব্যবস্থা নেয়া না হলে একদিন গ্রামীণ সংবাদপত্রের মহামূল্য এই স্মৃতি হারিয়ে যাবে ইতিহাসের অতল গহবরে।

সাংবাদিক, লেখক ও গবেষক ড. আমানুর আমান বলেন, কাঙাল ছিলেন একজন স্বশিক্ষিত মানুষ কিন্তু তিনি শিক্ষার জন্য আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তিনি অসহায় নির্যাতিত মানুষকে রক্ষায় অষ্টাদশ শতকে পত্রিকা প্রকাশ করেছিলেন। যেটি একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। লেখক ও কলামিষ্ট ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রফেসর ড. রাশিদ আশকারী বলেন, লোক সংস্কৃতির অন্যতম ধারক ও বাহক হিসেবে পরিচিত হরিনাথ মজুমদার। বাউল সঙ্গীতেরও অন্যতম পথিকৃৎ ছিলেন তিনি। তিনি ফকির চাঁদ বাউল নামেও পরিচিত ছিলেন।

কাঙ্গাল হরিণাথ মজুমদারের প্রো-পুত্র (চতুর্থতম উত্তরসুরী) অশোক মজুমদার বলেন, এখনও কাঙ্গালের অনেক স্মৃতি আমি খুব কষ্টে ধরে রেখেছি। কাঙ্গাল জীবদশায় কাঙ্গাল ছিলেন না। তার কাছে জমিদারও মাথা নত করেছিল। কিন্তু এখন তার বসত ভিটাও মানুষ দখল করে নিচ্ছে। এসব রক্ষার দাবী জানান তিনি।

কাঙ্গালের এসব স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার্থে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার কথা শোনালেন কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক সৈয়দ বেলাল হোসেন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধনের পর কাঙ্গাল মিউজিয়ামের নির্মান কাজ চলছে। এর কাজ শেষ হলেই সেখানে কাঙ্গালের এমএন প্রেসসহ সকল স্মৃতি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করে সকলের জন্য উন্মুক্ত রাখা হবে।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com