এসবিএন ডেস্ক ভারতের সঙ্গে নুতন সমুদ্রসীমা নির্ধারণে আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের রায়ে অসঙ্গতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। আর এতে বঙ্গোপসাগরে একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চলের ওপর নিরঙ্কুশ অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়নি বলেও দাবি করেছে দলটি। একই সঙ্গে রায়ে দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের অধিকার থেকেও বাংলাদেশ বঞ্চিত হয়েছে বলেও দাবি করেছে দলটি।
রায়ের ওপর প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে দলের ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক পানি সম্পদমন্ত্রী হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সালিশ আদালতের রায়ে আমি কিছু অসঙ্গতি দেখতে পাচ্ছি। সমুদ্রের এক্সক্লুসিভ ইকনোমিক জোনে বাংলাদেশের নিরঙ্কুশ প্রতিষ্ঠা পায়নি।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের দাবি ছিল- বঙ্গোপসাগর ও ভূমির মূলবিন্দু থেকে সমুদ্রের দিকে ১৮০ ডিগ্রির সোজা রেখা যাবে। ন্যায্যতার ভিত্তিতে সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ চেয়েছিল বাংলাদেশ।
অন্যদিকে ভারতের দাবি ছিল- সমুদ্রতট বিবেচনায় এ রেখা হবে ১৬২ ডিগ্রি থেকে অর্থাৎ সমদূরত্বের ভিত্তিতে। আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের রায়ে বাংলাদেশের প্রাপ্তি এসেছে ১৭৭ দশমিক ৩ ডিগ্রি। আমাদের প্রাপ্য দাবি ১৮০ ডিগ্রি পেলে আমরা ন্যায় বিচার (জাস্টিস) পেতাম।’
সাবেক এই পানি সম্পদমন্ত্রী আরো বলেন, ‘আমরা মনে করি, এই রায়ে বাংলাদেশ একছত্র (এক্সক্লুসিভ) অর্থনৈতিক অঞ্চলে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি পায়নি। অন্যদিকে রায়ে ভারতের সমুদ্রসীমানায় মহীসোপান ও একচ্ছত্র ইকনোমিক জোনে তাদের কর্তৃত্ব নির্ধারণ করেছে। এটা অসঙ্গতিপূর্ণ।’
দক্ষিণ তালপট্টি দ্বীপের বিষয়ে বাংলাদেশের দাবির কথা তুলে ধরে সাবেক এই পানি সম্পদমন্ত্রী বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমল থেকে এই দ্বীপটি বাংলাদেশের ভুখণ্ডের অংশ হিসেবে আমরা দাবি করে আসছি। অথচ রায়ে দ্বীপটি আমাদের সমুদ্র সীমানার মধ্যে পড়েনি।’
বঙ্গোপসাগরের বিরোধপূর্ণ সাড়ে ২৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা বাংলাদেশকে দিয়ে ভারতের সঙ্গে নতুন সমুদ্রসীমানা নির্ধারণ করে দিয়েছে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালত।
অন্যদিকে রায় পর্যবেক্ষণ করে মঙ্গলবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ‘এই রায় উভয় রাষ্ট্রের জন্য বিজয় নিশ্চিত করেছে। এ বিজয় বন্ধুত্বের বিজয়। এ বিজয় বাংলাদেশ ও ভারতের জনগণের বিজয়।’
বঙ্গোপসাগরের সীমা, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং মহীসোপানের তলদেশে সার্বভৌম অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের দাবির শুনানি শেষে নেদারল্যান্ডের হেগ-এ অবস্থতি স্থায়ী সালিশি আদালত বা পার্মানেন্ট কোর্ট অব আর্বিট্রেশন (পিসিএ) সোমবার রায়ের অনুলিপি হন্তান্তর করে।
ট্রাইব্যুনালের পাঁচ বিচারকের মধ্যে ভারতীয় বংশোদ্ভূত পেমারাজু শ্রীনিবাস রাও ভিন্নমত পোষণ করলেও রুডিগার ভোলফ্রাম, টমাস এ মেনশাহ এবং আইভান শিয়েরার জ্যঁ-পিয়ের’র মতামত অনুসারে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে বিরোধ মীমাংসা করেছে আদালত।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এই রায়ের ফলে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটারের বেশি টেরিটোরিয়াল সমুদ্র, ২০০ নটিক্যাল মাইল এলাকায় একচ্ছত্র অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং চট্টগ্রাম ঊপকূল থেকে ৩৫৪ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত মহীসোপান এলাকার প্রাণিজ ও অপ্রাণিজ সম্পদের ওপর সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে।
‘ন্যায্যতা নিশ্চিত করার জন্য ট্রাইব্যুনাল বিরোধপূর্ণ আনুমানিক ২৫ হাজার ৬০২ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকার মধ্যে ১৯ হাজার ৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র এলাকা বাংলাদেশকে দিয়েছে।’