![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgbg_pZnObvSnLYIQoEJsoAM_O-x6bJJGtiQ4J_6B6hoxnABtcqjcvkt3zGmWtP5u2buoGD3xgRg4irFlQFNGwyyaAkAuRWL4qirETgjHC-NrkYCKU-AnWM-nDzT64tSHvvB1wdDPIhGPo/s1600/57930_1-3.jpg)
এসবিএন ডেস্ক.মধ্যপ্রাচ্যে আজ
সম্ভবত ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। কিন্তু ইসরাইলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত গাজার
ফিলিস্তিনিদের মনে নেই কোনো আনন্দ-উল্লাস। ১৮ দিনের আগ্রাসনে গাজাকে মাটির সাথে
মিশিয়ে দিয়েছে ইসরাইল। গতকাল নিহতের সংখ্যা ১০৫০ ছাড়িয়েছে। ইসরাইল নির্বিচারে
হত্যা করেছে শিশু ও নারীদের। আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বেসামরিক স্থাপনায় অবিরাম
গোলা ছুড়ে গুঁড়িয়ে দিয়েছে অসংখ্য ভবন। স্বজন হারিয়ে শোকে পাথর দীর্ঘ দিন ধরে
অবরুদ্ধ এই জনপদের মানুষ। তাই ঈদের আনন্দের পরিবর্তে সীমাহীন শোকই এখন তাদের
সঙ্গী। এ দিকে গাজায় আরো ২৪ ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি গতকাল রোববার স্থানীয় সময় বেলা ২টা
থেকে শুরু হয়েছে। জাতিসঙ্ঘের অনুরোধে ইসরাইল অস্ত্র বিরতির মেয়াদ বৃদ্ধির এই
সিদ্ধান্ত নিলেও পরে হামাসের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার অজুহাত দেখিয়ে তারা পুনরায় হামলা
শুরু করে। এতে ৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। হামাস প্রথমে ২৪ ঘণ্টার অস্ত্র বিরতির
সিদ্ধান্ত না মানলেও পরে তারা মেনে চলার ঘোষণা দেয়। গাজায় হামাসের অন্যতম নেতা
সামি আবু জুহরি গতকাল এক বিবৃতিতে বলেন, গাজার মানুষের
বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে এবং ঈদুল ফিতর চলে আসায় আমরা অস্ত্র বিরতির মেয়াদ
বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছি। গাজার অন্যান্য প্রতিরোধ সংগঠনও এই সিদ্ধান্ত
মেনে চলবে বলে জানান তিনি। খবর আলজাজিরা, বিবিসি, রয়টার্স ও রেডিও
তেহরানের। শনিবার প্রথম ১২ ঘণ্টার অস্ত্র বিরতি শুরু
হওয়ার পর গাজার ফিলিস্তিনিরা ধ্বংসস্তূপ থেকে লাশ উদ্ধার ও দাফনে ব্যস্ত হয়ে পড়েন।
ইসরাইলি আগ্রাসনে কোনো কোনো পরিবারের একজন মানুষও বেঁচে নেই। লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি
গৃহহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। চার দিকে ধ্বংসস্তূপ। ধ্বংসস্তূপ থেকে ইট,
সুরকি
সরালেই বেরিয়ে আসছে ক্ষতবিক্ষত নারী, শিশু, কিশোর, যুবক ও বয়সী মানুষের
লাশ। বাতাসে পচন ধরা লাশের গন্ধে। সন্তানের লাশ হাতে পিতার বুকফাটা আহাজারিতে
আকাশ-বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে। তাকে সান্ত্বনা দেয়ার কেউ নেই। সবারই এক অবস্থা। এই
পরিস্থিতির মধ্যেই গাজার শোকার্ত
ফিলিস্তিনিদের সামনে উপস্থিত হয়েছে ঈদুল ফিতর। যুদ্ধবিরতি ভেঙে ইসরাইলি হামলা : জাতিসঙ্ঘের অনুরোধে গাজায় ২৪ ঘণ্টার
যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও কয়েক ঘণ্টা পর আবারো হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। তবে এ জন্য
হামাসকে দায়ী করে রকেট হামলার অজুহাত সামনে এনেছে তারা। রোববার বেলা ১টায় ইসরাইল
হামলা চালায় বলে বিবিসি খবর প্রচার করেছে। খবরে বলা হয় হামাস ইসরাইলি বাহিনীর ওপর
রকেট হামলা করায় তার জবাবে ইসরাইল এ হামলা পরিচালনা করছে। এর আগে শনিবার জাতিসঙ্ঘের অনুরোধে ফিলিস্তিনের গাজায় ২৪ ঘণ্টার সাময়িক
যুদ্ধ বিরতিতে সম্মতি জানিয়েছে ইসরাইল। জাতিসঙ্ঘের সিনিয়র অফিসিয়ালের বরাতে এ খবর
জানিয়েছে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম। এ সময়ে ফিলিস্তিন সৈন্যরা যদি শর্ত লঙ্ঘন করে
তাহলে ফের হামলা শুরু হবে বলে হুঁশিয়ারি জানিয়েছে ইসরাইল। গাজা সমস্যা নিয়ে শনিবার
মধ্যরাত পর্যন্ত ক্যাবিনেট বৈঠক শেষে এ খবর জানানো হয়। এ দিকে গাজায় পুরোপুরি
যুদ্ধ বন্ধ করতে চাচ্ছে বলে জানিয়েছে হামাস। তেলআবিব আগেই সতর্ক করে বলেছিল, হামাস অস্ত্রবিরতি
লঙ্ঘন করলে তাদের সেনাবাহিনী গাজায় ফের হামলা শুরু করবে। হামাসও জানিয়েছিল,
গাজা
থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার এবং বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের ঘরে ফিরতে দেয়া না
হলে তারা যুদ্ধবিরতি গ্রহণ করবে না। গত ১৯ দিনে গাজায়
ইসরাইলের প্রায় একতরফা বর্বর হামলায় এক হাজার ৪৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়। এ ছাড়া
হামাসের ছোড়া রকেট হামলায় ইসরাইলে ৪৬ জন নিহত হয়েছে, যার মধ্যে ৪২ জন
সৈন্য। তবে হামাস বলেছে, তাদের হামলায় ৯০ জন ইসরাইলি সৈন্য নিহত হয়েছে। হামাসকে ধ্বংস করা হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হবে : পেন্টাগন গাজার প্রতিরোধ আন্দোলন হামাসকে ধ্বংস করা হলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ
হবে বলে ইসরাইলকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরা গোয়েন্দা সংস্থা
পেন্টাগনের শীর্ষ কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাইকেল ফিন। শনিবার কলোরাডোর
অ্যাসপেন সিকিউরিটি ফোরামে তিনি এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। পেন্টাগন প্রধান বলেছেন, হামাসকে ধ্বংস করা হলে, এর জায়গায় যারা আসবে
তারা আরো ভয়ঙ্কর হবে। এ জন্য গাজায় হামলা বন্ধ করার জন্য ইসরাইলের প্রতি আহ্বান
জানান। তিনি বলেন, হামাস টানেল তৈরিতে পারদর্শী। এর মাধ্যমে তারা কৌশলে ইসরাইলের ওপর
হামলা চালাবে। কিন্তু এরপরও হামাসকে ধ্বংস করা কোনো সমাধান নয় বলে ইসরাইলকে
পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যদি হামাসকে ধ্বংস অথবা নিশ্চিহ্ন করা হয়,
তাহলে
এর সমাপ্তি ভয়াবহ হবে। আর এ অঞ্চলের সমস্যা হবে আরো ভয়াবহ। তখন এখানে আইএসআইএস-এর
মতো কারো উদ্ভব হবে। আইএসআইএস গত মাসে ইরাক ও সিরিয়ার বিরাট এলাকা দখল করে ‘ইসলামিক খেলাফত’
রাষ্ট্র
ঘোষণা করেছে। উল্লেখ্য, গাজা উপত্যকায়
গাদাগাদি করে ১৮ লাখ মানুষ বসবাস করে। সেখানে দরিদ্র ও বেকারের সংখ্যা প্রায় ৪০
শতাংশ। গাজাবাসী আশা করছে, এ যুদ্ধের মাধ্যমে তাদের ওপর থেকে মিসর ও
ইসরাইলের অবরোধের পরিসমাপ্তি হবে।
ইসরাইলকে বিপদে ফেলছেন নেতানিয়াহু : ব্রেজনস্কি
আমেরিকার সাবেক জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেবিগনিউ ব্রেজনস্কি গাজায়
ইসরাইলি হামলার জন্য প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে তিরস্কার করে বলেছেন, এ হামলার ফলে ইসরাইল
একঘরে হয়ে যাচ্ছে এবং তেলআবিবের দীর্ঘমেয়াদি ভবিষ্যৎ বিপদাপন্ন হচ্ছে। সম্প্রতি
সিএনএন টিভির ফরিদ জাকারিয়াকে দেয়া এক সাাৎকারে তিনি এই মন্তব্য করেছেন।
ব্রেজনস্কি বলেন, সাগর উপকূলে অবস্থিত গাজাকে বেসামরিকীকরণের যে ল্য নিয়ে নেতানিয়াহু
সেখানে হামলা শুরু করেছেন তা সফল হবে না। তিনি বলেছেন, ‘আমার মতে নেতানিয়াহু মারাত্মক ভুল করছেন। হামাস
যখন কার্যত ফিলিস্তিনি নেতৃত্বের মধ্যে শরিক হওয়ায় ইসরাইলের সাথে সমস্যার
শান্তিপূর্ণ সমাধানের বিষয়টিও মেনে নিয়েছিল পরোভাবে; তখন নেতানিয়াহু
হামাসকে অপবাদ দেয়ার জন্য তিন ইসরাইলি কিশোর হত্যার দায় কোনো প্রমাণ ছাড়াই হামাসের
ওপর চাপিয়ে দেন এবং এ বিষয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে ইসরাইলি জনমতকে ুব্ধ করে তোলার
চেষ্টা চালান যাতে গাজায় ইসরাইলি হামলাকে বৈধতা দেয়া যায়। এভাবে নেতানিয়াহু ইসরাইলকে একঘরে করছেন এবং দেশটির ভবিষ্যৎকেও
বিপদাপন্ন করছেন। আমাদের (মার্কিন সরকারের) উচিত ইসরাইলকে এটা স্পষ্টভাবে বলা যে
আমরা এ নীতি প্রত্যাখ্যান করছি। নেতানিয়াহুর এ নীতির ফলে আমরা ও বাদবাকি বিশ্ব
সমাজ জাতিসঙ্ঘের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জাতির আশা-আকাক্সাকে বৈধতা দেয়ার কিছু পদপে
নিতে বাধ্য হতে পারি।’