Latest News

বিদেশে সম্পদ গড়ার তথ্য নেবে সরকার

এসবিএন ডেস্ক  : বাংলাদেশি নাগরিকদের বৈধ ও অবৈধভাবে বিদেশে রাখা স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ, ব্যাংক হিসাব এবং সেখানে গচ্ছিত অর্থের তথ্য সংগ্রহ করবে সরকার। এ লক্ষে শীঘ্রই প্রচলিত ফরেন এক্সচেঞ্জ আইন পরিবর্তন করে নতুন আইন করা হবে। যারা দেশ থেকে বিভিন্ন হুন্ডি, ওভার ইনভয়েস এবং অন্যভাবে অর্থ বিদেশে পাচার করে সেখানে বাড়ি, ফ্ল্যাট ক্রয়, ব্যবসা-বাণিজ্য স্থাপন এবং ব্যাংকে নগদ জমা রেখেছেন, বিদেশি বিনিয়োগ দেখিয়ে নাগরিকত্ব গ্রহণ এবং সেকেন্ড হোম সুবিধা গ্রহণ করেছেন, তাদের অর্জিত সব সম্পদের তথ্য সংগ্রহ করে ব্যবস্থা নিতে ফরেন এক্সচেঞ্জ আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে। সংশোধিত আইন অনুযায়ী অর্থ পাচার করে যারা বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন করেছেন তাদের অর্থ ফিরিয়ে আনা হবে। এর মধ্যে আইনটির খসড়া তৈরি হয়েছে। মন্ত্রিসভায় পাঠানোর জন্য অনুমোদন নিতে এটির সারসংক্ষেপ এখন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে পাঠানো হবে। অর্থমন্ত্রীর জন্য তৈরি করা খসড়া আইনের সারসংক্ষেপে 'বাংলাদেশি নাগরিক কর্তৃক বিধিবহিভর্ূতভাবে বিদেশে সম্পত্তি অর্জনের তথ্য চাওয়ার প্রাধিকার' শীর্ষক কলামে বলা হয়েছে- বাংলাদেশি নাগরিকদের বিদেশে সম্পত্তি অর্জনের তথ্য চাওয়ার প্রাধিকারের বিদ্যমান ধারাটি অপর্যাপ্ত বলে প্রতীয়মান হয়েছে। কারণ এ ক্ষমতাবলে সরকার শুধু বৈদেশিক মুদ্রা বা বৈদেশিক সিকিউরিটিজের তথ্য চাইতে পারে। বিদেশে স্থাবর সম্পত্তি বা অন্য কোনো সম্পদের তথ্য চাইতে পারে না। সে জন্য আইনটি পরিবর্তন করে বিদেশে স্থাবর-অস্থাবর সম্পদসহ অন্যান্য সম্পদের তথ্য চাওয়ার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যৌক্তিক হবে। বিদেশে অর্জিত স্থাবর ও অন্যান্য সম্পদ বলতে আইনে কী বোঝানো হবে- এ সম্পর্কে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, স্থাবর সম্পদ বলতে বাড়ি, ফ্ল্যাট এবং অন্য সম্পদ বলতে বিদেশে ব্যবসা স্থাপন, ব্যাংকে বিনিয়োগ করা বিষয়গুলো বোঝাবে। অভিযোগ রয়েছে_ বিসমিল্লাহ গ্রুপের মতো অনেক কোম্পানি ঋণ নিয়ে দুবাইতে পাচার করে সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তুলেছে। এর বাইরে সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক ও মালয়েশিয়ায়ও অনেকে একই কায়দায় অর্থ পাঠিয়েছে। এমনও দেখা গেছে ব্যাংক থেকে প্রকল্প করার জন্য ঋণ নিয়ে ওই অর্থ বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। রাজনীতিবিদ, সরকারি কর্মকর্তার মধ্যেও অনেকে অর্থ পাচার করে বিদেশে সম্পদ অর্জন করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য যে ধরনের তথ্যপ্রমাণ দরকার আইনের ঘাটতির কারণে তার অনেক কিছুই সংগ্রহ করতে পারে না সরকার। সে কারণে পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়াও সরকারের পক্ষে সম্ভব হয় না। আইনের দুর্বলতার কারণে অনেকে আবার অবৈধভাবে বিদেশে সম্পদ অর্জনেও উৎসাহী হচ্ছেন বলে মনে করছে সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর। বিশেষ করে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশি নাগরিকদের জমা অর্থের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি তা-ই প্রমাণ করে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তবে এ ধরনের আইন পরিবর্তন করে পাচারকৃত অর্থ বা অবৈধভাবে বিদেশে অর্জিত সম্পদ ফিরিয়ে আনা বা এ সম্পর্কে সঠিক তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অবৈধভাবে পাচারকৃত অর্থ এবং বিদেশে অর্জিত সম্পদ সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি বিশ্বের যে কোনো দেশের সরকারের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ। এ জন্য স্থানীয় আইন যেমন আন্তর্জাতিক মানের হতে হবে তেমনি সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে থাকতে হবে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি। জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের তথ্য নিতে গেলে কেবল বাংলাদেশের আইনে পরিবর্তন আনলেই হবে না; যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়ে থাকে বা বাংলাদেশিরা যেখানে সম্পদ অর্জন করে থাকেন সেসব দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের তথ্য বিনিময়সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবং দ্বিপক্ষীয় চুক্তি থাকতে হবে। তা না করা গেলে আইন পরিবর্তন করে এর কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা অর্থ পাচার করে থাকে কিংবা অবৈধভাবে বিদেশে সম্পদ অর্জন করে তারাও সঠিক তথ্য দেবে না। তাদের দেওয়া তথ্য সঠিক কি না তা-ও যাচাই করা সম্ভব হবে না। 

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com