Latest News

পরবাসে ঈদ আনন্দ

মো: লুৎফুর রহমান বাবু: পরবাসে ঈদ আনন্দ শুনেই কেমন যেন আনন্দের মাঝে কষ্টের গন্ধ পাওয়া যায়। আপন নিবাস ছেড়ে পরবাসে ঈদ আসলেই এক কষ্টের নাম। যে চাপা কষ্টের কথা কাউকে কখনই বলা যায় না। অন্যকে বিলিয়ে দেওয়ার মাঝে যে প্রকৃত আনন্দ তার সবচেয়ে বড় উদাহরণ প্রবাসীরা। জীবিকার তাগিদে মধ্য প্রাচ্যের সৌদিআরব সংযুক্ত আরব আমিরাত (দুবাই) সহ ইউরোপের স্পেন ও ফ্রান্সে ঈদ উদযাপনের সুযোগ হয়েছে। ভিন্ন দেশে ভিন্ন ভাবে ঈদ উদযাপিত হলেও একটা যায়গায় সব প্রবাসী বাংলাদেশীদের মিল আছে। আর তা হলো যেকোন ভাবে ঈদের সময় বাড়িতে টাকা পাঠিয়ে প্রিয়জনদের খুশি করা। সে যত কষ্টেই হোক না কেন। মধ্যপ্রাচ্যের দু'একটা বিষয় বললেই বুঝতে পারবেন প্রবাসীদের ঈদ আনন্দ কিসে। সৌদিআরব যারা বলদিয়ার কাজ  (মিউনিসিপালিটির কাজ) করেন তাদের বেতন খুবই সামান্য। আবার অনেক সময় নির্দিষ্ট  সময়ে বেতনও পাওয়া যায় না। ঈদ আসলে বাড়িতে টাকা পাঠানোর জন্য তাদের পেরেসানি আমি দেখেছি। কোনভাবে টাকা পাঠাতে পারলে তাদের সেকি আনন্দ! তাদের ঈদ আনন্দ বলতে এটাই। আমি একটি সুপার শপে কাজ করতাম বলে ঈদে খুব একটা ছুটি পাওয়া হত না। আর পেলেও ঘুমিয়েই সময় কাটত। চট্রগ্রামের ফারুক, লিটন ভাই সহ অন্যান্যদের নিয়ে মাঝেমধ্যে ঘুরতাম। তবে সৌদিআরবে আমার ঈদ আনন্দ ছিল আমার একমাত্র বড় ভাই জিল্লুর রহমানের সাথে সময় কাটানো। ঈদ আনন্দের অন্যতম অনুসংগ ছিল ফোনে প্রিয়জনদের সাথে কথা বলা। যদিও ফোনে লাইন পাওয়াটা  ছিল দুস্কর। এবার আসি সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই শহরের ঈদের সময়গুলোতে। দুবাই মধ্যপ্রাচ্যের শহর হলেও খুব রক্ষণশীল নয়। এখানে একেবারে দেশের  মতো না হলেও তার কাছাকাছি আনন্দ করার চেষ্টা করেছি। দুবাই ড্রাগন মার্ট (যা চায়না মার্কেট নামে পরিচিত) ছিল আমাদের প্রবাসী বন্ধু বান্ধবদের জন্য  এক আনন্দের খনি। সবার প্রচেষ্টায় যেকোনো উৎসব পার্বণে এটি যেন প্রবাসে একখন্ড বাংলাদেশ। ঈদের সকালে নামাজ শেষে বাংলাদেশের মত একে অন্যের বাসায় যেতাম। খাওয়া টেবিলে ফিরনী সেমাইতো থাকতোই। এক ঈদে রাস আল খাইমার(অন্য শহর) এক বাংলাদেশী পরিবারে আমাদের আমন্ত্রণ জানানো হলে পুরো একটি বাস ভাড়া করে প্রায় ২০ জনের একটি দল যাই। আমার এখনও মনে আছে আমাদের মৌলভীবাজার এর এক বোন এত লোকের জন্য প্রায় ২০ পদের বাংলাদেশী খাবার তৈরী করেছিলেন। তাদের আন্তরিকতার কথা কোনদিনই ভুলতে পারব না। ধন্যবাদ সেদিনের আয়োজনের জন্য বন্ধু রাসেল ও সুমনকে। গত দুই বছর থেকে স্পেন ও ফ্রান্সে ঈদ উদযাপন করছি। তবে মধ্যপ্রাচের মত না। এখানে অনেকেরই কাজ থাকে। তাই ঘুরে বেড়ানো খুব বেশী হয় না। ঈদের নামাজ শেষে স্পেন বার্সেলোনার কুলাউড়ার মুমিন ভাইয়ের বাসায় দল বেঁধে যেতাম। প্রতি ঈদে একটা গেটটুগেদারের ব্যবস্থা করায় তাকে ধন্যবাদ। ফ্রান্সেও একইভাবে আমাদের এলাকার যে পরিবারগুলো থাকে তাদের বাসায় যাই। তাদের আদর আপ্যায়নে কিছুটা হলেও বাংলাদেশের ঈদ আনন্দকে খুঁজে পাই। তবে সমস্ত কিছুকে ছাপিয়ে এখন মনে ভাসে সেই ছোট বেলার ঈদটি। জামা লুকিয়ে রাখা, নতুন জুতা পরে বিছানার উপরে হাঁটাহাঁটি। সকালে কার আগে গোসল করা যায় সেই প্রতিযোগিতা। আসলে সেইসব দিনগুলো এখনো স্মৃতিপটে ভেসে উঠে। প্রবাসে যে যেখানে থাকুন না কেন; উপভোগ্য হোক ঈদের আনন্দ। ঈদ শুভেচ্ছা সবাইকে।
লেখক: স্টাফ রিপোর্টার, বাংলা কাগজ।
প্যারিস, ফ্রান্স।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com