সূত্রগুলো বলছে, ২৪ জুন রায় ঘোষণার প্রস্তুতি সম্পন্ন হওয়ার ঠিক আগে অসুস্থ হয়ে পড়া নিজামী এখন সুস্থ। তাই রায় ঘোষণা করতে এখন আইনি কোনো বাধা নেই। ইতোমধ্যে শারীরিকভাবে নিজামীর সুস্থ হয়ে ওঠা সংক্রান্ত চিকিৎসা প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাইব্যুনালের এক প্রসিকিউটর বলেন, রায় ঘোষণায় আইনি কোনো বাধা না থাকলেও ঈদের আগে নিজামীর রায় ঘোষণা হচ্ছে না। এটা মোটামুটি নিশ্চিত। রমজানসহ সার্বিক বিষয় চিন্তা করেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হতে পারে বলে তিনি জানান।
তবে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, কবে রায় হবে তা তারা নিশ্চিত নন। এটা ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার। তবে তারা অধীর আগ্রহে রায় ঘোষণার দিনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের ডেপুটি রেজিস্ট্রার অরুণাভ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, কারা অধিদপ্তরের পাঠানো নিজামীর স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতিবেদনে তাকে সুস্থ বলা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের আদেশেও আসামির সুস্থতা সাপেক্ষে রায় দেয়ার কথা বলা আছে।
সূত্রমতে, গত ২৪ জুন রায় ঘোষণার নির্ধারিত দিনে নিজামী অসুস্থ থাকায় ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ৩ বিচারপতির বেঞ্চে আসামির অনুপস্থিতিতে রায় ঘোষণার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে শুনানি হয়। শুনানি শেষে বিচারপতিরা এ আদেশ দেন যে, আসামির অনুপস্থিতিতে রায় দেয়া যুক্তিসঙ্গত মনে করে না ট্রাইব্যুনাল। এ আদেশ দিয়ে মামলাটি আবারও রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
ট্রাইব্যুনাল ওইদিনের আদেশে আরো বলেছিলেন, নিজামীর সুস্থ হয়ে ওঠা-সংক্রান্ত শারীরিক অবস্থার প্রতিবেদন পাওয়ার পর যত দ্রুত সম্ভব রায় ঘোষণা করা হবে।
ট্রাইব্যুনাল-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো থেকে আরো জানা গেছে, কারা কর্তৃপক্ষের পাঠানো চিকিৎসা প্রতিবেদনে যেহেতু নিজামীকে সুস্থ বলা হয়েছে, সে হিসেবে এখন যে কোনো সময় রায় দিতে পারে ট্রাইব্যুনাল।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী বলেন, রায় প্রস্তুত আছে। এ ছাড়া কারা প্রতিবেদনেও নিজামীকে সুস্থ বলা হয়েছে। তাই তারা আশা করতে পারেন, যে কোনো সময় ট্রাইব্যুনাল নিজামীর মামলার রায় দেবে।
সূত্রগুলো আরো জানায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবিতে সোচ্চার সংগঠনগুলো দ্রুত রায় ঘোষণার জন্য সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে।
প্রসঙ্গত, মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, লুট, ধর্ষণ এবং এসবে উসকানি ও সহায়তা, পরিকল্পনা ও ষড়যন্ত্র এবং বুদ্ধিজীবী হত্যার মতো ১৬টি অভিযোগে ২০১২ সালের ২৮ মে ট্রাইব্যুনাল-১-এ মতিউর রহমান নিজামীর বিচার শুরু হয়।
বিচারিক কার্যক্রম শেষে ২০১৩ সালের ১৩ নভেম্বর বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ নিজামীর মামলার রায় অপেক্ষমাণ রাখেন।
তবে রায় দেয়ার আগেই ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে আসা বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর ২০১৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর অবসরে গেলে এ আদালতের বিচার কার্যক্রমে কার্যত স্থবিরতা তৈরি হয়। ঝুলে যায় নিজামীর রায়ও। পরে এ বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমকে ওই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
দায়িত্ব নিয়ে আসামি পক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি এ মামলার যুক্তিতর্ক আবার করতে আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর নতুন এ চেয়ারম্যান। দ্বিতীয় দফা যুক্তিতর্ক শেষে গত ২৪ মার্চ নিজামীর যুদ্ধাপরাধ মামলা রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখে ট্রাইব্যুনাল।
রায় লেখার পর ২৩ জুন রায়ের দিন ঘোষণা করে ট্রাইব্যুনাল। ওই ঘোষণা অনুসারে ২৪ জুন রায় দেয়ার দিন ছিল। কিন্তু এর আগের দিন রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নিজামী অসুস্থ হয়ে পড়ায় ওইদিন রায় ঘোষণা করা হয়নি।
