Latest News

তারেকের ঈদকার্ড-চিঠি ---আন্দোলনে প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান

এসবিএন ডেস্ক: দীর্ঘ সাত বছর পর সারাদেশের দলীয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেছেন যুক্তরাজ্যে অবস্থানরত বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তবে এ যোগাযোগ সরাসরি নয়, চিঠির মাধ্যমে। মিছিল মিটিংহীন দেশে যখন চলছে ইফতার রাজনীতি ঠিক সেই সময়টিতে তারেক রহমান দলের নেতাকর্মীদের জানাচ্ছেন ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা, চিঠির মাধ্যমে কর্মীদের করছেন চাঙ্গা। জানাচ্ছে আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হওয়ার আহ্বান।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান দলের প্রতিটি জেলা উপজেলা, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, প্রথম যুগ্মসাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, হাসিনাবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে দলের যেসব নেতাকর্মী হতাহত হয়েছেন তাদের প্রতিটি পরিবার এবং উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি থেকে নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যানদের কাছে একটি ঈদকার্ড এবং একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তারেক রহমান স্বাক্ষরিত এই চিঠি এরই মধ্যে পৌঁছতে শুরু করেছে দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা এবং আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের কাছে। সবুজ জমিনের ওপর শুভ্র মিনার অঙ্কিত ঈদকার্ডে তারেক রহমান লিখেছেন, 'গণতন্ত্রহীন দুর্বিষহ অন্ধকারে নিমজ্জিত বাংলাদেশ। শকুনীর হিংস্র থাবায় রক্তাক্ত প্রিয় মাতৃভূমি। ইনশাআল্লাহ, আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় 'দেশ বাঁচাও মানুষ বাঁচাও' আন্দোলনের মাধ্যমে অচিরেই কেটে যাবে অন্ধকার, ফুটবে আলো, প্রতিষ্ঠিত হবে কাঙ্ক্ষিত গণতন্ত্র ও সুশাসন। এ প্রত্যাশায় আপনার ও আপনার পরিবারের প্রতি রইল পবিত্র ঈদুল ফিতরের শুভেচ্ছা ও শুভকামনা এবং আপনার মাধ্যমে ঈদ শুভেচ্ছা রইল আপনার এলাকার প্রতিটি মানুষের প্রতি। ঈদ মোবারক।'
আর দীর্ঘ চিঠিতে তারেক রহমান শেখ 'হাসিনা সরকারের দুর্নীতি-দুঃশাসন-হত্যার চিত্র' তুলে ধরেছেন। চিঠিতে শেখ হাসিনাকে 'গণতন্ত্রের শত্রু এবং মিথ্যাবাদী' আখ্যা দিয়ে বলা হয়েছে, 'ঘোর ঘন অমানিশায় বাংলাদেশের গণতন্ত্র, সুশাসন নেই, নেই সামাজিক ন্যায়বিচার। জানমালের নিরাপত্তা নেই। শেখ হাসিনার শাসনামলে দেশজুড়ে চলছে খুনি কাপালিকদের উল্লাস। লুটেরা দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসীদের রাজত্বে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য এখন মানুষ খুন করছে টাকার বিনিময়ে। পবিত্র ঈদের দিনটিতেও পরিবারের সঙ্গে আমার মতো আপনাদের অনেকেই ঠিকমতো আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন কিনা সেটি নিয়েও অনেকেই উদ্বিগ্ন। গণতন্ত্রের শত্রু মিথ্যাবাদী হাসিনা গোটা বাংলাদেশকে পরিণত করেছেন কয়েদখানায়।'
এতে আরো বলা হয়, 'মাতৃভূমি বাংলাদেশ এখন অসহায়। খুনি-লুটেরা, সন্ত্রাসী, সোনা চোরাকারবারি আর বিদেশে অর্থপাচারকারীদের নেতা শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে নিয়ে গেছে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। দেশের টাকা লুট করে সুইস ব্যাংকসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাচার করছে হাসিনা ও তার বাহিনী। শুধু সুইস ব্যাংকের হিসাব মতেই আওয়ামী লীগ নেতামন্ত্রীরা ২০০৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত প্রতিবছর তিন হাজার কোটি টাকা করে সুইজারল্যান্ডে পাচার করেছেন। শুধু তাই নয়, ইউরোপ-আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে শত শত বিলাসবহুল বাড়ি ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলা হয়েছে। অবস্থা এতটাই ভয়ঙ্কর, খোদ হাসিনা বাহিনীর সদস্যরা পর্যন্ত তাদের পাতানো সংসদে বলতে বাধ্য হয়েছেন, পাচারের টাকায় কানাডায় গড়ে উঠেছে বেগমপাড়া।'
শেখ হাসিনা বিরোধী অন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে দেয়া চিঠিটি একটু ব্যতিক্রম। এই চিঠিটিতে তারেক রহমান লেখেন, 'হাসিনার দুঃশাসনে কেউ ভালো নেই। আপনারা হারিয়েছেন বাবা-মা, ভাইবোন কিংবা আত্মীয়স্বজন-বন্ধুবান্ধব। হারিয়েছেন ঘরবাড়ি। নষ্ট হয়েছে আপনাদের অর্থসম্পদ। আপনাদের এই নির্মম যাতনার কথা আমি বুঝি। কারণ হাসিনার প্রতিহিংসায় আমিও হারিয়েছি আমার পিতা বাংলাদেশের প্রথম প্রেসিডেন্ট ও স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের দীর্ঘদিনের স্মৃতিবিজড়িত বসতবাড়ি, জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে চলছে ধারাবাহিক অপপ্রচার।'
উভয় চিঠির শেষ প্যারায় তারেক রহমান লেখেন, 'আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনগণ নেই। সেদিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন এই অবৈধ হাসিনা সরকারের পতন ঘটবে। আপনারা সোচ্চার থাকুন। দেশ বাঁচাতে মানুষ বাঁচাতে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের প্রস্তুতি নিন। ইনশাআল্লাহ আমাদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে কাটবে অাঁধার, ফুটবে আলো। সেই সোনালি ভোরের প্রত্যাশায় আপনাকে এবং আপনার পরিবারের সবাইকে ঈদ মোবারক।'
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ঈদের পরই আন্দোলনের ডাক দেয়ার কথা বলেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ধারণা করা হচ্ছে, সেই আন্দোলনে নেতাকর্মীদের উজ্জীবিত করতে তারেক রহমানের এই চিঠি। দলীয় সূত্রগুলো আরো জানিয়েছে, এবারের আন্দোলন চূড়ান্ত সফলতার দিকে নিয়ে যেতে চায় বিএনপি জোট।
সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারির পর বিএনপির আন্দোলনে ভাটা পড়ে। বিএনপি কোনো জোরালো আন্দোলন ছাড়াই শান্তিপূর্ণভাবে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের সঙ্গে বারবার সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছে। এর জবাবে সরকার বিএনপিকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করছে। সূত্রগুলো মতে, বিএনপি ইতোমধ্যেই বিদেশিদেরও বোঝাতে সক্ষম হয়েছে যে শান্তিপূর্ণ উপায়ে আওয়ামী লীগ দাবি মেনে নেবে না। সুতরাং আন্দোলনের বিকল্প নেই। এই বাস্তবতায়, এখন জনগণের মধ্য থেকেই সরকারবিরোধী কঠোর আন্দোলনের দাবি উঠেছে। এই কারণেই বিএনপি ঈদের পরই আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নামার পরিকল্পনা করছে। বিএনপির নীতি-নির্ধারণী পর্যায়ের দুই নেতা বলেছেন, হাসিনার শাসনামলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী বিশেষ করে র‌্যাবের বাড়াবাড়ি সম্পর্কে সব তথ্যপ্রমাণ জাতিসংঘসহ বিদেশের বন্ধুভাবাপন্ন রাষ্ট্র এবং বিশ্বের মানবাধিকার সংগঠনগুলোর হাতে দেয়া হয়েছে। সেখান থেকেও বিএনপি নিশ্চয়তা পেয়েছে তারা এবার আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর অপতৎপরতা মনিটর করবে।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com