Latest News

তবুও আশায় আছি

মহিবুল হাসান খান কয়েশ: পত্র পত্রিকা খুললেই বরাবরের মত যা চোখে পড়ে তা দেখে দেখে আমরা আমজনতা অভ্যস্ত। প্রতিদিন নতুন ভালো কোন খবরের আশায় খবরের পাতায় চোখ বুলাই। যদিও মনে মনে সেই আশা গুড়েবালি জানি; তারপরেও মনের গহীন থেকে ছোট্ট একটা আশা উঁকি দেয়; কিন্তু পত্রিকা পড়া শেষ হবার আগেই সেই আশা মুখ লুকিয়ে পালায়। এভাবে চলতে থাকলে কোন একদিন পত্র পত্রিকা পড়া ছেড়ে দেব- তা বলতে পারিনা। কারণ এভাবেইতো চলছিল, চলছে। আর যে চলবেনা, তার আশাও ...  থাক আর না হয় নাই বললাম।
বাংলাদেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ নীতি, ছাইচাপা দিয়ে রেখেছে আমাদের ক্ষমতা নীতি। ক্ষমতার লড়াইয়ে আমাদের মত শত শত তাজা প্রাণ বলি হচ্ছে। আর তার উপর ভর করে নেতা নেত্রীরা তাদের ফায়দা লুটছেন। ফায়দাটা যদি শুধুমাত্র রাজনীতি হত, তাহলেও হয়ত কিছুটা বাঁচা যেত। রাজনীতির হিংস্র থাবায় প্রথমে ধ্বংশ করছে আমাদের সমাজ। নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল মার্কা আজ মামা, চাচা, খালুর চাইতেও বেশি আপন। কোন কোন জায়গায় এই অবস্থা যে, একজন অন্য জনকে আদাব সালাম দেয়ার আগে ভেবে নেয় বিপরীত ব্যক্তি কোন দলের। দলীয় বিবেচনা অনুকূলে হলেই কেবল হাত উঁচিয়ে আদাব সালাম, নতুবা নয়। যদি এমন হয় তাহলে কি আমি বলবনা যে রাজনীতি প্রথমেই সমাজ নীতিকে ধ্বংস করছে? আর একটু আগ বাড়ালেই চলে আসতে হয় অর্থনীতির দিকে। আমি লিখার ঠিক আগ মুহূর্তে একজন রাজনীতিবিদের নাম স্মরণ করতে চেয়েছিলাম; যিনি তার রাজনৈতিক জীবনে অবৈধভাবে কোন বিত্ত বৈভবের মালিক হননি। না পারিনি। বরং আমাকে উল্টো পথেই হাঁটতে হয়েছে। কষ্ট হয়েছে তাদের নাম ভুলতে; যারা রাজনীতির ঘরে পারা দিয়ে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ না অধিকন্তু তিল থেকে তাল নয় বরং তিল থেকে তিলোত্তমা হয়েছেন।  আমি সেসব নাম বলে স্বদেশ মাতৃকার ধূলা বালি গায়ে মাখার সুপ্ত বাসনা থেকে নিজেকে জেনে শুনে হারিয়ে যেতে দিতে পারিনা বলেই বলছিনা।  আমি ক্ষমা প্রার্থী।
গণতান্ত্রিক দেশ আমার। যখন কোথাও লিখা দেখি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ, তখন আনন্দে বুকটা ভরে যায়। কি সুন্দর মধুময় বাক্য।  এই প্রজাতন্ত্রের ধারা কি বলে দেয় রাজনীতির নামে হিংসা, বিদ্বেষ, হানাহানির বিস্তার ঘটাতে? ছাত্রলীগ, ছাত্রদল, ছাত্রসমাজ আজ নিচে নামতে নামতে স্কুল পর্যন্ত চলে এসেছে! আর যেখানে সেই ছাত্র সংগঠন নামের বীজ রোপিত হচ্ছে, সেখানেই ঝরছে রক্ত আর খালি হচ্ছে মায়ের বুক। একটা বীজ কতবার রোপন করলে সেই বীজ থেকে গাছ হয়, তা আমার আজন্ম প্রশ্ন। কারণ আমরাতো ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছি।  আমরাতো নিজের জীবন দিয়ে মাকে করেছি সন্তান হারা আর সারা বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামক একটা দেশের চিত্র আঁকিয়েছি। কিন্তু আজ কেন রক্ত দিতে হয়? প্রাণ দিতে হয়? তাহলে কি ধরে নেব আজও আমার দেশ পুরোপুরি স্বাধীন হয়নি?
বাংলাদেশে বড় দলের মধ্যে সম্ভবত ৩ টা দল বড় বলেই বিবেচিত।  তারমধ্যে আবার ২টা দল অনেক এগিয়ে, তাই প্রতিয়মান। সেই বড় দুইটা দলের দিকে তাকিয়ে থেকে আমি ক্ষুদ্র মনে বুঝতে পারিনা কোন দলের নেতা নেত্রী সত্যবাদী। এক দলের নেতা নেত্রী একটি কথা বললে অন্য দলের নেতা নেত্রী শুধু ঘরে বসেই নয়, সভা সমাবেশ করে সেই কথাটিকে মিথ্যা বলে অভিহিত করেন। এখানেই শেষ নয় বা শেষ হয়না। কেন নেতা নেত্রীর কথা কে মিথ্যা বলা হলো, তার জন্য আবার সভা সমাবেশ। হায়রে রীতিনীতি! আমি অন্য দিকে যাচ্ছিনা বরং পাঠককে ভাবতে বলছি যে, যে নেতা নেত্রী কথা বললেন আবার অন্য নেতা নেত্রী সেই কথাটি মিথ্যা বলে অভিহিত করলেন। আমরা কার কথাটি বিশ্বাস করব? এখানে যে কোন একজন সত্য বলেছেন আর অন্য একজন মিথ্যা তা সহজেই অনুমেয়। এখন আমার কথা হলো, বাংলাদেশের রাজনীতিতে ক্ষমতার পালাবদল হয়।  আর তা ঘুরে ফিরে সেই বড় ২ দলের হাতেই হাতবদল হয়।  আর যদি তাই হয় তাহলে ৫ বছর পর পর কি আমরা কোন এক মিথ্যাবাদী সরকারের অধীনে দিনাতিপাত করিনা? যদি করেই থাকি তাহলে মিথ্যাবাদী সরকারের থেকে পরিচ্ছন্ন কি কি পাওয়া যায় তা আমার বোধগম্য নয়।
কোনো দলের দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলার স্পর্ধা আমার কখনো হয়নি । আর সেই দু:সাহস কভু হোক তাও চাইনা।  শুধু চাই আমার প্রিয় স্বদেশ থেকে বিদ্যুতের খাম্বা নাটক সাজিয়ে প্রজাতন্ত্রের  টাকা কারো পকেটে না ঢুকুক। আমি চাইনা বিশ্বজিতের মত নিষ্পাপ কোনো প্রাণ অকালে ঝরে যাক। আমি কেন খবরের পাতা উল্টালেই  বস্তাবন্দী লাশের ছবি দেখব? কেন দেখব গুম হয়ে যাওয়া কোনো স্বামীকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অশ্র“সিক্ত স্ত্রীর  আর্তনাদের খবর? যদি সেসব দেখতেই হয়, তাহলে কেন আমরা বলব আমার দেশ গণপ্রজাতন্ত্রী ? গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে গণতন্ত্রের ধুয়ায় আর কতদিন সাধারণ মানুষের রক্ত চুষা হবে? কবে করা হবে আমাদের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমাজনীতিকে রাজনীতিমুক্ত? পত্রিকার পাতা কবে উল্টালে আমরা সেই সু সংবাদটি পেতে পারি, তা কি কেউ বলতে পারেন?

বার্সেলোনা, স্পেন।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com