Latest News

নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ কাঁদছে ব্রাজিল

                                             
এসবিএন ডেস্ক.এমন জয় কি চেয়েছিলেন কেনো ব্রাজিলভক্ত, যে জয়ে ব্রাজিলের সেমি নিশ্চিত হলেও হারাতে হবে তাদের স্বপ্নসারথি নেইমারকে! শুক্রবার রাতের কোয়ার্টার ফাইনালে কলম্বিয়া - গোলে হারলেও এক অর্থে হেরে গেছে ব্রাজিলই জয়ের বিনিময়ে আসরে তাদের হারাতে হয়েছে 'সোনার ছেলে'কে কারণে হেক্সা মিশনে আরেক ধাপ এগোলেও ব্রাজিলভক্তরা হতাশ কাঁদছে তামাম ফুটবলবিশ্বও! তাই তো খেলার মাঠের প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী লিওলেন মেসি, মেসুত ওজিল, বাস্তেইন শোয়েনস্টাইগার, লুকাস পোডলস্কি, পাতোর মতো তারকা থেকে শুরু করে খোদ ফুটবল-ঈশ্বর দিয়াগো ম্যারাডোনা হায় হায় করে উঠেছেন! সবাই নেইমারের মাঠে ফেরার শুভ কামনা জানিয়েছেন অন্তরের অন্তস্তল থেকে কেবল শুভ কামনাই নয়, অনেক ফুটবলবোদ্ধা বলেছেন, নেইমারকে হারিয়ে বিশ্বকাপ স্বপ্ন চুরমারই হয়ে গেল ব্রাজিলের। তাদের মতে, নেইমারকে ছাড়া বিশ্বকাপের শিরোপা জেতার সামর্থ্য রাখে না ব্রাজিল। এমন বক্তব্যের কারণটাও যথেষ্ট সঙ্গত। মূলত নেইমারনির্ভর ব্রাজিল বিশ্বকাপে যত দূর অগ্রসর হয়েছে, তার মূল কৃতিত্বই নেইমারের। পাঁচ ম্যাচে চার গোল করেছেন নিজে। দলের হয়ে করিয়েছেন আরও এক গোল। এখানেই শেষ নয়, নেইমারের ড্রিবলিং রুখতে প্রতিটি ম্যাচেই প্রতিপক্ষের প্রায় হাফ ডজন খেলোয়াড়কে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হতো সারাক্ষণ। পুরো মাঠে চড়াও হয়ে খেলা এমন খেলোয়াড়কে হারিয়ে মুষড়ে পড়ারই কথা ভক্ত-সমর্থকদের কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার হুয়ান ক্যামিলা জুনিগার 'টার্গেট' আঘাতে নেইমারের মেরুদন্ডের হাড়ে চিড় ধরার সঙ্গে সঙ্গে দেশ-দেশান্তরের ব্রাজিলভক্তদের মনোবলেও যেন বড় ধরনের চিড় ধরেছে। ব্রাজিলভক্তরা এখন বিশ্বাসই করতে পারছেন না, নেইমার ছাড়া সেমির ম্যাচে জার্মানির সঙ্গে পেরে উঠবে তাদের প্রিয় দল। ফুটবলপ্রেমী ইডেন কলেজের ছাত্রী আতিয়া সুরভী শনিবার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, নেইমার ব্রাজিল দলের স্তম্ভ্ভ। তাকে ছাড়া ব্রাজিলের সামনে এগোনো কঠিন। তিনি বলেন, অন্য দলগুলো আরও কিছু খেলোয়াড়ের ওপর নির্ভরশীল হলেও এবারের ব্রাজিল নেইমারের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল ফেসবুক, টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে নিন্দার ঝড় বইছে কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার জুনিগার ওপর। নানা স্ট্যাটাসে ফিফার কাছে জুনিগার কড়া শাস্তি দাবি করছেন সমর্থকরা। আর ব্রাজিল কোচ লুইস ফেলিপে স্কোলারি দাবি করেছেন, নেইমার পরিকল্পিত আক্রমণের শিকার। আমরা কিছুদিন ধরেই আশঙ্কাটা করছিলাম। দলের প্রাণভোমরাকে হারিয়ে বিহ্বল-ক্ষুব্ধ স্কোলারি বলেন, তিন ম্যাচ ধরে আমি একই কথা বলছি। আক্রমণের শিকার হচ্ছে নেইমার। কিন্তু অন্য দেশগুলো বলছিল, এটা সত্যি নয়। মাঠে ভেতরে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, অথচ রেফারি নির্বিকার। ব্রাজিলীয় অধিনায়ক থিয়াগো সিলভার প্রসঙ্গ টেনে স্কোলারি বলেন, নেইমারকে এত বড় আঘাত করার পরও জুনিগারকে হলুদ কার্ড দেখানো হলো না। অথচ কোনো কারণ ছাড়াই সিলভাকে হলুদ কার্ড দেয়া হলো শুধু শুক্রবার রাতেই নয়, চিলির বিপক্ষে ম্যাচেও বেশ কয়েকবার ফাউলের শিকার হন নেইমার। হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান, ঊরু ফুলে যায়। আর আগে থেকে হাঁটুর ব্যথা তো ছিলই। নেইমারের শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছিল চিলিয়ানদের মারধরের চিহ্ন। কোয়ার্টার ফাইনালে তিনি খেলতে পারবেন কি না, নিয়ে সংশয় জেগেছিল। সে সংশয় দূর করে মাঠে ফিরেছিলেন নেইমার। কিন্তু এবার বিশ্বকাপটাই শেষ হয়ে গেল তার যদিও কলম্বিয়ান খেলোয়াড় জুনিগা বলেছেন, পুরো বিষয়টিই 'অনিচ্ছাকৃত' সাধারণভাবে ট্যাকল করতে গিয়েই ওটা ঘটেছে। এটা খুবই সাধারণ একটি ঘটনা। আমি ওকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করছিলাম। আঘাত করার কোনো দুরভিসন্ধি আমার ছিল না। পুরো ব্যাপারটাই অনিচ্ছাকৃত দুঃখজনক জুনিগা যখন সাংবাদিকদের কাছে আত্মপক্ষ সমর্থন করছিলেন, পোর্তালেজা হাসপাতালে তখন চিকিৎসকরা শুশ্রূষা দিচ্ছিলেন নেইমারকে। কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার তখন নিশ্চিতভাবেই জানতেন না যে, তার অনিচ্ছাকৃত হাঁটুর আঘাতে বিশ্বকাপই শেষ হয়ে গেল সময়ের ফুটবল বিম্ময় নেইমারের। তাই হয়তো জুনিগা আরও বললেন, আশা করছি সে দ্রুতই সেরে উঠবে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যেন খারাপ কিছু না হয়। জুনিগার দাবি, ওই সময় ম্যাচের ৮৮ মিনিট গড়িয়ে গেছে। আমরা - গোলে পিছিয়ে। গোল পরিশোধের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠার কারণেই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে। আমরা গোল করতে চাচ্ছিলাম। সময়ও ফুরিয়ে আসছিল। আমি কাউকে ইচ্ছা করে আঘাত করার জন্য মাঠে নামিনি। নেইমার দারুণ খেলোয়াড়। সে শুধু ব্রাজিল নয়, গোটা ফুটবলবিশ্বেরই অন্যতম সেরা প্রতিভা 'দ্রুত সেরে ওঠো বন্ধু' : মেরুদন্ডের হাঁড়ে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে নেইমারের ব্রাজিল বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়ার খবরে কেবল ভক্ত-সমর্থকরাই মর্মাহত নন; মর্মাহত নেইমার মাঠে যাদের সঙ্গে বল নিয়ে দৌড়ান, সেই লিওনেল মেসি, মেসুত ওজিল, বাস্তেইন শোয়েনস্টাইগার, পাতোর মতো তারকারা। তারকারা এরই মধ্যে সহমর্মিতা জানিয়েছেন নেইমারের প্রতি। শনিবার মেসি তার অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে নেইমারের সঙ্গে তোলা একটি ছবি পোস্ট করেছেন। লিখেছেন, দ্রুত সেরে ওঠো বন্ধু, নেইমার ব্রাজিলের সেমির প্রতিপক্ষ জার্মানি। প্রতিদ্বন্দ্বীর সবচেয়ে বড় ভরসা নেইমার ম্যাচে খেলবেন না- মেসুত ওজিলের তাতে খুশিই হওয়ার কথা। কিন্তু নেইমারের জন্য উদ্বেগই প্রকাশ করেছেন ওজিল। জার্মান তারকা টুইটারে লিখেছেন, নেইমারের জন্য খুব খারাপ লাগছে। আশা করছি, সে খুব দ্রুতই সেরে উঠবে ব্রাজিলিয়ান তারকা পাতো লিখেছেন, ছোট ভাই, তোমার অনেক শক্তি। আমরা সবাই তোমার সঙ্গে আছি। ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপের গোল্ডেন বুট বিজয়ী ইংলিশ কিংবদন্তি লিনেকার টুইট করেছেন, নেইমারের বিশ্বকাপ শেষ হয়ে যাওয়া ব্রাজিলের জন্য বিরাট ধাক্কা নেইমারের ঘটনায় কিংবদন্তি দিয়াগো ম্যারাডোনাও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ভেনিজুয়েলার একটি টেলিভিশনকে ম্যারাডোনা বলেছেন, এটা ভয়াবহ একটা ব্যাপার। কেবল ব্রাজিলের জন্যই নয়, গোটা ফুটবল দুনিয়ার জন্যই এটা উদ্বেগের বিষয়। বিশ্বকাপ হচ্ছে নেইমারের দেশের মাটিতে। গোটা দেশের অনেক প্রত্যাশা ছিল তার ওপর কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ম্যাচের ৮৮ মিনিটে প্রতিপক্ষের খেলোয়াড় জুনিগার আঘাতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন নেইমার। শেষ পর্যন্ত স্টেচারে করে তাকে মাঠের বাইরে নিতে হয়। এরপর অবস্থা গুরুতর মনে হলে সরাসরি তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। পোর্তালেজার স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে পরীক্ষার পর তার কোমরের হাড়ে চিড় ধরা পড়ে। কারণে বিশ্বকাপে আর মাঠে নামতে পারবেন না তিনি। চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন, নেইমারের অপারেশন লাগবে না। তবে মাঠে নামার কোনো সুযোগ আপাতত নেই। খবরে সারা বিশ্বে ফুটবলভক্তদের মধ্যে মাতম শুরু হয়েছে। বলতে গেলে বিশ্বকাপও অনেকটা রঙ হারাল

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com