Latest News

বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের অসুস্থ হয়ে পড়ার পরিমাণ বেড়েছে

এসবিএন ডেস্ক   বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশিদের অসুস্থ হয়ে পড়ার পরিমাণ সম্প্রতি বেড়েছে। গত ৬ মাসে অন্তত ৬৫ প্রবাসকর্মী চিকিৎসারও অযোগ্য হয়ে পড়েছেন, আছেন দেশে ফেরার অপেক্ষায়। এসব কর্মীর পক্ষ থেকে সরকারের কাছে লিখিত সহায়তা চাওয়া হয়েছে, দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার। কিন্তু দূতাবাসের অসহযোগিতার কারণে তারা ফিরতে পারছেন না বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অধিকাংশ সময়ই প্রবাসকর্মীরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকেন, তাদের কর্মস্থলের পরিবেশও উন্নত নয়। কর্ম ও আবাসস্থলের পরিবেশের উন্নতি করা ছাড়া এ অসুস্থতা বন্ধের উপায় নেই। সরকারের উচিত, সমস্যাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এর সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারী-পুরুষ উভয় শ্রেণির কর্মীই অসুস্থদের তালিকায় রয়েছেন। ফেনীর আবদুল মালেকের মেয়ে পিয়ারা বেগম (২৭)। কয়েক মাস আগে গৃহকর্মী হিসেবে কুয়েতে যান। বর্তমানে তিনি শারীরিক ও মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত যে, কথা পর্যন্ত বলতে পারছেন না। কে বা কারা তাকে সম্প্রতি কুয়েতস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে ফেলে যায়। তার কোনও ট্রাভেল ডকুমেন্ট উদ্ধার করতে পারেনি দেশটির পুলিশ। পিয়ারার আশ্রয় এখন সেফহোমে। একইভাবে ওমানে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়ে আছেন ঢাকার লতিফা বেগম (২৯), মজিরন (২৬)  প্রমুখ।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার মো. এমরান হোসেন জানান, ৫ ফেব্রুয়ারি তার বাবা আবদুর রাজ্জাক সংযুক্ত আরব আমিরাতে অসুস্থ হয়ে মদিনার জায়েদ হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি এখনও সেখানে চিকিৎসাধীন। এমরান বলেন, বাবাকে দেশে ফেরত আনতে ২ জুন     সরকারের সহযোগিতা চেয়ে আবেদন করেছি। এর পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের পরিচালক (প্রশাসন ও উন্নয়ন) স্বারিত একটি পত্র আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলরের কাছে পাঠানো হয়েছে। এমরানের অভিযোগ, আবুধাবির বাংলাদেশ দূতাবাসে আবেদন করে তিনি অসহযোগিতামূলক আচরণ পেয়েছেন। দূতাবাস জানিয়েছে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে কোনও লাভ নেই। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমরান বলেন, আমরাই যদি কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগ করব, তাহলে দূতাবাসের কাজ কী?
চিকিৎসার অযোগ্য দেশে ফেরার অপেক্ষায় আরও রয়েছেন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের হাসান আলীর ছেলে আবদুর রাজ্জাক যিনি ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে এখন রিয়াদের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন, কুমিল্লার আকবর আলীর ছেলে রাজ্জাক অসুস্থ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আবুধাবিস্থ মদিনা জায়েদ হাসপাতালে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আবু হোসেনের ছেলে বিল্লাল হোসেন মৃতপ্রায় অবস্থায় ওমানে দিনানিপাত করছেন। এ ছাড়া রয়েছেন ময়মনসিংহের আ. খালেকের ছেলে রুবেল, সিরাজগঞ্জের আবুল হাসেম, চট্টগ্রামের ইউসুফ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জর্জ মিয়া, বগুড়ার সানু মিয়া, নোয়াখালীর সুজাপুরের নাসির আহমেদ, টাঙ্গাইলের অসীম, শরীয়তপুরের হানিফ, লক্ষ্মীপুরের শহীদুল্লাহ, কুমিল্লার ফরিদ মিয়া, বুড়িচংয়ের রানা মিয়া, চট্টগ্রামের সিদ্দিক, চাঁদপুরের কুদ্দুস ও মিন্টু, নোয়াখালীর খালেক, ফেনীর ইসমাইল, হবিগঞ্জের জীবন আল প্রমুখ। 
সূত্র জানায়, অসুস্থ বাংলাদেশি কর্মীদের তালিকার প্রথমে রয়েছে সৌদি আরব, দ্বিতীয় অবস্থানে মালয়েশিয়া ও তৃতীয় অবস্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাত। প্রবাসী শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করছে এমন সংগঠনগুলো এ অসুস্থতা বৃদ্ধি নিয়ে উদ্বিগ্ন হলেও সরকারের প থেকে বিভিন্ন সময় বলা হয়েছে, যেখানে ১ কোটি লোক বিদেশে থাকেন, সেখানে কিছু মানুষ অসুস্থ হওয়া অসম্ভব কিছু নয়।
অভিবাসীদের নিয়ে কাজ করে ‘প্রবাসী বাংলাদেশি’ নামের একটি সংগঠন। এর পক্ষ থেকে মৃতদের স্বজন ও বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মূলত ৫টি কারণে বাংলাদেশিরা স্ট্রোক বা হৃদরোগের মতো সমস্যায় পড়ে। এগুলো হল- প্রতিকূল পরিবেশ; যে বিপুল টাকা খরচ করে বিদেশে যান, সেই টাকা তুলতে অমানুষিক পরিশ্রমের পাশাপাশি বাড়িতে টাকা পাঠানোর চিন্তা; দিনে ১২ থেকে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করা; অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকা; দীর্ঘদিন স্বজন-বিচ্ছিন্ন থাকা। সব মিলে মানসিক ও শারীরিক চাপের কারণেই সাধারণত স্ট্রোক বা হৃদরোগের মতো ঘটনা ঘটছে।
কর্মীদের অস্বাভাবিক মৃত্যু ও অসুস্থতা প্রসঙ্গে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, কর্মীরা গাদাগাদি করে এক রুমে থাকেন। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়, দীর্ঘদিন পরিবারের বাইরে থাকায় এমনটি হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সরকার এসব মানবিক সমস্যা সমাধানে অনেক দূর এগিয়েছে। 
ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ সূত্র জানায়, সৌদি আরবে বা মধ্যপ্রাচ্যে প্রচ- গরম। সেখানে তাপমাত্রা ৪৫ থেকে ৫০ ডিগ্রি পর্যন্ত থাকে। আমাদের শ্রমিকরা যে পরিবেশে সেখানে কাজ করছেন, তা অমানবিক। অধিকাংশ েেত্রই শ্রম আইন মানা হয় না। আবার তারা যেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে গাদাগাদি করে থাকেন, সেখানে অনেকেই গুরুতর অসুস্থ হন। কাজের পরিবেশ বা থাকার পরিবেশ উন্নত করা ছাড়া এ অসুস্থতা বন্ধের কোনও উপায় নেই।
অভিবাসনবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান রামরু জানায়, প্রবাসীদের এমন ভাগ্য মানা যায় না। যে বয়সে তারা অসুস্থ হচ্ছেন বা মারা যাচ্ছেন, সে বয়সে হৃদরোগ বা মস্তিষ্কে রক্তরণ হওয়াটা স্বাভাবিক নয়। তারা যে পরিবেশে কাজ করছেন, যে মানসিক চাপ নিচ্ছেন, সেটাই অসুস্থতার বড় কারণ। সরকারের উচিত, সমস্যাটিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে এর সমাধানে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com