এসবিএন ডেস্ক .এই বর্ষাকালে ভরা মওসুমেও এবার মাছ নেই মৌলভীবাজারে। প্রাকৃতিক অনেক উৎস বন্ধ এবং অপরিকল্পিত প্রক্রিয়ায় হাওর নদী-নালা ও বিল থেকে আহরণ ও পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মাছের উৎপাদন কমে গেছে। অনেক হাওর এখন বলা যায় পুকুরে পরিণত হয়েছে। আগের মতো প্রাকৃতিক জলাধারও নেই। ফলে এলাকায় দেখা দিয়েছে মাছের তীব্র সঙ্কট। অপরদিকে এবার গরম বেশি ও হাওর চলতি মওসুমে পানি কম থাকায় মাছ ডিম ছাড়লেও পোনা হয়নি। ফলে প্রাকৃতিক উৎস ছাড়া কালচারকৃত ফিসেও একই ঘটনা ঘটছে।
হাওর নদী ঘেরা মৌলভীবাজারে একসময় মাছ উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত ছিল। বিশেষত হাইল হাওর, কাউয়াদিঘির হাওর ও হাকালুকি হাওরে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদন হতো প্রচুর। বর্ষা মওসুমে নদী থেকে বিভিন্ন সংযোগ পথে হাওরের মাছ প্রবেশ করতো নানা জাতের। হাওর ঘেরা বাঁধ, হাওর ও নদীর সংযোগ স্থল শুকিয়ে যাওয়া বা ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ অঞ্চল থেকে বিলুপ্ত হয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মিঠাপানির মাছ। এক সময় এসব হাওর ও খাল-বিলে শতাধিক দেশীয় প্রজাতির মাছ দেখা যেত। কিন্তু তার মধ্যে বর্তমানে ৩২ প্রজাতির মাছের দেখা মিলছে না। তাছাড়া এই বর্ষা মওসুমেও জেলার সর্বত্র আকাল দেখা দিয়েছে মাছের। জীববৈচিত্র্য রক্ষায় হাকালুকি হাওরকে প্রতিবেশগত সঙ্কটাপন্ন এলাকা (ইসিএ) ঘোষণা করা হলেও বাস্তবে এর তেমন কোন প্রতিফলন নেই।
কাউয়াদীঘি হাওর, হাইল হাওর, বড় হাওর, বেরী বিল, কুশিয়ারা, মনু ও ধলাই নদীর মাছ জেলার চাহিদা পূরণে বিশেষ ভূমিকা রাখতো। কিন্তু এখন অসাধু জলমহাল ইজারাদাররা হাওর-বিলের তলা শুকিয়ে মাছ ধরা ও সর্বনাশা কারেন্ট জালের কারণে দিন দিন ডিমওয়ালা মাছ নিধনের কারণে বংশ বিস্তার হচ্ছে না। বিরাইমাবাদ মাছের বাজারের মৎস্যজীবী করমউল্লাহপুর গ্রামের ফারুক মিয়া (৬৫), নরাইনপুর গ্রামের আলী রাজ (৬০) জানান, হাওরে পানি হলে মাছ হয়। এবার হাওরে পানি নেই। মাছও নেই। তাছাড়া প্রতিবছর হাওরের বিল (জলাশয়) সেচ দিয়ে মাছ ধরায় মাছ কমছে প্রতি বছর। সূত্র জানায়, হাকালুকি হাওরে এক সময় ১০৭ প্রজাতির দেশীয় মিঠা পানির মাছ পাওয়া যেত। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আরও ৩২ প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির পথে। বিলুপ্ত প্রায় প্রজাতির মধ্যে রয়েছে দেশের চিরচেনা ও সুস্বাদু চিতল, রিঠা, বামোস, টাটকিনি, ঘারুয়া, রাণী, একথুটি, নাফতানি, বাঘাইড়, চাকা, ঢেলা, বাচা, নাপতেকৈ, বাঁশপাতা, ফলি, রায়েক, ছেপচেলা, কুঁচে, টেংরা, গুজি আইড়মাছ। হাকালুকি হাওর লাগুয়া ভুকশিমইল ইউনিয়নের এক প্রবীণ মৎস্য ব্যবসায়ী জানান, চিতল, রিঠা, রাণী, বাঘাইড়, বাঁশপাতা, ফলি, গুজিআইড় মাছ এখন আর দেখা যায় না। হাওরে অবাধে কারেন্ট জাল ব্যবহার এবং বিল সেচে মাছ ধরা হাকালুকিতে মাছের বড় ক্ষতি করছে। মৎস্য অধিদপ্তর মৌলভীবাজার কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক নৃপেন্দ্র চন্দ্র দাস বলেন, জেলায় মাছের চাহিদা ৩৬,৭৫৫ মেট্রিক টন। এই চাহিদার বিপরীতে হাকালুকিসহ হাইল হাওর, কাউয়াদিঘি হাওর থেকেই মাছের বড় যোগান আসে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে হাওর-বাঁওড়ে, পুকুরে। খাল বিলে এবার পানি নেই। তাই মাছের উপস্থিতি কমেছে।