এসবিএন ডেস্ক. ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের নির্বিচারে বিমান হামলা চলছেই। আজ শনিবার এই হামলা পঞ্চম দিনে পড়েছে। এদিন আরও ১৬ ফিলিস্তিনি নিহত হন। এ নিয়ে পাঁচ দিনে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১২১ জনে। এদের মধ্যে বহু নারী ও শিশু রয়েছে। জাতিসংঘ বলেছে, নিহত ব্যক্তিদের তিন-চতুর্থাংশের বেশিই বেসামরিক নাগরিক। খবর এএফপি ও বিবিসির।এদিকে অব্যাহত বিমান হামলার মধ্যে এবার স্থল অভিযানের জোর প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসরায়েল। শুক্রবার দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গাজায় হামলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। গাজা ছাড়া পশ্চিম তীরেও হামলার খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ গতকাল জানায়, বিমান হামলা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি এবার সম্ভাব্য স্থল হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে তারা। এর অংশ হিসেবে সীমান্তে ট্যাংক ও গোলন্দাজ বাহিনীর সমাবেশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে মন্ত্রিসভা অনুমোদিত ৪০ হাজার সংরক্ষিত সেনার ৩৩ হাজার সদস্য পাঠানো হয়েছে।
গতকাল সকালে সীমান্ত অভিমুখে আরও সশস্ত্র যান দেখা গেছে। সম্ভাব্য স্থল অভিযানের ব্যাপারে আজ রোববার ইসরায়েল একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতে পারে বলে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আভিগদর লিবারম্যান জানান। শুক্রবার গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে আমরা (অভিযানের) প্রথম ধাপ...বিমান হামলায় রয়েছি। আমার আশা, পরবর্তী ধাপ নিয়ে আমরা কাল (গতকাল শনিবার) বা এর পরদিন (আজ) একটা সিদ্ধান্ত নিতে পারব।’ গতকালও গাজায় বিভিন্ন লক্ষ্যবস্তুতে ব্যাপক বোমাবর্ষণ করে ইসরায়েল। জবাবে ফিলিস্তিনের হামাস অন্যান্য দিনের মতোই ইসরায়েলের অভ্যন্তরে রকেট নিক্ষেপ করে। রকেট হামলায় দুই ইসরায়েলি গুরুতর আহত হয় বলে খবর পাওয়া গেছে।
ইসরায়েলের দাবি, গতকাল তারা ‘৬০টি সন্ত্রাসী লক্ষ্যবস্তুতে’ বিমান হামলা চালিয়েছে। গত পাঁচ দিনে হামলা চালানো হয়েছে সর্বসাকল্যে এক হাজার ১৬০ বার। আর হামাস প্রথম চার দিনে ছুড়েছে ৬৮৯টি রকেট। গতকাল তাদের ছোড়া দুটি রকেট ইসরায়েলের বীরসেবা এলাকায় আঘাত হানে।
ইসরায়েল দাবি করেছে, তাদের হামলার লক্ষ্যবস্তু হলো, হামাসের সশস্ত্র সদস্য, তাঁদের ব্যবহৃত ঘাঁটি ও সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বাসভবন। বিমান হামলায় যারা নিহত হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছে ‘কয়েক ডজন সন্ত্রাসী’। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়, ‘অপারেশন প্রোটেকটিভ এজ’ নামে ইসরায়েলের এই অভিযানে পাঁচ দিনে প্রায় ১২১ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আহত হয়েছে প্রায় ৭৫০ জন। হতাহত ব্যক্তিদের অধিকাংশই নিরীহ বেসামরিক নাগরিক।জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক সমন্বয় অফিসও এক পরিসংখ্যানে জানায়, গাজায় এ পর্যন্ত নিহত ব্যক্তিদের ৭৭ শতাংশ বেসামরিক নাগরিক। ফিলিস্তিনি চিকিৎসা কর্মকর্তারা বলেন, শুক্রবার দিবাগত রাতে গাজার বেইত লাহিয়া শহরে ইসরায়েলি বিমানের গোলা প্রতিবন্ধীদের পুনর্বাসনকেন্দ্র আঘাত হানে। গোলায় এ ভবনে চিকিৎসাধীন তিন কিশোরের দুজন প্রাণ হারায়।স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, জাবালিয়া উদ্বাস্তু শিবিরে হামলায় গতকাল নিহত হয়েছেন তিনজন। এঁদের মধ্যে একজন ইসলামিক জিহাদের কর্মী। চিকিৎসকেরা জানান, বিমান হামলায় গতকাল নিহত হন ১৬ জন। হামাস বলেছে, গতকাল তারা ইসরায়েলের আশদদ শহরে চারটি রকেট ছুড়েছে।ব্যর্থ যুদ্ধবিরতির চেষ্টা: ফিলিস্তিনে চলমান ইসরায়েলি হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। হামলা বন্ধে বিভিন্ন পর্যায়ে মধ্যস্থতারও চেষ্টা চলছে। কিন্তু হামলা বন্ধে বা দুই পক্ষের মধ্যে যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় এখনো কোনো সফলতা আসেনি। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠিত যুদ্ধবিরতির অন্যতম মধ্যস্থতাকারী মিসর এ কথা জানিয়েছে।