এসবিএন ডেস্ক প্রথম পর্বের বাধা কোনোমতে পেরুতে পারলেই জার্মান হয়ে ওঠে ভয়ংকর, বিশ্বকাপ ইতিহাসে এটাই যেনো তাদের পরিচয়। ২০০২ বিশ্বকাপ থেকে সেই যে শুরু, ২০০৬ ইং বলুন কিংবা ২০১০ বিশ্বকাপের কোনো আসরে সেমিফাইনালের আগে বিদায় নিতে হয়নি জার্মানিকে। ৩ বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন এবার ওই রেকর্ডকে আরো উঁচুতে নিয়ে গেল। ফ্রান্সকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপের টানা চতুর্থ আসরে সেমিফাইনলের টিকিট পেল জার্মানি। হেডের সাহায্যে গোলের রেকর্ডটা বিশ্বকাপে তাদেরই। কর্নার কিংবা ফ্রি কিক-সেট পিস পেলেই ভয়ংকর জার্মানি। ২০০২ বিশ্বকাপ থেকে সেই যে শুরু, গতকাল ম্যাট হুমেলসের দর্শনীয় হেড এ জার্মানির জয়ে হেডে গোলের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১৫তে! হেডে গোল-এ এই সময়ে তাদের ধারে-কাছে নেই কেউ। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর হেডে গোলের সংখ্যা সেখানে মাত্র ৮টি!
ইতোপূর্বে ২২টি মুখোমুখি লড়াইয়ে জার্মান ছিল ৭-১০-এ পিছিয়ে। তবে গতকাল ফোর্তেলেজায় দু’দলের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচে পাওয়া যায়নি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমেজ। নকআউট রাউন্ডের সর্বশেষ ম্যাচে আলজেরিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোলে কস্টার্জিত জয়টাই যেন প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছে জার্মানিদের। খেলার ১২ মিনিটে গোল দিয়ে সেই গোল ধরে রাখতে নিজেদের মধ্যে বলের আদান-প্রদানে ফ্রান্সকে বিদায়ের ছকটা কি নিখুঁতভাবেই না করেছেন জার্মানি কোচ জোয়াকিম লো।খেলার ধারার বিপরীতেই গোলটি পেয়েছে জার্মানি। খেলার ১২ মিনিটের মাথায় ফ্রান্সের সীমানার ঠিক মাঝামাঝি অবস্থানে বাঁ প্রান্ত থেকে টনি ত্রুজের ফ্রি কিকটি ঠিক ক্রস সাদৃশ্যই যেন। উদ্দেশ্যটা ছিল সতীর্থ কারো হেড-এর সুযোগ তৈরি করে দেয়া। সেই ফ্রি কিক থেকে ডিফেন্ডার ম্যাট হুমেলস প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারের মার্কিং এড়িয়ে নিখুঁত হেডে জার্মানিদের ভাসিয়েছেন উৎসবে (১-০)। বিশ্বকাপে নিজের প্রথম গোলটিই হয়ে গেল মহামূল্যবান জয়। এক গোলে দলের জয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কারে ভূষিত হলেন এই ডিফেন্ডার।
করিম বেনজামাকেন্দ্রিক ফ্রান্সের আক্রমণভাগ নিষ্প্রভ করে দিয়েছে এই ম্যাচে জার্মান ডিফেন্ডাররা। পগবাও মার্কিং এড়িয়ে নিজেকে শো করাতে পারেননি। আক্রমণভাগের প্রাণ গ্রিয়েজমানও কড়া মার্কিং এড়াতে পারেননি। তারপরও জার্মানির গোলপোস্ট লক্ষ্য করে ৯টি শট নিয়েছে ফ্রান্স। যার মধ্যে ৮টিই জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার করেছেন সেভ! ৩৩ মিনিটের মাথায় সমতার সুযোগ হারান ভালবুয়েনা, গোলপোস্টের খুব কাছাকাছি থেকে তার নেয়া হাফভলি শেষ মুহূর্তে ডাইভ দিয়ে বিপদমুক্ত করেছেন জার্মান গোলরক্ষক। খেলার অন্তিম বাঁশি বেজে ওঠার মাত্র ২০ সেকেন্ড আগে একক কারিশমায় বিপজ্জনকভাবে ডি-বক্সে ঢুকে কোনাকুনি শটে গোলরক্ষকের মাথার উপর দিয়ে অবধারিত গোল ভেবে যে শটটি নিয়েছিলেন ফরাসি তারকা করিম বেনজামা, তা শূন্যে লাফিয়ে জার্মান গোলরক্ষক করেন বিপদমুক্ত! খেলার সঙ্গে ভাগ্যটাও যে চাই, সেটাই যে ছিল গতকাল জার্মানির। পরিচ্ছন্ন খেলে দ্বিতীয় রাউন্ডে নাইজেরিয়াকে বিধ্বস্ত করে (২-০) ৯৮’র সুখস্মৃতি ফিরে পাবার স্বপ্ন দেখেছিল ফ্রান্স, জার্মানিতে এসেই ধাক্কাটা খেতে হলো, নিতে হলো বিশ্বকাপ থেকে বিদায়।
দুর্দান্ত সব সেভ এ জার্মানিকে সেমিফাইনালে উঠিয়ে আনার কৃতিত্বটা অবশ্য দিতে হচ্ছে ন্যুয়ারকে। ক্যারিয়ারের ৫০তম আন্তর্জাতিক ম্যাচটা স্মরণীয় হয়ে রইল জার্মান গোলরক্ষক ম্যানুয়েল ন্যুয়ারের।