মাসুম আহমদ :
দিনে দিনে আমি একজন একা এবং নস্টালজিক টাইপের মানুষ হয়ে উঠছি। ইদনিং বেশীর ভাগ সময়ই নিজেকে নিয়ে খুব ভাবি, আর মাঝেমাঝে চোখ বন্ধ করে জীবনের সুন্দর স্মৃতিগুলোর বায়স্কোপ দেখি। সেই বায়োস্কুপের পর্দায় জীবনের শত শত স্মৃতির সাথে-সাথে আমার পুরানো সে সব ঈদের স্মৃতিও ভেসে উঠে।
এখনও মনে আছে দল বেঁধে সন্ধ্যার পর ঈদের চাঁদ দেখতে যেতাম। কে কার আগে চাঁদ দেখবো সেই প্রতিযোগিতায় পলক না ফেলে পশ্চিমের আকাশে চেয়ে থাকতাম। কোন কারণে চাঁদ দেখা না গেলে মন খারাপ করে ঘরে ফিরতাম, আর চাঁদ দেখা গেলেতো আমাদের আনন্দ কে দেখে! হৈচৈ হই-হুল্লোড় করে বাড়ি ফিরতাম। খুশিতে আর টেনশনে রাতে ঘুম হত না। টেনশনটা ছিল কে কার আগে সকালে পুকুরে গোসলে নামবো। খুব ভোরে দল বেঁধে বাড়ির বড় পুকুরে গোসল করে, নতুন কাপড় পড়ে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যেতাম। নামাজ পড়া শেষে বাড়ি ফিরে বিভিন্ন রকমের পিঠা খাওয়া হত। পাড়া প্রতিবেশীদের ঘরে গিয়ে আবারও খাবার। দুপুরের দিকে শুরু হত মার্বেল খেলা। ঈদের দিন কার সাথে মার্বেল খেলবো সেটা কিন্তু আগে থেকে ঠিক করা থাকতো। সময় এবং জায়গা মত গেলেই মার্বেল খেলার সাথীকে পেয়ে যেতাম। বিকেলে থাকতো ফুটবল ইভেন্ট, পাশের গ্রামের সাথে, সেটাও আগে থেকে ঠিক করা থাকতো। যে ঈদে বিকেলে ফুটবল খেলা না থাকতো, সে ঈদে সাদাকালো টিভিতে বাংলা সিনেমা দেখতাম।
তারপর বড় হলাম, শহরে চলে গেলাম। বন্ধু-বান্ধব হল, চাহিদা, টেস্ট, আবেগ সব বদলে গেল। সাথে ঈদের আনন্দের ধরণও বদলে গেল। সন্ধ্যা পর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে শপিং করা ছিল ঈদের কিছুদিন আগের নিয়মিত রুটিন। খুব আয়োজন করে খুব কাছে বন্ধুদের ঈদ কার্ড দিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতাম। ঈদের আগের রাতে ফাইনাল শপিং করে সেলুনে গিয়ে চুল কেটে বাসায় ফিরতে ফিরতে মাঝরাত পেরিয়ে যেত। সকালে উঠে নামাজ পড়ে আসার পর লাচ্চি, সেমাই, পিঠা, পায়েস, কোর্মা, পোলাও খেতাম। খাওয়া দাওয়ার পরে বসতাম গান শুনতে, ঈদে বের হইয়া যত এলবাম কিনতাম একে একে সব শুনতাম। গান শুনে শুনে সব ঈদ মেসেজের রিপ্লাই করতাম। বিকেলে বের হতাম বন্ধুদের সাথে মোটর সাইকেলে চক্করে। চক্করে শহরের বাইরে কোথাও যাওয়া হত। সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসতাম। ফিরে এসে একে একে সন বন্ধুদের ঘরে দলবেঁধে যেতাম। রাতে বাসায় ফিরে ঈদের অনুষ্ঠান দেখতে বসতাম।
তারপর চলে আসলাম বিদেশে। বিদেশে আসার পর ঈদটা কেমন পানসে হয়ে গেছে। কোনদিকে ঈদ আসে আর কোনদিকে ঈদ যায় সেটা ভালো করে বুঝতেই পারিনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঈদের নামাজ পড়তে যাই। তারপর সারাদিন বাসায় টিভি দেখেই কেটে যায়। মাঝেমাঝে ঈদের দিনও কাজ থাকে, তাই ঈদের জামাত পড়ে এসে কাজে চলে যেতে হয়। শনিবার বা রবিবারে ঈদ হলে পরিচিত দুই একজন বাসায় বেড়াতে আসেন, আমরাও বেড়াতে যাই। এখন আর কাউকে ঈদ কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয়না। সবাইকে ভার্চুয়ালি ফেইসবুক, হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয়। তবে বাংলাদেশের ঈদ মিস করি, ঈদগাহে নামাজ পড়ার পর কোলাকোলি মিস করি, খাবার-দাবার মিস করি, বন্ধুদের সাথে শপিং মিস করি। তারপরেও কেন জানি উদগ্রীব হয়ে বসে থাকি কখন ঈদ আসবে। তারপরেও অপেক্ষায় থাকি কখন বাংলা টিভিতে শুনবো কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই কালজয়ী ঈদের গান - ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
ঈদের মত উৎসবগুলোর কারণেই আমাদের জীবনটা মাঝেমাঝে সুন্দর হয়ে উঠে। তাই আমাদের জীবনে ঈদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সবার ঈদ যেন কাটে খুব আনন্দে, খুব মজায়, খুব খুশিতে, খুব ফুর্তিতে! যে যে জায়গায় আছেন সে জায়গায়ই নিজের মত করে উপভোগ করুন ঈদ আনন্দ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা । ঈদ মোবারক।
লেখক: কবি, ব্লগার।
নিউইয়র্ক, ইউএসএ।
দিনে দিনে আমি একজন একা এবং নস্টালজিক টাইপের মানুষ হয়ে উঠছি। ইদনিং বেশীর ভাগ সময়ই নিজেকে নিয়ে খুব ভাবি, আর মাঝেমাঝে চোখ বন্ধ করে জীবনের সুন্দর স্মৃতিগুলোর বায়স্কোপ দেখি। সেই বায়োস্কুপের পর্দায় জীবনের শত শত স্মৃতির সাথে-সাথে আমার পুরানো সে সব ঈদের স্মৃতিও ভেসে উঠে।
এখনও মনে আছে দল বেঁধে সন্ধ্যার পর ঈদের চাঁদ দেখতে যেতাম। কে কার আগে চাঁদ দেখবো সেই প্রতিযোগিতায় পলক না ফেলে পশ্চিমের আকাশে চেয়ে থাকতাম। কোন কারণে চাঁদ দেখা না গেলে মন খারাপ করে ঘরে ফিরতাম, আর চাঁদ দেখা গেলেতো আমাদের আনন্দ কে দেখে! হৈচৈ হই-হুল্লোড় করে বাড়ি ফিরতাম। খুশিতে আর টেনশনে রাতে ঘুম হত না। টেনশনটা ছিল কে কার আগে সকালে পুকুরে গোসলে নামবো। খুব ভোরে দল বেঁধে বাড়ির বড় পুকুরে গোসল করে, নতুন কাপড় পড়ে ঈদগাহে নামাজ পড়তে যেতাম। নামাজ পড়া শেষে বাড়ি ফিরে বিভিন্ন রকমের পিঠা খাওয়া হত। পাড়া প্রতিবেশীদের ঘরে গিয়ে আবারও খাবার। দুপুরের দিকে শুরু হত মার্বেল খেলা। ঈদের দিন কার সাথে মার্বেল খেলবো সেটা কিন্তু আগে থেকে ঠিক করা থাকতো। সময় এবং জায়গা মত গেলেই মার্বেল খেলার সাথীকে পেয়ে যেতাম। বিকেলে থাকতো ফুটবল ইভেন্ট, পাশের গ্রামের সাথে, সেটাও আগে থেকে ঠিক করা থাকতো। যে ঈদে বিকেলে ফুটবল খেলা না থাকতো, সে ঈদে সাদাকালো টিভিতে বাংলা সিনেমা দেখতাম।
তারপর বড় হলাম, শহরে চলে গেলাম। বন্ধু-বান্ধব হল, চাহিদা, টেস্ট, আবেগ সব বদলে গেল। সাথে ঈদের আনন্দের ধরণও বদলে গেল। সন্ধ্যা পর বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে শপিং করা ছিল ঈদের কিছুদিন আগের নিয়মিত রুটিন। খুব আয়োজন করে খুব কাছে বন্ধুদের ঈদ কার্ড দিয়ে ঈদ শুভেচ্ছা জানাতাম। ঈদের আগের রাতে ফাইনাল শপিং করে সেলুনে গিয়ে চুল কেটে বাসায় ফিরতে ফিরতে মাঝরাত পেরিয়ে যেত। সকালে উঠে নামাজ পড়ে আসার পর লাচ্চি, সেমাই, পিঠা, পায়েস, কোর্মা, পোলাও খেতাম। খাওয়া দাওয়ার পরে বসতাম গান শুনতে, ঈদে বের হইয়া যত এলবাম কিনতাম একে একে সব শুনতাম। গান শুনে শুনে সব ঈদ মেসেজের রিপ্লাই করতাম। বিকেলে বের হতাম বন্ধুদের সাথে মোটর সাইকেলে চক্করে। চক্করে শহরের বাইরে কোথাও যাওয়া হত। সন্ধ্যার মধ্যেই ফিরে আসতাম। ফিরে এসে একে একে সন বন্ধুদের ঘরে দলবেঁধে যেতাম। রাতে বাসায় ফিরে ঈদের অনুষ্ঠান দেখতে বসতাম।
তারপর চলে আসলাম বিদেশে। বিদেশে আসার পর ঈদটা কেমন পানসে হয়ে গেছে। কোনদিকে ঈদ আসে আর কোনদিকে ঈদ যায় সেটা ভালো করে বুঝতেই পারিনা। সকালে ঘুম থেকে উঠে ঈদের নামাজ পড়তে যাই। তারপর সারাদিন বাসায় টিভি দেখেই কেটে যায়। মাঝেমাঝে ঈদের দিনও কাজ থাকে, তাই ঈদের জামাত পড়ে এসে কাজে চলে যেতে হয়। শনিবার বা রবিবারে ঈদ হলে পরিচিত দুই একজন বাসায় বেড়াতে আসেন, আমরাও বেড়াতে যাই। এখন আর কাউকে ঈদ কার্ডের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয়না। সবাইকে ভার্চুয়ালি ফেইসবুক, হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানানো হয়। তবে বাংলাদেশের ঈদ মিস করি, ঈদগাহে নামাজ পড়ার পর কোলাকোলি মিস করি, খাবার-দাবার মিস করি, বন্ধুদের সাথে শপিং মিস করি। তারপরেও কেন জানি উদগ্রীব হয়ে বসে থাকি কখন ঈদ আসবে। তারপরেও অপেক্ষায় থাকি কখন বাংলা টিভিতে শুনবো কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই কালজয়ী ঈদের গান - ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ।
ঈদের মত উৎসবগুলোর কারণেই আমাদের জীবনটা মাঝেমাঝে সুন্দর হয়ে উঠে। তাই আমাদের জীবনে ঈদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। সবার ঈদ যেন কাটে খুব আনন্দে, খুব মজায়, খুব খুশিতে, খুব ফুর্তিতে! যে যে জায়গায় আছেন সে জায়গায়ই নিজের মত করে উপভোগ করুন ঈদ আনন্দ। সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা । ঈদ মোবারক।
লেখক: কবি, ব্লগার।
নিউইয়র্ক, ইউএসএ।