Latest News

সেমিতে আর্জেন্টিনা



এসবিএন ডেস্ক 

আগের ম্যাচে আনহেল দি মারিয়া, এবার গনসালো হিগুয়েইন। আর্জেন্টিনার গোলদাতায় পরিবর্তন আসছে ঠিকই, তবে জয়ের কারিগর থাকছেন সেই একজনই। সেই লিওনেল মেসি। কাল তাঁর গোলমুখ খুলে দেওয়া এক আক্রমণের পরিণতিতে হিগুয়েইন গোল করলে বেলজিয়ামের বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে জেতে আর্জেন্টিনা। তাতে দূর হয়েছে ২৪ বছরের আক্ষেপ। সমান্তরালে ২৮ বছরের হাহাকার ঘোচানোর পথেও আরেকটু এগিয়ে গেল তারা!
দুই যুগ ধরে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালেই ওঠে না আর্জেন্টিনা। কালকের কোয়ার্টার ফাইনাল জয়ে সেই ন্যূনতম লক্ষ্য অর্জিত হলো। আর বড় লক্ষ্য তো ’৮৬-র পর আবার বিশ্বকাপ জেতা। মেসির সঙ্গে সঙ্গে পুরো দল যেভাবে আস্তে আস্তে স্বরূপে ফিরছে, তাতে আর্জেন্টিনার স্বপ্নে রং লাগছে প্রবলভাবে।
২৪ বছর আগে ডিয়েগো ম্যারাডোনার গোলেই আর্জেন্টিনা পার হয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনাল। এবারের চিত্রনাট্যটা একটু ভিন্নভাবে লিখছেন তাঁর উত্তরসূরি। মেসি নিজে গোল করে গ্রুপ পর্ব পার করে দিয়ে এখন যেন অন্যদের দিয়েই গোলের কাজটা করতে চাইছেন। প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ কারিগরের ভূমিকায়। আগের ম্যাচের মতো কোয়ার্টার ফাইনালেও সেভাবে শুরুতে গোল পেয়ে গেছে আর্জেন্টিনা। মুখ্য কারিগর অবশ্যই লিওনেল মেসি, মাঝমাঠ থেকে তাঁর চমৎকার পাসটি আনহেল দি মারিয়ার পা ঘুরে যায় বেলজিয়ামের ডি-বক্সে ঢুকতেই গনসালো হিগুয়েইন কোনো সময় নেননি। এই আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ডের ভলি থিবো কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিয়ে পৌঁছে যায় বেলজিয়ামের জালে।
বিশ্বকাপের পঞ্চম ম্যাচে গোলের খাতা খোলার পর নাপোলির এই ফরোয়ার্ড দুর্দান্ত খেলেছেন পুরো ম্যাচ। ৫৫ মিনিটে তাঁর একক চেষ্টা সফল হলে আসরের অন্যতম সেরা গোলটিও পেয়ে যেতেন। মাঝমাঠ থেকে বলটা নিয়ে হিগুয়েইন দারুণভাবে বেলজিয়ামের পেনাল্টি বক্সে ভিনসেন্ট কম্পানিকে ছিটকে ফেলে শট নিলেও ঠেকিয়ে দেয় ক্রসবার। সেন্টার ফরোয়ার্ড ভালো খেলেছেন, গোলে ফিরেছেন- এটা অধিনায়কের জন্য দারুণ স্বস্তির ব্যাপার। সব সময় তাঁর দিকে তাকিয়ে থাকতে হয় না। তাতে বরং ‘খুদে জাদুকরের’ সৃষ্টিশীলতা বাড়ে বৈ কমে না। ২৯ মিনিটে যেমন তাঁর পা থেকে বেরিয়েছে দুর্দান্ত এক লং বল। দি মারিয়ার সামনে অনেক ফাঁকা জায়গায় বল পায়ে ঢুকতে পারতেন, কিন্তু ওয়ান টু ওয়ানে ভিনসেন্ট কম্পানির গায়ে শট মেরে নষ্ট করেছেন দুর্দান্ত সুযোগটা। এর পরপরই দি মারিয়ার কী যে হলো আর মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেন না, দু-দুবার চেষ্টা করেও পারেননি। অগত্যা ৩৩ মিনিটে তাঁর বদলি হয়ে নামেন এনজো পেরেজ। এটাই ভয়ের ছিল আর্জেন্টিনার জন্য, রিয়াল মাদ্রিদের অসাধারণ পারফরমার ওঠে যাওয়ার মাঠের আধিপত্য খর্ব হবে। ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ হয়ে যাবে বেলজিয়ামের। বেলজিয়াম এই সুযোগটাও নিতে পারেনি। শুরু থেকে যেমন অগোছালো, শেষের মিনিট পনেরো বাদ দিলে সেই ধারায় খেলে গেছে। সোনালি প্রজন্মের পায়ে সোনা ফলানোর মতো তেমন কিছুই দেখা যায়নি। সমর্থকদের খুবই হতাশ করেছেন এডেন হ্যাজার্ড, ইংল্যান্ড পিএফএ-এর বর্ষসেরা তরুণ ফুটবলারটির পায়ে ‘বেলজিয়ামের মেসি’ হওয়ার ছিটেফোঁটা দেখা যায়নি। পুরো প্রথমার্ধে বলার মতো আক্রমণ হলো, বিরতিতে যাওয়ার আগে ৪২ মিনিটে বার্তেনগেনের ক্রসে মিরাসের হেড পোস্টে বাতাস লাগিয়ে গিয়েছিল।
বিরতির পরও যে খুব উন্নতি হয়েছে, তা নয়। ৫৯ মিনিটে রোমেলু লুকাকু নামার পরও ম্যাচের আধিপত্যের হাত বদল হয়নি। কারণ এই ম্যাচে আলবেসেলেস্তেরা দলগত শক্তির প্রদর্শনী করেছে। ৬১ মিনিটে বদলি ফেলানির এক হেড ক্রসবার ঘেঁষে বাইরে চলে যায়। শেষের ২০ মিনিট অবশ্য তারা ভীষণ চাপে রেখেছিল আর্জেন্টিনাকে। কেবল এই সময়টুকু তারাই খেলেছে, দুই প্রান্ত দিয়ে মুহু মুহুর্মুহু আক্রমণ করেও টলাতে পারেনি আর্জেন্টাইন ডিফেন্সকে। এই সময় অলআউট অ্যাটাকে উঠে বেলজিয়াম উল্টো আরেকটি গোল খাওয়ার শঙ্কায় পড়েছিল। তাও আবার মেসির পায়ে বল, মাঝমাঠ থেকে ফাঁকা সবুজ প্রান্ত পেরিয়ে বলটা প্লেসিং করেও কোর্তোয়াকে ফাঁকি দিতে পারেননি। এবারও পারেননি অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের গোলরক্ষককে ফাঁকি দিতে! গত মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে সাতবারের সাক্ষাতে একবারও এই বেলজিয়ান গোলরক্ষককে ফাঁকি দিয়ে বল জালে পাঠাতে পারেননি। বিশ্বকাপে এসে আর্জেন্টিনার জার্সিতেও তা পারলেন না।
তাতে কী, একক জাদুর প্রদর্শনীতে মেসি সঙ্গী-সাথী যে পাচ্ছেন অবশেষে! এই আনন্দ নিয়েই কাল বেলজিয়ামের বিপক্ষে ম্যাচ শেষ করেছেন তিনি। আর গোলে-গোলে ঐশ্বরিক জাদুর ডালা আবার মেলে ধরার জন্য সেমিফাইনাল-ফাইনাল তো মেসির সামনেই পড়ে রয়েছে!

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com