আন্দোলনের শুরুতেই বিএনপি সারা দেশে বিক্ষোভ, পরে ইস্যুভিত্তিক দাবি বাস্তবায়নের আল্টিমেটাম। হরতাল-অবরোধ এবং সর্বশেষ অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পরিকল্পনা রয়েছে বলে বিএনপির চেয়ারপার্সনের ঘনিষ্টজনদের কাছ থেকে জানা গেছে। এ পরিকল্পনা সর্ম্পকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, যেহেতু চেয়ারপারসন দলের পুনর্গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন সেহেতু এখন পুনর্গঠন না হলে ব্যর্থ নেতাদের অধীনে কেউ আন্দোলনে যাবে না। সেক্ষেত্রে গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের আগে আন্দোলন যেমন ব্যর্থ হয়েছিলো তেমনি আগামী দিনের আন্দোলনও ব্যর্থ হতে পারে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের পুনর্গঠনের ঘোষনা দিয়েছিলেন। এর অংশ হিসেবে শ্রমিক দলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। গত ১২ এপ্রিল রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউটে শ্রমিক দল, ঢাকা মহানগরীর কাউন্সিল হয়। এরপর ১৯ ও ২০ এপ্রিল একই স্থানে শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে গত এপ্রিল মাসে সৈয়দপুর, পঞ্চগড় ও নীলফামারী, নেত্রকোনা, সিলেট, শেরপুর, নওগাঁ, ব্রাম্মণবাড়ীয় জেলার কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। তাদেরকে তিন মাসের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে জেলার নতুন কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়। এর বাইরে মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নতুন কমিটি ঘোষণার কথা শোনা গিয়েছিলো। কিন্তু এই তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের পুনর্গঠন ঘোষণাতেই আটকে আছে।
জানা গেছে, তবে দলের হাইকমান্ডের এমন মনোভাব জানার পরও মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের নেতৃত্বে আসতে যারা আগ্রহী তারা হাল ছেড়ে দেননি। ভেতরে ভেতরে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ, লবিং-গ্রুপিং চালিয়ে যাচ্ছেন। ছাত্রদলের একটি অংশ নতুন কমিটির দাবিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান চালিয়েছে। তারা চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গিয়ে তাদের দাবির কথা চেয়ারপারসনকে জানিয়েছেন। এখন বিভিন্ন মাধ্যমে চেয়ারপারসনকে বিষয়টির গুরুত্ববোঝানোর চেষ্টা করছেন। তাদের বক্তব্য-যেহেতু চেয়ারপারসন ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্বকে নিজেই ব্যর্থ বলেছেন সেহেতু এখন আর এই নেতৃত্বকে কেউ মানবে না। বর্তমান নেতৃত্বের অধীনে কেউ আন্দোলনেও নামবেন না। এই অবস্থায় আন্দোলনে গেলে আন্দোলন আবারও ব্যর্থ হবে। ব্যর্থ নেতাদের ডাকে এখনই ছাত্রদলের অনেক নেতাই কার্যালয়ের বৈঠকে যোগ দেননা। যোগ না দেওয়া নেতাদের সংখ্যাই বেশী। এতে অবশ্য হতাশ ছাত্রদলের বর্তমান নেতৃত্ব।
একই অবস্থা মহানগর বিএনপির নতুন নেতৃত্বে আসতে আগ্রহী নেতাদেরও। তবে প্রকাশ্যে তারা মুখ খুলছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহানগর বিএনপির এক নেতা জানান, বতর্মান মহানগর বিএনপির নেতারা ব্যর্থ এটি চেয়ারপারসন নিজে বলেছেন। তারা নিজেরাও ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে পদত্যাগের আগ্রহের কথা চেয়ারপারসনকে জানিয়েছেন। এই অবস্থায় বর্তমান ব্যর্থ নেতৃত্বের অধীনে কেউ আন্দোলনে যাবেন না। যুবদলের অবস্থাও একই।
মহানগর বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের যারা নতুন নেতৃত্ব পেতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন তাদের বিষয়ে চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ঠ ঐ সূত্র জানায়, দলের অধিকাংশ নেতাই তো তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। এই সংখ্যাটাই বেশী। বেশী সংখ্যাক নেতাকে অসন্তুষ্ট করে আবার আগামী দিনের আন্দোলন সংগ্রাম জোরদার করা যাবে না। তাছাড়া একবার আন্দোলন সংগ্রাম শুরু হয়ে গেলে দলের প্রকৃত কোনো নেতাকর্মী ঘরে বসে থাকতে পারবে না।