Latest News

বিশ্বে অশান্তি উসকে দিচ্ছে কারা?



ফকির ইলিয়াস.গাজা উপত্যকার মানুষ এবারের ঈদুল ফিতর কিভাবে পালন করেছেন- তা কি জানতে চেয়েছেন, বিশ্বের মানবতাবাদীরা? তারা কি দেখতে গিয়েছিলেন, সেখানের হাজারও নারী-শিশু কেমন আছেন? মাঝে মাঝে আমার খুব দ্রোহী হতে ইচ্ছে করে। আমি মার্কিনি পাসপোর্ট নিয়েছি। তার অর্থ এই নয়, আমি অন্যায়ভাবে মার্কিনি রক্তহোলি খেলা পর্বের সমালোচনা করবো না। কিংবা করতে পারবো না। নাগরিক হিসেবে আমার সেই স্বাধীনতা মার্কিনি সংবিধানই দিয়েছে। বেশি তত্ত্বকথা বলার কিংবা শোনার মানসিকতাও আমার কোনোদিনই ছিল না। অবাক লাগে, আজ পাশ্চাত্য তো বটেই, মধ্যপ্রাচ্যের রাজা উজিররা মুখে কুলুপ এঁটে বসেছেন। এই যে মুসলিম নিধন চলছে, এই যে নির্মম গণহত্যা চলছে, এতে কি তাদের কিছুই করার নেই? সংবাদটি খুবই মর্মান্তিক। ফিলিস্তিনি নারীদের ধর্ষণ করে এ অঞ্চলের শত্রুদেরভয় দেখাতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীকে পরামর্শ দিয়েছেন দেশটির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। ওই বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপকের এমন পরামর্শ সংবাদ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। এমন বিতর্কিত পরামর্শ দিয়ে ফিলিস্তিন ও অঞ্চলটির প্রতি সংহতি পোষণকারীদের কাছে এই মুহূর্তে সবচেয়ে নিন্দার পাত্র হওয়া ব্যক্তিটি হলেন মধ্যপ্রাচ্য গবেষক ও বার-আইলান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. মোরদেচাই কেদার। অধ্যাপক কেদার বলেন, ‘একটি পদ্ধতিই সন্ত্রাসীদের ভয় দেখাতে পারে, যেমন তাদের শিশুদের অপহরণ করে হত্যা করা এবং তাদের মা-বোনকে ধর্ষণ করা। তিনি বলেন, ‘যদি সন্ত্রাসীদের বলা হয়, তোমরা যদি ট্রিগারে আঙুল চাপো অথবা আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটাও, তবে তোমাদের মা-বোনকে ধর্ষণ করা হবে। তাহলেই ওরা ভয় পেয়ে যাবে।একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষকের এমন মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খোদ ইসরায়েলি সুশীল সমাজও। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তার তীব্র সমালোচনা চলছে। এর আগেও এ ধরনের বেশ কিছু বিতর্কিত মন্তব্য করে কড়া সমালোচনায় পড়েছিলেন কেদার। এদিকে ক্রমশ প্রকৃত সত্যই বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। তিন ইসরায়েলি কিশোর অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় হামাস জড়িত নয়। ইতোমধ্যে ইসরায়েলি পুলিশের মুখপাত্র মিকি রোজেনফিল্ড এ কথা স্বীকার করেছেন। অথচ তিন কিশোরকে হামাস অপহরণের পর হত্যা করেছে বলে দাবি করে গেলো প্রায় চার সপ্তাহ ধরে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল। মানবতাবিরোধী এ আগ্রাসনে হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি মুসলমান নিহত হয়েছে। যাদের বেশিরভাগই শিশু ও নারী। মিকি রোজেনফিল্ড বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘তিন ইসরায়েলি কিশোরকে অপহরণের নির্দেশ হামাস দেয়নি। যারা এ তিন কিশোরকে হত্যা করেছে তাদের সঙ্গে হামাসের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা নিজেরাই এককভাবে এ কাজ করেছে। গত ১২ জুন ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীর থেকে ইসরায়েলের তিন কিশোর নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে হামাস জড়িত অভিযোগ করেছিল। হামাস একাধিকবার ওই অভিযোগ নাকচ করে দেয়। কিশোর অপহরণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদ আবু খুদায়ির নামে ১৬ বছরের এক কিশোরকে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করে ইসরায়েল।
এছাড়া হামাস সদস্য ও ফিলিস্তিনি সংসদের স্পিকারসহ ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ব্যাপক ধরপাকড় এবং অপহরণও করে ইসরায়েলি সেনারা। ফিলিস্তিনি শিশুরাও এ গ্রেপ্তারের হাত থেকে রক্ষা পায়নি। আন্তর্জাতিক আইন উপেক্ষা করে ইসরায়েল আগ্রাসন চালালেও ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের কোনো কার্যকর উদ্যোগ এখন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে না। যুদ্ধের এই আগুনে হাঁপিয়ে উঠছে ইসরায়েলিরাও। অস্ত্রবিরতির দাবিতে ইসরায়েলে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেছে। রাজধানী তেলআবিবের রবিন স্কয়ারে জড়ো হওয়া এসব মানুষ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে স্থায়ী শান্তির আহ্বান জানায়। এদিকে গাজা থেকে রকেট হামলা হতে পারে এই আশঙ্কায় তেলআবিবে সব ধরনের মিছিল সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কিন্তু ওই সময় চার ঘণ্টার অস্ত্রবিরতি চলায় মানুষ রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করে। তারপরও মিছিল থেকে চারজনকে আটক করে পুলিশ। তিন হাজার মানুষ রবিন স্কয়ারে নেমে আসে। ওই সময় গুটিকয়েক মানুষ ইসরায়েলের পক্ষে একটি মিছিল বের করে। প্রতিবাদকারীরা তাদের ফেসবুক পাতায় বলে, এই যুদ্ধ উভয়পক্ষেই ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাচ্ছে এবং ধ্বংসলীলা চালাচ্ছে। আমরা এর একটাই উত্তর জানিয়ে দিতে চাই এবং আমাদের দাবি : এখনই যুদ্ধ বন্ধ করো! বারবার সামরিক অভিযান বন্ধ করে সংলাপ ও রাজনৈতিক সমাধান খোঁজার এখনই সময়। এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিকভাবে সমাধানযোগ্য। এর জন্য আমাদের, ইসরায়েলের দক্ষিণ ও অন্যান্য এলাকা এবং গাজা ও পশ্চিম তীরের মানুষকে আর কতো মূল্য দিতে হবে? তারা বলেছে, ইহুদি এবং আরব- আমরা একসঙ্গে এই দখলদারিত্ব ও যুদ্ধ, পারস্পরিক ঘৃণা, উসকানি ও বর্ণবাদকে উতরে যেতে পারবো এবং জীবন ও সম্ভাবনার নতুন পথ খুঁজে নিতে পারবো।

উল্লেখ্য, রবিন স্কয়ার ইসরায়েলের একটি বিখ্যাত চত্বর যেখানে রাজনৈতিক সমাবেশগুলো হয়। এই চত্বরটির নামকরণ করা হয়েছে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী আইজ্যাক রবিনের নামে যিনি ১৯৯৫ সালে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন। বলা হয়, ফিলিস্তিনিদের প্রতি নমনীয় হওয়ার কারণেই তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, বিশ্ব আজ সাম্রাজ্যবাদী দখলদারদের লীলাক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। এর সঙ্গে মিলিত হয়ে মুসলিম নিধনে ব্যস্ত শক্তিটি জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, বহুজাতিক কোম্পানিসমূহ, আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রভাব বিস্তার করে, বিশ্বের অপ্রতিদ্বন্দ্বী শক্তি হিসেবে বিরাজ করতে চাইছে। এ অপশক্তি সমগ্র বিশ্বের প্রতিটি দেশে বর্ণে-বর্ণে, জাতিতে-জাতিতে, দেশে-দেশে সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয়, বর্ণবাদী, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বিভেদ সৃষ্টি করে পারস্পরিক সংঘাত-সংঘর্ষ জিইয়ে রাখছে। দেশ ও জাতিসমূহকে দুর্বলতর করছে, যাতে করে দুর্বলদের ওপর নিজেদের আধিপত্য চাপিয়ে দিতে পারে। মধ্যপ্রাচ্যের বাদশাহ, আমির, খলিফা, সুলতানদের প্রধান রক্ষক এরাই।
খুবই বেদনার কথা, মুসলমানদের সুড়ঙ্গের শেষ প্রান্তে ছুড়ে দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, এরা সন্ত্রাসী। এরা জঙ্গি। অথচ ফিলিস্তিন ইস্যুটি চল্লিশ বছরেও বিশ্ব মোড়লরা সমাধান করতে পারেননি। কিংবা করছেন না। উসকে দেয়া কাজটি খুবই ভয়াবহ। তা বিশ্বের নানা প্রান্তকে অশান্ত করে তুলতে পারে। আগুন ছুড়ে দিলে তা নিজের প্রতিই ফিরে আসতে পারে। মনে রাখা দরকার, মুসলমানরা যুগে যুগে অত্যাচারিত হয়েছে। কিন্তু অন্যায়ের কাছে, অসত্যের কাছে মাথা নত করেনি।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com