Latest News

জঙ্গি ছিনতাই: জড়িত ২০ জেএমবি সদস্যই অধরা

এসবিএন ডেস্ক : ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজনভ্যান থেকে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জেএমবির দুর্ধর্ষ তিন জঙ্গিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ভুলেই গেছে মানুষ। এ ব্যাপারে প্রশাসনের তৎপরতাও যেন ঝিমিয়ে পড়েছে। ঘটনার পর ছয় মাস কেটে গেলও দুই জনের হদিস পায়নি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) ও জাহিদুল ইসলাম মিজান ওরফে বোমারু মিজান (৩৫) নামে পলাতক এই দুই জনই ছিলেন ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী গ্রেনেড হামলা বাস্তবায়নকারীদের অন্যতম। এক পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে সতীর্থদের ছিনতাই করা অপর জঙ্গির নাম রাকিবুল হাসান ওরফে রাকিব ওরফে হাফিজ মাহমুদ (৩৫)। ঘটনার একদিন পর তিনি পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের ঘটনায় নিহত হন। দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ ঘটনার পর জেএমবির পুনরুত্থান এবং হামলার আশঙ্কা ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনেও বলা হচ্ছে, আবার বড় হামলার পরিকল্পনা করছে নেতৃত্বহীন জেএমবি। আশঙ্কা করা হচ্ছে, দুই শুরা সদস্য ও সামরিক শাখার নেতাকে পেয়ে আবার চাঙা হতে পারে জেএমবির জঙ্গিরা। সংশ্লিষ্ট পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, তিন জঙ্গি ছিনতাইয়ের মিশনে অন্তত তিন ডজন জেএমবি সদস্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশ নিয়েছিল। এ ঘটনায় গাড়ি ও অর্থের জোগানদাতা জাকারিয়া ওরফে হিমেলসহ ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ-র‌্যাব। র‌্যাবের গোয়েন্দারা এর বাইরেও ১৮ জন জঙ্গির ব্যাপারে তথ্য পেয়েছেন, যারা জেএমবিকে সক্রিয় করার মিশনে নেমেছে। এই জঙ্গিদের গ্রেপ্তারে অভিযানও শুরু করেছিল র‌্যাব-পুলিশ। তবে এখনো কাউকেই গ্রেপ্তার করা যায়নি। এ ব্যাপারে র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি) কর্নেল জিয়াউল হাসান বাংলামেইলকে বলেন, ‘এই দুর্ধর্ষ জেএমবির জঙ্গিদের গ্রেপ্তার করেছিল র‌্যাব। তারা ছিল বোমা হামলার অন্যতম কারিগর। পাঁচ শুরা সদস্যসহ শীর্ষরা না থাকায় জেএমবি ছিল নেতৃত্বশূন্য। এবার ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এসব জঙ্গির পালিয়ে যাওয়ার কারণে আশঙ্কায় আছি আমরা। আমরা তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ক্রাইম) শফিকুল আলম বলেন, ‘এখনো পলাতক দুই জঙ্গিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তাই দুজন কীরকম বেশভূষা ধারণ করতে পারে তার সম্ভাব্য কিছু ছবি দিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পোস্টারিং করা হয়েছে। গণমাধ্যমেও এ ছবি সরবরাহ করা হয়েছে।এ ঘটনার মামলাগুলোর তদন্ত চলছে।

ছিনিয়ে নেয়া দুই জঙ্গিই বিপজ্জনক
গত ২৩ ফেব্রুয়ারি তিন জঙ্গিকে মুক্তাগাছা থানার রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা ও ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায় সিরিজ বোমা হামলাসহ পাঁচ মামলায় হাজিরা দিতে ময়মনসিংহের আদালতে নেয়া হচ্ছিল। সে পথেই বোমা মেরে ফিল্মি স্টাইলে তাদের ছিনিয়ে নেয় সহযোগীরা। জঙ্গিদের গুলিতে নিহত হন পুলিশ কনেস্টবল আতিকুর রহমান। পরবর্তীতে কারা কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসে- কারাগারে বসেই মোবাইল ফোনে বাইরে যোগাযোগ করতেন তিন জঙ্গি। এভাবে দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনায় ঘটে ছিনতাইয়ের মিশন। সূত্র জানায়, যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি বোমারু মিজানের বিরুদ্ধে আছে ২৬টি মামলা। ২১টি মামলা বিচারাধীন তার বিরুদ্ধে। পাঁচটি মামলায় সাজা হয়েছে তার। এর মধ্যে একটি মামলায় ৩০ বছরের কারাদণ্ড হয়েছে। ২০১৩ সাল থেকে কাশিমপুর কারাগারে ছিলেন। তার বাড়ি জামালপুরের মেলান্দহে। মিজান জেএমবির বোমা বিশেষজ্ঞ। জ্যামিতিক বোমা, চট্টগ্রামের বই বোমাসহ নানা ধরনের বোমার উদ্ভাবন ও ব্যবহার করেছেন তিনি। এ কারণে তার নাম হয়েছে বোমারু মিজান। তিনি গ্রেপ্তার হয়েছিলেন ২০০৯ সালে। রাজধানীর পীরেরবাগ বাসা থেকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর তার দেয়া জবানবন্দিতে জানা যায়, ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার পর স্ত্রীসহ ভারতে পালিয়ে যান তিনি। মুর্শিদাবাদে থেকে ভারতের মুজাহিদীনদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করেন। ২০০৮ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন।

সালাউদ্দিন সালেহীনের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ৪০টি বেশি মামলা আছে। ২০০৬ সালে তাকে জঙ্গি তৎপরতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চট্টগ্রাম থেকে আটক করা হয়। ২০১০ সালে কাশিমপুর কারাগারে আনা হয়। ১৩ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত তিনি। এর মধ্যে তিনটি মামলায় তার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। তার বিরুদ্ধে বিচারাধীন আছে আরও ২৪টি মামলা। সালাউদ্দিন সালেহীনের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানায়। সালাউদ্দিন ছিলেন ১৭ আগস্ট বোমা হামলার অন্যতম নির্দেশক। ১৭ আগস্ট মনিটরিংয়ের দায়িত্ব ছিল তার। বোমা বানাতেও পারদর্শী তিনি। এছাড়া নিহত রাকিব হাসানের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন থানায় ৩০টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটিতে মৃত্যুদণ্ড ও একটিতে যাবজ্জীবন সাজা দেন আদালত। তার বাড়িও জামালপুরে।

নেপথ্যের ১৮ জঙ্গিও অধরা

তিন জঙ্গি ছিনতাইয়ের পর পুলিশ, র‌্যাব ও গোয়েন্দাদের তদন্তে সংশ্লিষ্ট অনেকের নাম বেরিয়ে আসে। তবে হামলার মূল পরিকল্পনরাকারীরা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান- ফারুক, শফিক, মিলন, জাকারিয়া, সবুজ, সাজেদুর, মানিক, মাজিদসহ অন্তত ১২ জন ত্রিশালের মূল অপারেশনে অংশ নেয়। ২০১২ সালে জামিনে মুক্তির পর বর্তমান আমির ( জেএমবির একটি গ্রুপের) ফারুক হোসেন ও তার সেকেন্ড ইন কমান্ড এহসার সদস্য শফিকুল ইসলাম শফিক বন্দী ছিনতাইয়ের উদ্যোগ নেয়। মিশনে অংশ নেয়া জাকারিয়া গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তাদের আমির ফারুক হোসেন তাকে শফিকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনানী বাজারে শফিক তাকে মিলন, মানিক, মজিদ ও সবুজ নামে কয়েকজনের পরিচয় করিয়ে দেয়। তারা সেখানে ত্রিশালের অপারেশন নিয়েই আলোচনা করে। র‌্যাব সূত্র জানায়, ঘটনা সূত্র ধরে ছায়া তদন্তের পর অভিযানে অংশ নিয়ে পালিয়ে আছে এমন ১৮ জনকে শনাক্ত করেছে র‌্যাব। তারা হচ্ছেন- ফারুক হোসেন, শফিকুল ইসলাম শফিক, কফিল উদ্দিন ওরফে রব মুন্সি, মিলন, সবুজ, সাজেদুর, মানিক, আজিবুল ইসলাম ওরফে আজিজুল, শাহান শাহ, হামিদুর রহমান, বজলুর রহমান, মজিদ, বাবর, শরিফ, খাইরুল ইসলাম, নাদিম, ময়েজ উদ্দিন, মহব্বত ওরফে তিতুমির ওরফে নাহিদ এবং ওয়ালিউল্লাহ ওরফে হামিদ। গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) ছানোয়ার হোসেন বলেন, ‘ঘটনার অর্থদাতা পরিকল্পনাকারীসহ মোট ১১ জনকে গ্রেপ্তার করেছি আমরা। তারা হলেন- জাকারিয়া ওরফে হিমেল, রাসেল, জাকারিয়ার স্ত্রী সামছুন্নাহার খাতুন ওরফে স্বপ্না, জাকারিয়ার ভাই ইউসূফ, শ্বশুর নয়ন, সহযোগী রাজু আজমেদ ওরফে রাজু, সোহরাব হোসেন, আল আমীন, রাহাত, আজমীর এবং জিতু। র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার উপ-পরিচালক মেজর রুম্মান মাহমুদ বলেন, তারাও আটজনকে গ্রেপ্তার করেছেন। তারা হলেন- কামাল হোসেন সবুজ, সোহেল রানা, মোরশেদ আলম, আনোয়ার হোসেন, বাছির উদ্দিন, ইউসুফ আলী, ইলিয়াস উদ্দিন ও আবু বকর সিদ্দিক। 

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com