এসবিএন ডেস্ক. সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপি ও জোটের শরিক বেশ
কয়েকজন নেতার সঙ্গে গোপন যোগাযোগের খবরে নতুন করে সন্দেহ-সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে ২০
দলে। জানা গেছে, সরকারের একটি প্রভাবশালী সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ইতিমধ্যে
এসব নেতার সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করেছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কয়েকজন
দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন। অনানুষ্ঠানিক
বৈঠকগুলোয় তাদের এমন প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে যে, দলবদল করলে তাদের
বিরুদ্ধে চলমান মামলা প্রত্যাহার করা হবে। তাদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার পাশাপাশি
প্রয়োজনে সরকারে অন্তর্ভুক্তও করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট নেতাদের এ মুহূর্তে দলীয়
কর্মকাণ্ডে নিষ্ক্রিয় থাকতে বলা হয়েছে। এদিকে সরকারের সঙ্গে
প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষ যোগাযোগ রয়েছে বিএনপি ও শরিক দলের এমন নেতাদের একটি তালিকা
তৈরি করে দলীয় চেয়ারপারসনের কাছে জমা দেওয়া হয়েছে বলে নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে
জানা গেছে। সূত্রটি জানায়, দল বা জোট ছাড়তে পারেন, সন্দেহভাজন এমন
নেতাদের ওপর কড়া নজরদারি করা হচ্ছে দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে। কোনো ধরনের টোপে পড়ে
দল বা জোট ছেড়ে চলে যেতে পারেন, এমন নেতাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে
বিএনপি হাইকমান্ড। পাশাপাশি অন্য কোনো দল বা জোট থেকে যদি কেউ আসতে চায় তাদেরও
স্বাগত জানানোর কথা বলেছেন ২০-দলীয় জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া। দলের
শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপকালে সম্প্রতি তিনি এ নির্দেশনা দেন বলে জানা
যায়। সূত্র আরও জানায়, গত বছর অক্টোবর/নভেম্বরের দিকে বিএনপির
সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত বেশ কয়েকজন নেতাকে ক্ষমতাসীন ১৪-দলীয় জোটে নেওয়ার জন্য
গোপনে চেষ্টা করা হয়েছিল। সে খবর জানতে পেরে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল
ইসলাম আলমগীর ও ঢাকা মহানগরীর তৎকালীন আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকা কয়েকজন সিনিয়র
নেতাকে সঙ্গে নিয়ে তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন। এ তৎপরতায় সে যাত্রায় ভাঙনের
হাত থেকে রক্ষা পায় বিএনপি। জানা যায়, আবারও সরকারি জোটে চলে যেতে পারেন মাঝারি
পর্যায়ের এমন কিছু নেতার নামের একটি তালিকা ইতিমধ্যে বিএনপি নেত্রীর হাতে
পেঁৗছেছে। এরপর তিনি তালিকাভুক্ত নেতাদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মোহাম্মদ নাসিম প্রকাশ্যে বলেছেন, বিএনপির বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা এখন
আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন। তাদের মধ্যে যারা বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা
তাদের দলে (আওয়ামী লীগে) নেওয়ার বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ
নেতার এ বক্তব্যের পর নড়েচড়ে বসে বিএনপি হাইকমান্ড। গোপনে খোঁজখবর নিয়ে তালিকাটি
তৈরি করা হয় বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির শেখ শওকত
হোসেন নীলু এবং তার আগে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ভাসানী) চেয়ারম্যান শেখ আনোয়ারুল
হকের জোট ত্যাগের বিষয়টি ২০-দলীয় জোটে খানিকটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। সূত্র
জানায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে ও পরে এত সংকটময় পরিস্থিতিতেও কেউ দল বা
জোট ছেড়ে যায়নি। কিন্তু গত দুই মাসের ব্যবধানে ছোটো দুটি দলের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ত্যাগ করেছেন। আরও বেশ কয়েকটি মাঝারি আকারের দলও ২০-দলীয়
জোট ছাড়ার সন্দেহের তালিকায় আছে। নেতা-কর্মী শূন্য নামসর্বস্ব এসব দল জোটে
থাকাকালে সংখ্যা বৃদ্ধি ছাড়া তেমন কোনো কাজে না এলেও জোট ছেড়ে চলে গেলে দুর্নাম
ছড়ায়, যার ফলে এগুলো যাতে আর ২০-দলীয় জোট না ছাড়ে সে জন্যও সতর্ক দৃষ্টি
রাখতে বলা হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী
সংস্কারপন্থি নেতাদের বিষয়ে। সংস্কারপন্থি হিসেবে পরিচিত নেতাদের মেধা, যোগ্যতা ও গুরুত্ব
অনুযায়ী দলের মূলধারায় ফিরিয়ে নিয়ে কাজে লাগানোর নির্দেশনা দিয়েছেন বেগম জিয়া। এ
প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির সর্বোচ্চ ফোরামের একজন সদস্য জানান,
'বিএনপির
মধ্য থেকে কে কে আওয়ামী লীগে যাওয়ার অপেক্ষায় আছেন তা জানি না। তবে আওয়ামী লীগ
নেতৃত্বাধীন ১৪-দলীয় জোটের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে
ফেলেছেন ২০-দলীয় জোটে আসার। তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন।' বিএনপি চেয়ারপারসন
কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, মন্ত্রিসভা ও বর্তমান জাতীয় সংসদে
প্রতিনিধিত্ব করছে ক্ষমতাসীন জোটের শরিক এমন দুটি গুরুত্বপূর্ণ দলের কয়েকজন শীর্ষ
নেতা তাদের গ্রুপ নিয়ে নতুন দুটি দল গঠনের মাধ্যমে ২০-দলীয় জোটে যোগ দেওয়ার
অপেক্ষায় রয়েছেন।