Latest News

খণ্ডকথা ৫ : কোরবানি গরুর সেলফি!

আজিম খান চৌধুরী: এই অপরাধ বোধটা কোরবানী ঈদ এলেই আমার মাঝে জাগ্রত হয় ৷ একই দোষে আমি নিজেও একসময় দোষী ছিলাম ৷ নিজে গাধা হয়ে কোরবানী গরুর ছবি আমিও তুলেছি ৷ কোরবানির মানে ত্যাগ, ঈদ মানে আনন্দ ৷ কথাটি এক সঙ্গে বললে দাঁড়ায় 'ত্যাগের আনন্দ' ৷ 'ভোগে সুখ নেই; ত্যাগেই প্রকৃত সুখ'। ১০টা নম্বরের  জন্য কাগজে কলমে ভাবটির কত যে সম্প্রসারণ ঘটিয়েছি, সবার মনে আছে নিশ্চয়ই ৷ না বুঝে একটা সময় ইচরে পাঁকাদের মত বাক্যটি স্কুল কলেজের টয়লেটের দেয়ালেও লিখেছি ৷ দুষ্টামির বয়স পার করে এসেছি, বড় হয়ে বাক্যটি কে কতটুকু বুঝলো কে জানে ? বাদ দেই এসব কথা; বরং আসল কথা বলি ৷
কোরবানির পেছনে ইব্রাহিম (আঃ) এর বড় একটি ঘটনা জড়িত ৷ ঘটনাটি কম বেশি ছোট বড় সবাই জানি৷ পশুটিকে নিজের আপন মানুষের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছিল ৷ তাই শুধু পকেটের পয়সার সেক্রিফাইস নয়; পশুটির জন্য এক ধরনের দরদ থাকা প্রয়োজন ৷ মমতায় চোখে অশ্র“ আনা প্রয়োজন ৷ যে মানুষ পশুটি লালন পালন করে বড় করেছে তার হয়ত মায়া লাগবে ৷ অভাবের তাড়নায় বিক্রি করছে কিন্তু পানি চোখের কোনায় ঠিকই জমা হয়ে থাকে ৷ এই ধরনের মায়া ৷ উদ্দেশ্যটা নির্ভেজাল রাখা তার চেয়ে আরো বেশি প্রয়োজন ৷ এই দিনের ত্যাগের মহত্বটাকে নিজেদের অজান্তেই আমরা অহংকারের একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করে বসি ৷ নামধারী পয়সা ওয়ালা মুসলমান পণ্য হিসাবে কিনছে আবার পণ্য হিসাবে জবাই করছে ৷ মাঝ পথ থেকে আমাদের চোখের সামনে বিত্তের একটা প্রতিযোগিতা হয়ে যায় ৷ কে কত দিয়ে কিনলো, কারটা কত বড়, কে কয়টা দিল এমন প্রতিযোগিতা ৷ যারা হারলেন তাদের হিংসাটুকু যেন অনেক কষ্টে লুকিয়ে রাখেন ৷ যে যাই করুক, ভালো লাগে দিনটিতে গরীব- দু:খীরা অন্তত আমিষের দেখা পায় ৷ কতটা আগ্রহ নিয়ে যে তারা খায়, নিজের চোখে যারা দেখেছেন তারা তাদের চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি ৷
ফটোগ্রাফির বিষয় বস্তুর দু:¯প্রাপ্যতা এতটাই প্রকট হয়নি যে মানুষ শুধুই গরুর ছবি তুলবে ৷ এর পেছনে একটু হলেও অহংকার রয়েছে ৷ এখানে আরো একটি বিষয় লক্ষনীয় যে কেউ অপেক্ষাকৃত কম তাজা কিংবা রুগ্ন গরুর ছবি কখনো  ফেইসবুকে দেয়না, দেয় তরতাজা গরুর ছবি ৷ কিন্তু কোরবানী মোটেও অহংকারে বিষয় না। এটি একটি এবাদতের বিষয় ৷ এবাদত আর অহংকার একে অপরের শত্র“৷ একটি আরেকটিকে সমূলে ধ্বংস করে দেয় ৷ যারা শুধু তাদের স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য কোরবানী করেন, তাদের পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই ত্যাগের সোয়াব তাদের স্রষ্টার কাছে পৌছে ৷
কিছু মানুষ ভাবে প্রতিটি ধর্মেই এমন এক দুটি দিন আছে, আনন্দ ফুর্তির  জন্য, আর তাই ঈদের দিন বিশাল খাওয়া-দাওয়া, হৈ হুল্লা, আড্ডা। যেন ইদুল আজহা আসে না কোনো শিক্ষা নিয়ে, আসেনা কোনো শিক্ষা দিতে ৷ ত্যাগেই যে প্রকৃত সুখ লুকিয়ে থাকে, সেই শিক্ষা কেউ নিতে চায়না। ত্যাগের মাধ্যমে স্রষ্টাকে খুশি করার সুযোগ চায়না কেউ গ্রহণ করতে ৷ শুধুই ফেইসবুকের কোনায় কোনায় জমা হয় প্রয়াত গরুর সেলফি ৷ যেন তারা নিজেরাই উঠিয়ে ছিল নিজেদের ছবি।

২৯  সেপ্টেম্বর, ২০১৪
লন্ডন। 

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com