Latest News

খণ্ড কথা ৪ : ঘরে ঘরে ঐশীদের মত ছেলে মেয়ে তৈরী হবে, তাতে কি ?

আজিম খান চৌধুরী: 
দু'য়ার আপিল
খারাপ খবর বাতাসের আগে ছড়ায়। আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি নাকি বঙ্গভবনে বন্দী! কিশোরগঞ্জ নিজ এলাকায় যেতে না যেতেই মুখ ফসকে কথাটা নিজ মুখে বলে দিলেন ৷ এই বন্দী দশার দায়ভার কার? কোনো স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্র যন্ত্রের নকশা, নাকি উনার নিজের রাষ্ট্রপতি হওয়ার লোভটাই দায়ী ৷ বুঝার উপায় নেই ৷ কেননা তিনি এই সরকারের মেরুদন্ড না হতে পারেন; পাজরের একটা হাড়তো বটে৷ যতদূর জানি উনি মানুষকে হাসাতে জানেন, নিজেও হাসতে জানেন এবং উনি একজন ব্যক্তিত্ব সম্পন্ন মানুষ৷ আজকাল উনার মুখ টিভির পর্দায় খুব মলিন দেখায়। আগের সতেজতা যেন নেই৷ এক নাগারে কয়েক মাস ঠিক ঠাক মত ঘুম না হলে চেহারার যে অবস্থা হয়,  তেমন৷ না না, চিনতে ভুল হয়নি, তিনি হু ম এরশাদ না। তিনি প্রাক্তন স্পিকার আব্দুল হামিদ৷ প্রচন্ড রসবোধ সম্পন্ন মানুষটার মুখে অন্তত মুজিব পরদেশীর ফোক সঙ্গীত মানায় না 'মা মা আমি বন্দী করাগারে'৷ আজকাল উনি ফেরদৌস ওয়াহিদের প্যারোডি গান রাষ্ট্র পক্ষের কারো মুখে শুনতেও ভয় পান "তোরে ছাগলের মত করে সাজিয়ে বাজারেতে নিয়ে আমি বেচবো, তোর চামড়া দিয়ে আমরা ডুগডুগি বানাবো ৷ খালি কিছু কইস কইস কইসরে যাই দড়ি আর কসাই ব্যাটা আনতে" ৷ তিনি মুখ খুলে কিছু বলতে চান; কিন্তু পারছেন না৷ বাহ্! উনার এত লজ্জা,  এত সংকোচ! ইচ্ছায় হোক আর অনিচ্ছায় ভয়েই হোক আর নির্ভয়ে- এখন উনার বুক ফাটেতো মুখ ফুটে না৷ তিনি এই বন্দী অবস্থা থেকে মুক্তি চান ৷ পাবলিক কি উনার মুক্তির জন্য দু'য়া করবে নাকি পাবলিক বুঝে "সাহেব একখানা ভাব লইছেন মাত্র "?
অন্যরা যেভাবে বেফাস কথা বলে বিব্রতকর অবস্থায় পরেন, তিনি এমন না। ঘটনা আমার কেন জানি সত্য বলে মনে হয়৷ উনার নিজ অঞ্চলের কিশোরগঞ্জের ভাষার কেউ জিজ্ঞেস করলে হয়ত বলতো 'কিতা এডভোকেট সাব, কিতা অইসে, কইননা ক্যারে?' এখন নিজমুখে সব কিছু বলে তাড়াতাড়ি পাবলিকের সন্দেহটা না মিটালে যতই সময় যাবে সন্দেহের মাত্রা আরো প্রবল ভাবে বাড়তে থাকবে ৷

কারিগর
বিষয়টা হাস্যকর! জাতি হিসাবে কতটা নির্বোধ হলে শিক্ষকের মর্যাদা আমরা তৃতীয় শ্রেণীতে রাখতে পারি, আমার জানা নেই৷ কিন্তু এই শিক্ষকরাই মানুষ তৈরির কারিগর৷ আমারতো মনে হয় নিম্ন শ্রেনীর লোকেরাই এখন পেশা কিংবা সমাজের শ্রেণী নির্ধারক? শিক্ষকদের কোনো শ্রেণী থাকার প্রয়োজন নাই। তারা এমনিতেই তাদের প্রিয় ছাত্রদের মাথার মুকুট হয়ে রইবেন৷ কিন্তু হতাশার ব্যাপার হলো আমরা যেভাবে পশ্চিমা সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়ছি শিক্ষকদের সেই সম্মানটুকুও হয়ত বেশিদিন থাকবেনা ৷
আমদের দেশটাই এমন, বোকা মানুষ একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরের চেয়ে পুলিশের মুল্য অনেক বেশি দেয়৷ আমাদের মন মানসিকতা এভাবেই গড়ে তোলা হয়েছে৷ আপনি শিক্ষক হয়ে কোনো বাচ্চাকে যদি জিজ্ঞস করেন, তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও? বলবে- ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার৷ আপনিও এমন বাচ্চাদের খুব বাহ বাহ দিলেন৷ খুব কম বাচ্চা বলে আমি শিক্ষক হব৷ যে বাচ্চাটা বলল আমি একজন শিক্ষক হতে চাই, তাকে একজন শিক্ষক কিংবা সমাজের মানুষ কতটুকু উৎসাহ প্রদান করবে বলুন? আপনি করবেন? আমাদের শিক্ষার লক্ষ্য নৈতিকতা সামাজিক মুল্যবোধ সবকিছুই যেন অর্থের কাছে মাথানত করে আছে ৷
আমাদের সমাজকল্যাণ মন্ত্রীতো সেদিন বললেন, মাদ্রাসার ছাত্ররা লিল্লা যাকাত খায়৷ উনার কাছেও পয়সার ধান্দাটাই আসল৷ কিন্তু আজ ইসলাম থেকেই আমাদের নৈতিকতা সততা শ্রদ্ধাবোধ শিখতে হবে ৷ আমাদের সময় পঞ্চম অথবা ষষ্ঠ শ্রেণীতে একটি কবিতা ছিল।  কবিতাটির নাম ছিল 'বাদশা আলমগীর'৷ কবিতাটি একজন মুসলমান বাদশার ঘটনা অবলম্বনে লেখা হয়েছিল৷ বাদশা একদিন দেখে ফেলেন তার রাজপুত্র শিক্ষকের পায়ে পানি ঢেলে দিচ্ছে। আর তিনি পা ধুচ্ছেন ৷ বাদশা ঘটনাটি দেখে ফেলেন৷ পরদিন বাদশা ঐ শিক্ষককে রাজদরবারে ডাকলেন৷ শিক্ষকের চোখে আর ঘুম নেই৷ রাজপুত্রের দ্বারা এহেন নিম্ন কাজ করানোর দায়ে হয়ত তাকে বাকি জীবন জেলে পঁচতে হয়৷ কিন্তু না, বাদশা উল্টো দরবারে ডেকে আদেশ দিলেন, তার ছেলে যেন এখন থেকে নিজ হাতে শিক্ষকের পা ধুয়ে দেয়৷ এখনো এই কবিতা পাঠ্য বইয়ে আছে কি না জানিনা ৷
আজকাল এধরনের গল্প কবিতা কমলমতি শিশুদের কমই দেয়া হয়।  আমদের আছে ভিনদেশী সংস্কৃতি আছে, সিনড্রেলা আছে, মাই লিটল পনি, কত কি? বাচ্চারাতো এখন থেকেই মায়েদের সঙ্গে হিন্দি সিরিয়াল দেখছে৷ সেদিন আমাদের মোস্তফা সরোয়ার ফারুকী বললেন, আমাদের সাহিত্য সংস্কৃতি থেকে ইসলামকে ঝেটিয়ে বিদায় করা হচ্ছে৷ ক্ষতি ইসলামের না এই ক্ষতি আমাদের ৷ ঘরে ঘরে ঐশীদের মত ছেলে মেয়ে তৈরী হবে, তাতে কি ?

লন্ডন।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com