এসবিএন
ডেস্ক : বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৬৮তম জন্মদিন আজ। ১৯৪৭ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তার জন্ম হয়। প্রতি বছরের মতো এবারো বিদেশে অবস্থানরত শেখ হাসিনার জন্মদিনে আড়ম্বরপূর্ণ কিছু করা হচ্ছে না। তবে তার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করে দেশে-বিদেশে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করা হবে। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর প্রতি বছরই শেখ হাসিনার জন্মদিন কাটছে দেশের বাইরে। প্রতি বছরই সেপ্টেম্বরের এই সময় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। তাই তৃতীয়বার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেয়ার পর গত ৪ বছর শেখ হাসিনার জন্মদিন কেটেছে দেশের বাইরে। এ বছরও নিউইয়র্কে জন্মদিনের কেক কাটতে হবে তাকে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার শৈশব কাটে বাবার বাড়িতেই। ১৯৫৪ সালে নির্বাচনের পর তিনি মা-বাবার সঙ্গে চলে আসেন ঢাকায়। শৈশব থেকেই শেখ হাসিনা ছিলেন মা-বাবা ও দাদা-দাদির আদরের। আদর করে সবাই তাকে ডাকতেন ‘হাসু’ বলে।
শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান হিসেবে তিনি ছাত্রজীবন থেকেই প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছাত্রলীগে সক্রিয় এবং ইডেন কলেজের নির্বাচিত সহ-সভাপতি (ভিপি) ছিলেন।
১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বপরিবারে নিহত হন। তবে সে সময় শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান। ১৯৮১ সালের ১৭ মে তিনি দেশে ফিরে আসেন। এর আগেই ৩৪ বছরেরও কম বয়সী শেখ হাসিনাকে দেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী বৃহৎ রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচন করা হয়। এরপর থেকে টানা ৩৩ বছরেরও বেশি সময় তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব উদযাপন করছেন। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা স্বৈরাচারবিরোধী ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন করতে গিয়ে বহুবার তিনি মৃত্যুর মুখোমুখি হন। তার ওপর গুলি, বোমা ও গ্রেনেড হামলাসহ নানা ষড়যন্ত্র চালানো হয়।
সামরিক স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা হয়ে ওঠেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এই সময়ে তার নেতৃত্বে দুইবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে এবং তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব উদযাপন করছেন। এছাড়া তিনবার তিনি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা হিসেবেও দায়িত্ব উদযাপন করেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে শেখ হাসিনাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ওই গ্রেনেড হামলায় ঘটনাস্থলেই আওয়ামী লীগের ২৩ জন নেতাকর্মী নিহত ও অনেকে আহত হন। গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান তিন দিন পর মারা যান। রাজনৈতিক জীবনে শেখ হাসিনা দুইবার রাষ্ট্রপ্রধান পদক ও রোটারি ফাউন্ডেশনের পল হ্যারিস ফেলোশিপ, ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার এবং গণতন্ত্র, মানবাধিকার শান্তি প্রতিষ্ঠা ও সৃজনশীল লেখালেখির জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত হন। সর্বশেষ তিনি মহিলা ও শিশুস্বাস্থ্য উন্নয়নে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘ কর্তৃক সম্মানজনক ‘সাউথ সাউথ’ পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। রাজনৈতিক জীবনে ব্যস্ততার মাঝেও তিনি বেশকিছু গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- সামরিকতন্ত্র বনাম গণতন্ত্র, ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, দারিদ্র্য দূরীকরণ: কিছু চিন্তাভাবনা, বৃহৎ জনগোষ্ঠীর জন্য উন্নয়ন, বিপন্ন গণতন্ত্র: লাঞ্ছিত মানবতা, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম, সহে না মানবতার অবমাননা ইত্যাদি। শেখ হাসিনা ১৯৬৮ সালে বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় এবং কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। জন্মদিনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের পক্ষ থেকে জাতিসংঘের ৬৯তম অধিবেশন উপলক্ষে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘজীবন কামনা করে ফুলের তোড়া উপহার দেয়া হবে। এছাড়া বাদ জুমা বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ মাহফিল ও বিশেষ মোনাজাত অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ২৩, বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা ও আঞ্চলিক কার্যালয়ে দিনব্যাপী কোরআনখানি, বাদ আছর মিলাদ, দোয়া মাহফিল এবং সকালে মন্দির, প্যাগোডা ও গির্জায় বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিভিন্ন এতিমখানাসহ দুস্থদের মাঝে খাবার বিতরণ করবে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে সভাপতি শেখ হাসিনার ৬৮তম শুভ জন্মদিন উদযাপন করার জন্য দলের সব শাখা, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মী-সমর্থক-শুভান্যুধায়ীদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।