হেফাজুল করিম রকিব : ব্রিটেনে আলতাব আলী নিহতের ঘটনায়
প্রথমবারের মতো সমস্ত বাঙ্গালীদের সেদিন
এক জাগয়া
নিয়ে এসেছিল। সেদিন
থেকেই ব্রিটেনে
বাঙ্গালীদের অনেক আন্দোলন সংগ্রাম ও
সাফল্যের ইতিহাস
রয়েছে।
আলতাব আলী
মৃত্যে যেভাবে
মানুষকে নাড়া
দিয়েছিল এখন
মনে হয়
সে রকম
আর নাড়া
দেয় না
বাঙ্গালীদের হৃদয়। না হলে
অমানবিকভাবে রুবেলের মৃতে্যু হওয়ার পরও
বিলেতে বাংলাদেশীদের
নিরবতা দেখে
তাই মনে
হয়।
হয়তো রুবেলের
এই মৃত্যু
এই শতাব্দীর
কিছু মানুষের
হৃদয়কে নাড়া
দিতে পারলেও
বৃহৎ গোষ্টির
মনকে নাড়া
দিতে পারে
নাই।
যেখানে মানবাধিকারের
সবচেয়ে বড়
বড় প্রতিষ্ঠান
বসে বাংলাদেশের
মানবিক অধিকার
নিয়ে নানা
নাটকে ব্যস্ত
সেখানে রুবেলের
মৃত্যু কারো
কাছে কোন
কিছুই নয়। কারণ
যেদেশে খুনী,
ধর্ষক, চুর,
ডাকাত, সব
কিছুর জন্য
মানবাধিকার উতলে পরে অথচ সেদেশে
অনেক স্বপ
নিয়ে আসা
মা বাবা
ভাই বোনের
ভালোবাসা বুক
নিয়ে নির্মমভাবে
মারা গেল
ডিটেনশন সেন্টার
নোমে জেলের
প্রকোষ্ঠে । হয়ত রুবেলের মত
অমানাবিকভাবে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে অনেকেই। তাতে
কার কি
! তবে
রুবেলে মৃত্যু
নিয়ে নানা
প্রশ্ন ও
বিতর্কের জম্ম
হয়েছে ইতিমধ্যেই
তাতেও কার
কি আসে
যায় !
সিলেটের বিশ্বনাথের বাংলাদেশি
ছাত্র ২৬
বছর বয়সী
রুবেল আহমদ
যুক্তরাজ্যের লিংকনশায়ারের মর্টন হল ডিটেনশন
৫ সেপ্টেম্বর
গভীর রাতে
তিনি মারা
যান।
রুবেলের মৃত্যুর
খবর প্রথম
প্রচারিত হয়
লিংকনশায়ার একোতে। এর আগ
পর্যন্ত তাঁর
আত্মীয়স্বজনের কাছে সে অসুস্থ না
মৃত, সে
ব্যাপারে কোনো
তথ্য ছিল
না।
লিংকনশায়ার একোর মাধ্যমে সংবাদটি দ্রুত
ছড়িয়ে পড়ে। রুবেলের
গ্রামের বাড়ি
বাংলাদেশের সিলেট জেলার বিশ্বনাথে এখন
কান্নার রোল
বইছে।
একই ডিটেনশন
সেন্টারে থাকা
রুবেলের এক
বন্ধু জানায়,
রাতের বেলা
আমাদের রুমের
দরজা তালা
দেয়া থাকে। রুবেল
বিকাল থেকে
বুকে ব্যথা
অনুভব করেন। সাহায্যের
জন্য সে
এক ঘণ্টারও
বেশি সময়
ধরে দরজার
ঠোকাঠুকি করেন। অনেক
উপায়ে সাহায্যের
জন্য চিৎকার
করলেও কোন
সাহায্য পায়নি
রুবেল।
পরে ডিটেনসেন
সেন্টার থেকে
ইস্ট মিডল্যান্ড
এম্বুলেন্স সার্ভিস এনএইচএস ট্রাষ্ট খবর
দিয়ে জানালে
তারা রাত
সাড়ে ১১টার
এসে রুবেলকে
ওই স্থানেই
মৃত ঘোষণা
করেন। জানা যায়, রুবেল
আহমদ পাঁচ-ছয় বছর
আগে ওয়ার্ক
পারমিট হলিডে
মেকার ভিসায়
যুক্তরাজ্যে আসেন। তাঁর ভিসার
মেয়াদ ছিল
দুই বছর। মেয়াদ
শেষ হলে
তিনি ওভার
স্টে হয়ে
যান।
লুকিয়ে কাজ
করার একপর্যায়ে
বছর দেড়েক
আগে পুলিশ
তাঁকে গ্রেপ্তার
করলে মুচলেকা
ও জামিনের
শর্তে ছাড়া
পান।
স্থানীয় থানায়
১৫ দিন
অন্তর হাজিরা
সাপেক্ষে তিনি
মুক্ত ছিলেন।
পরে পুলিশের নজরদারিতে ছিলেন।
এ অবস্থায়
আবার কোন
এক কারণে
গ্রেপ্তার হয়ে ডিটেনশন সেন্টারে আটক
ছিলেন রুবেল। রুবেল
ছিল খুবই
ভালো ও
শান্ত ।
জানা যায়,
রুবেল সেদিন
পেটব্যথায় কাতরাচ্ছিলেন, তখন ভেতর থেকে
দরজা বন্ধ
ছিল।
ওই সময়
একাধিক ডিটেইনিও
পেটের বেদনায়
কাতরাচ্ছিলেন। রুবলের সলিসিটর সারওয়ার
খান বলেন,
‘কয়েক দিন
আগে রুবেলের
সঙ্গে সাক্ষাত্
করেছি।
সে আমাকে
জানিয়েছিল, তাঁর সবকিছুই ঠিক আছে। এ
অবস্থায় তাঁর
মৃত্যু রহস্যজনক। হোম অফিস মিনিস্টার
জেমস র্রোকেন
শায়ার এক
বিবৃতিতে জানিয়েছেন,
‘আমরা ডিটেইনিদের
স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, কল্যাণ প্রভৃতি বিষয়ে
অত্যন্ত ভালোভাবে
দেখভাল করে
থাকি।
তার পরও
ডিটেনশন সেন্টারে
একজন ডিটেইনির
মৃত্যু হয়েছে। আমাদের
সব সহমর্মিতা
শোকাহত পরিবারের
প্রতি এবং
আমরা মর্মাহত। ডিটেনশন
সেন্টারে একজন
ডিটেইনির মৃত্যুর
বিষয়ে পূর্ণ
তদন্ত শুরু
হয়েছে।’ যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ হাইকমিশন
সংবাদমাধ্যমে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রুবেল
আহমদের বিষয়টি
জানার পর
থেকে হাইকমিশন
যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের সঙ্গে যোগাযোগ
রক্ষা করে
চলেছে।
এর ধারাবাহিকতায়
হাইকমিশনের পক্ষ থেকে ফরেন অ্যান্ড
কমনওয়েলথ অফিসে
৮ সেপ্টেম্বর
একটি কূটনৈতিক
নোট দিয়ে
বিষয়টি নিশ্চিতকরণ
ও সংশ্লিষ্ট
তথ্য পাঠানোর
অনুরোধ জানানো
হয়।
নোট পাওয়ার
পর হোম
অফিস নিশ্চিত
করেছে, ৫
সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ১০ মিনিটে
ডিটেনশন সেন্টারের
টহল পুলিশ
রুবেল আহমেদকে
দরজার সঙ্গে
ঝুলন্ত অবস্থায়
দেখতে পায়। এরপর
পুলিশ তাঁকে
জরুরি চিকিত্সাকেন্দ্রে
নিয়ে যায়। রাত
১২টা ৯
মিনিটে চিকিৎসকেরা
তাঁকে মৃত
ঘোষণা করেন। হোম
অফিস এ
ঘটনার পরপরই
তদন্তপ্রক্রিয়া শুরু করেছে।
এদিকে যুক্তরাজ্যের মতো
আধুনিক, উন্নত,
মানবাধিকার সমুন্নত ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায়
ডিটেনশন সেন্টারে
বাংলাদেশি ছাত্রের এ ধরনের মৃত্যু
নিয়ে প্রশ্ন
তোলেন অনেকেই। একই
সঙ্গে মানবাধিকার
সংগঠন ও
আইনজীবীদের সঠিক তথ্য উদঘাটনের জন্য
এগিয়ে আসার
আহ্বান জানান। এদিকে ডিটেনশন সেন্টারে
এক ভোক্তভোগী
বলেন ডিটেনশন
সেন্টারে আর্ত্মহত্যা
করার কোন
সুযোগ সেখানে
নেই ।
ডিটেনশন সেন্টারের
বিস্তারিত লিখে পাঠান এক ভোক্তভোগী
। তার লেখাটা তুলে ধরা
হলো এখানে
- জুয়েল রাজ এক
বন্ধ এক
মুঠো সুখের
আশায় এক
আকাশ স্বপ্ন
নিয়ে যাবতীয়
আবেগ অনুভূতিকে
মাটিচাপা দিয়ে
পরবাসী হয়
মানুষ।
আমি ও
সে দলের
একজন।
হিসাবের খাতায়
যোগ বিয়োগের
ফলাফল সব
সময় ঋণাত্মক। ঋণ
পরিশোধে রুবেল
নিজের জীবন
টাই দিয়ে
দিলো লোহার
গারদে। মর্টন ডিটেনশন সেন্টারে
বাংলাদেশী রুবেল হত্যার প্রকৃত কারণ
উদঘাটন ও
সুষ্ঠু পাবলিক
তদন্তের দাবীতে
আজ লন্ডনে
গ্রেটার সিলেট
ডেভেলপম্যান্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল-জিএসসি
তাদের পূর্ব
লন্ডনের কার্যালয়ে
এক প্রতিবাদ
সভার আয়োজন
করে।
বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন
যুক্তরাজ্য শাখার আয়োজনে আলতাব আলী
পার্কে, বাংলাদেশী
তরুন রুবেল
আহমেদের রহস্যজনক
মৃত্যুর ঘটনার
এক প্রতিবাদী
মানব বন্ধন
ও বিক্ষোভ
সমাবেশ অনুষ্টিত
হয়।
তবে অনেকেই
বলেন ধীরে
ধীরে এই
আন্দোলনকে সারা ব্রিটেন ও অন্যান্য
দেশে ছড়িয়ে
দিয়ে স্বাক্ষর
অভিযান, মানব
বন্ধন, স্মারকলিপি
পেশ ইত্যাদি
সহ বিভিন্ন
লবিষ্ট গ্রুপের
সাথে সাক্ষাত
করে এ
ব্যাপারের সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত
ঘটনা প্রকাশের
আন্দোলন জোরদার
করা দরকার
ব্রিটেনের মতো জায়গায় এধরনের পাবলিক
ইনকোয়ারির ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রয়োজন
পড়ে ১০
হাজার থেকে
লক্ষাধিক স্বাক্ষর
সম্বলিত পিটিশন,
যা যেকোন
পরিস্থিতির গতিপথকে পাল্টে দেয়ার জন্য
যথেষ্ট।
কেননা এধরনের
আন্দোলনের ফলে পার্লামেন্ট সহ সরকারি
অন্যান্য সংস্থা
এবং তৃতীয়
মনিটরিং সহ
ওয়াচ ডগ
নড়ে চড়ে
বসে, যাতে
কাঙ্ক্ষিত সফলতা পাওয়ার বহু নজির
রয়েছে।
তাদের মতে
এখন দরকার
শুধু আমাদের
নিজেদের ঐক্যবদ্ধ
নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন জোরদার করা। ডিটেনশন সেন্টারে মৃত্যুবরণকারী
রুবেল আহমেদ
এর জানাজা
গত শুক্রবার
বাদ জুম্মাহ
ইস্ট লন্ডন
জামে মসজিদে
অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে
ব্রিটেনের বিভিন্ন শ্রেণীর লোকজন অংশগ্রহন
করেছেন।
ব্রিটেনে মর্টন
ডিটেনশন সেন্টারে
নিহত বিশ্বনাথের
যুবক রুবেল
আহমদের লাশ
তার পরিবারের
কাছে হস্তান্তর
করেছে ব্রিটেন
সরকার।
লাশ হস্তান্তরের
পরপরই শুক্রবার
বাদ জুম্মা
ব্রিটেনের ইস্ট লন্ডন মসজিদে রুবেলের
প্রথম জানাযার
নামাজ অনুষ্ঠিত
হয়েছে।
এতে বাংলাদেশী
শত শত
মানুষ জানাযার
নামাজে অংশ
গ্রহন করেন। রবিবার
সকাল ১০টায়
রুবেলের লাশ
দেশে পৌছে। বিশ্বনাথ
উপজেলার লামাকাজী
ইউনিয়নের সাঙ্গীরাই
গ্রামে তার
লাশ প্রথমে
আসবে।
রবিবার বাদ
আসর সৎপুর
কামিল মাদ্রাসা
মাঠে ২য়
জানাযা শেষে
পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা
হবে পরিবার
জানায়।
রুবেলে প্রতি বিলেতের
এই কমিনিটির
কোন দায়িত্ববোধ
নেই?
সবাই কি এখন বিলেতের নাগরিক
হয়েছে গেছে
? বিলেতে আজকে
বাংলাদেশীরা অনেক গুরুত্বপূর্ন জায়গায় থাকার
পরও কে
কতটুকু এগিয়ে
এসেছি নিজের
দায়িত্ববোধ থেকে ? তাহলে কি দায়িত্ববোধ
বলতে কোন
কিছু নেই
- সবাই কি
সাদা চামড়ার
সাথে মনটাকে
ও সাদা
পৃষ্টা রুপান্তর
করি নিছি
- তাহলে আমাদের
সবকিছু শুধু
নিজের জন্য?
সমাজ বা
কমিউনিটি বলতে
নামে কিছু
থাকলেও সত্যিকার
অর্থ সব
কি ধ্বংশ
হয়ে যাচ্ছে
? তাহলে নিজেদের
জায়গা থেকে
সরে যাচ্ছি
? দেশের রাজনীতিকে
নিয়ে যেভাবে
কমিনিটিতে বিভেদ - সেভাবে কমিউনিটির স্বার্থে
এক সাথে
একজায়গার আসাটা
ভুলে যাচ্ছি
? তাহলে আমরা
কোন পথে
হাটতেছি ------------ গন্তব্য কোথায়
----- কতদুর যাব এভাবে ?????
হেফাজুল করিম রকিব
লন্ডন প্রবাসী সাংবাদিক
|