এসবিএন ডেস্ক : যশোরে হত্যা, চুরি,
ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপকর্মে
অভিযুক্ত ছাত্রলীগকে নিয়ে বিব্রতোবোধ
করছে আওয়ামী লীগ। গত এক
বছরে পৃথক পাঁচ হত্যাকাণ্ডের
ঘটনায় জেলা ছাত্রলীগের শীর্ষ
নেতাদের নামে মামলা হওয়ায়
জেলা আওয়ামী লীগ চরম
নাখোশ হয়েছেন।
তবে ছাত্রলীগের এ অবস্থার
কারণে জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
একে অপরকে দায়ী করেছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা
গেছে, ১৪ জুলাই যশোর
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে
(যবিপ্রবি) পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের
চতুর্থ বর্ষের ছাত্র নাইমুল
ইসলাম রিয়াদ প্রধানগেটের সামনেই
দিনেদুপুরে খুন হয়। এ ঘটনায়
১২
জনের নামে মামলা হয়েছে। যার মধ্যে
সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ
সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলসহ
৮
নেতা রয়েছে। এবিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের
সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন
বিপুল বাংলামেইলকে বলেন, ‘ভিসি
নিজের দুর্নীতি ঢাকতে নবগঠিত
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগকে দুর্বল
করার চেষ্টা করেছিলেন। আর এসময়
দুর্বৃত্তদের হাতে রিয়াদ
খুন হলে অপকৌশলে তাদের
ফাঁসিয়ে দেন।’ গত ১৫ জুন
রাতে শহরতলীর শেখহাটি হাইকোর্ট
মোড়ে নিজ দোকানে খুন
হন
মারুফ। এ
হত্যাকাণ্ডে ১৭ জুন
জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক
কাজী তৌহিদুর রহমান জুয়েলসহ
কয়েকজনের নামে মামলা হয়েছে। এমামলায় তিনি
কারগারে রয়েছেন।
ছাত্রনেতা কাজী তৌহিদুর রহমান
জুয়েল যশোর শিক্ষাবোর্ড মডেল
স্কুল এন্ড কলেজের দ্বাদশ
শ্রেণীর ছাত্র শরীফ হত্যা
মামলারও প্রধান আসামি। গত বছরের
নভেম্বর মাসে প্রকাশ্য দিবালোকে
উপশহর মার্কাস মসজিদের পাশে
শরীফকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা
করা হয়।
অপরদিকে, ২০১৪ সালের
২৮
মার্চ যশোর শহরের বাবলাতলা
এলাকা থেকে জেলা ছাত্রলীগের
নেতারা বাসে কুয়াকাটা যাচ্ছিলেন। এদিন বাকেরগঞ্জের
পায়রা নদীর লেবুখালী ফেরিতে
আগে ওঠাকে কেন্দ্র করে
পরিবহন শ্রমিকদের সাথে সংঘর্ষ
হয়। এসময় ছাত্রলীগ
নেতাদের ছুরিকাঘাতে পরিবহন শ্রমিক
জসিম হাওলাদার মারা যান। এঘটনায় জেলা
ছাত্রলীগর সহসভাপতি জাবের হোসেন
জাহিদ, ছাত্রলীগ নেতা তারেক,
তানভীর, আরিফুর রহমানসহ ৩২
জনকে আটক করে পুলিশ। ২০১৪ সালের ১৫
জানুয়ারি ঘোপ বেলতলা এলাকায়
সন্ত্রাসীদের গুলি ও
বোমা হামলায় নিহত হয়
যশোর শহর যুবলীগের সাংগঠনিক
সম্পাদক রফিকুল ইসলাম শিপন। এ মামলায়
জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতি
ফয়সাল খানের নামে মামলা
হয়। এমামলায় ফয়সাল
জামিনে রয়েছেন। অন্যদিকে, যশোরের খোলাডাঙ্গা
হ্যাচারি পাড়ায় পিকুল হত্যাকাণ্ডে
জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে
৯
সেপ্টেম্বর জেলা ছাত্রলীগ
সহসভাপতি সাইদুজ্জামান বাবুকে আটক
করেছে পুলিশ।
পিকুল হত্যাসহ বাবুর বিরুদ্ধে
চাঁদাবাজিসহ প্রায় এক
ডজনের বেশি মামলা রয়েছে।
সূত্র মতে, শুধু
হত্যাই নয়; বিভিন্ন অপরাধ
কর্মকাণ্ডে অভিযুক্ত হয়ে
পড়েছে ছাত্রলীগ।
২০১৩ সালে ৪ সেপ্টেম্বর
লাখ টাকা চাঁদা না
পেয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক
সম্পাদক আহসানুল হক রহমানের
নেতৃত্বে শহরের সার্কিট হাউজপাড়ার
নুরুল ইসলামের বাড়ির ৯টি
জানালা ও ১০ দরজা
খুলে নেয়া হয়। এ দিন
দুপুরেই ছাত্রনেতা রহমানকে গ্রেপ্তার
করে পুলিশ।
পরদিন তাকে বহিষ্কার করে
কেন্দ্রীয় কমিটি।
অন্যদিকে, ১০ সেপ্টেম্বর
যশোর আদালত প্রাঙ্গণে আসামিকে
মারপিট ও অপহরণকালে জেলা
ছাত্রলীগের উপ-সাংস্কৃতিক
সম্পাদক ওমর ফারুক রয়েল
আটক হন।
এ
ঘটনার পরদিন বহিষ্কার করা
হয়
ছাত্রলীগ নেতা রয়েলকে। আর চোরাই
ট্রাক বিক্রি ও প্রতারণা
অভিযোগে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি
আরিফুল ইসলাম রিয়াদের বিরুদ্ধে
মামলা রয়েছে।
এছাড়া শহরের মাদক ব্যবসায়ী
ও
সন্ত্রাসীদের শেলটার দেয়ার
অভিযোগ তুলেছেন খোদ দলের
নেতারাই। ২০১৩
সালের ২২ এপ্রিল দেশিয়
অস্ত্রসহ পুলিশের হাতে আটক
হন
সহসভাপতি হালিম বিশ্বাস। অপরদিকে, শহরের শীর্ষ
সন্ত্রাসী দুটি হত্যামহ একাধিক
মামলার আসামি ম্যানসেলকে ছাত্রলীগের
শহর শাখার নেতা দাবি
করে তার নামে মামলা
প্রত্যাহার দাবি করেছে
জেলা ছাত্রলীগের একাংশ। এনিয়ে ব্যাপক
সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ে যশোর জেলা
আওয়ামী লীগের সভাপতি আলী
রেজা রাজু বলেন, ‘যারা দুর্বৃত্ত
তারা দুর্বৃত্তই।
মানুষ খুন, ছিনতাই, জমি
দখলের জন্য বঙ্গবন্ধু ছাত্রলীগকে
জন্ম দেয়নি।
কিন্তু দুর্ভাগ্যেজনক হলেও সত্য,
এখন ছাত্রলীগ নেতা হয়ে
তারা এসব অপকর্মে জড়িয়ে
পড়ছে। এক প্রশ্নের জবাবে
আলী রেজা রাজু বলেন,
‘আমরা ছাত্রলীগের অভিভাবক হলে
কি
হবে, অভিভাবকরা যদি দুর্বৃত্তদের
নেতা বানায় কিংবা দৃর্বৃত্তদের
কাছে টানে তাহলে যা
হওয়ার তাই হবে।’ এবিষয়ে যশোর জেলা
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক
শাহীন চাকলাদার বলেন, ‘কলেজছাত্র না
হয়েও জেলা আওয়ামী লীগ
সভাপতির সুপারিশে বিবাহিত মাদকসেবী
রিয়াদকে সভাপতি পদ দেন
কেন্দ্রীয় কমিটি।
আর
তার সুপারিশে এমএ পাস
আনোয়ার হোসেন বিপুল সাধারণ
সম্পাদক মনোনীত হয়েছিলো। অছাত্ররা ছাত্রলীগের
নেতা হওয়ায় এ অবস্থা
হয়েছে।’