আজিম খান চৌধুরী:
ঘটনাটা এখনও স্পষ্ট মনে আছে৷ প্রায় এক যুগ আগে বন্ধুর সঙ্গে মোটর সাইকেলে কোনো এক জায়গায় যাচ্ছি৷ সম্ভবত শ্রাবন মাস, আকাশের অবস্থা এই ভালোতো এই মন্দ ৷ বৃষ্টি শুরুর ঠিক আগে রাস্তার পাশে এক চায়ের দোকানে আশ্রয় নিলাম৷ টিনের চাল আর বাঁশ বেতের দেয়াল তাতে বিভিন্ন রকমের নিউজ পেপার আর পোস্টার আঠা দিয়ে লাগানো ৷ দোকানের ভিতর একটা নোটিস দেখে সঙ্গের বন্ধুটি হঠাৎ খেক করে হেসে উঠলো ৷ সাদা কাগজে লাল রঙ্গে লেখা 'রাজনৈতিক আলাপ নিশেদ' ৷ বানান ভুল দেখে সে হাসছে ৷ 'অর্থ এবং বানানে ভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও কোনো কোনো শব্দের ভাব বা উচ্চারণ বুঝে নিতে হয়' তখনও এই জ্ঞানটুকু আমাদের দুজনের একজনেরও ছিলনা ৷ আশেপাশে মানুষ বলতে আমরা দুজন, দোকানদার আর মধ্য বয়স্ক এক চাচা, আর কেউ নেই ৷ কথার স্টাইলে বুঝলাম দোকানদার রসিক মানুষ ৷ দু'জনে রসিকতা করেই জানতে চাইলাম এই সাইনবোর্ড কেন টাঙিয়েছেন, তাতে কাজ হয় কি না ? চাচা ভয়াবহ এককান গালি দিয়ে বাক্য শুরু করলেন "বুঝলা বাবা ... নির পোলারা দুই টাকার চা খায় না; আইসা ব্যবসার বারোটা বজায় ৷ খুবই উশৃঙ্খল পোলাপাইন, টেবিলে থাবা দিয়া দিয়া কথা কয়, কাপ ভাঙ্গে গেল্লাস ভাঙ্গে, মাইরপিট করে" ৷ কথাগুলার প্রমান দেয়ার জন্য ঘরের কোনায় ভাঙ্গা কাপের স্তূপ দেখালেন ৷
সেদিনের সব কথা মনে নেই ৷ তবে এখন মনে হয় আমরা আসলেই সমাজের ক্ষুদ্র জীব। আমরা যখন আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অধিকার নিয়ে এক সময় চঞ্চল হয়ে উঠি, তখন সমাজের বড় বড় হিংস্র জীব আধারে বসে এই চঞ্চলতায় আরো উৎসাহ দেয় ৷ ন্যায় অন্যায়ের শিক্ষা তারা কখনো দেয় না, দেয় হিংস্রতার প্রশিক্ষণ ৷ আমর মত ক্ষুদ্র জীবগুলোর আর মানুষ হয়ে ওঠা হয় না ৷ আমাদের দিয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে এর বেশি কিছু দায়িত্ব তারা নেয় না ৷ তাদের উদ্দেশ্য একটাই 'শুকনা ভেজার প্রশ্ন নাই উলটপালট করে দে মা দেশটা লুটেপুটে খাই' ৷ তবে ব্যতিক্রমও হয়, যারা মানুষকে মানুষের নীতি শিক্ষা দেয় ৷ তাদেরকেতো সম্মান জানাতে হবে ৷
সেদিনের সব কথা মনে নেই ৷ তবে এখন মনে হয় আমরা আসলেই সমাজের ক্ষুদ্র জীব। আমরা যখন আমাদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অধিকার নিয়ে এক সময় চঞ্চল হয়ে উঠি, তখন সমাজের বড় বড় হিংস্র জীব আধারে বসে এই চঞ্চলতায় আরো উৎসাহ দেয় ৷ ন্যায় অন্যায়ের শিক্ষা তারা কখনো দেয় না, দেয় হিংস্রতার প্রশিক্ষণ ৷ আমর মত ক্ষুদ্র জীবগুলোর আর মানুষ হয়ে ওঠা হয় না ৷ আমাদের দিয়ে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করে এর বেশি কিছু দায়িত্ব তারা নেয় না ৷ তাদের উদ্দেশ্য একটাই 'শুকনা ভেজার প্রশ্ন নাই উলটপালট করে দে মা দেশটা লুটেপুটে খাই' ৷ তবে ব্যতিক্রমও হয়, যারা মানুষকে মানুষের নীতি শিক্ষা দেয় ৷ তাদেরকেতো সম্মান জানাতে হবে ৷
দুই.
আমার মতে সাধারণ মানুষের দেশ নিয়ে চিন্তাটা মোটেও রাজনৈতিক নয় ৷ যাদের স্বার্থ আছে তাদেরটা রাজনীতি ৷
এরশাদ ক্ষমতায়, আমি তখন খুব ছোট ৷ প্রচন্ড ডানপিঠে আমার এক আত্মীয় কুকুরের গলায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি হুসাইন ম: এরশাদের ছবিটি ঝুলিয়ে দিলেন ৷ তারপর তার কপালে যা ঘটার তাই ঘটল ৷ তখনও দেশে কালো পোশাকের ব্যাবের সৃষ্টি হয়নি। হলে হয়ত সোজা ক্রসফায়ার হত ৷ ব্যাপারটা জেল হাজত পর্যন্তই গড়ালো ৷ এ পর্যন্তই শুনেছি ৷ আমার পক্ষে এখানে এর চেয়ে বেশি উদ্ধৃতি দেয়া সম্ভব নয় ৷ বিষয়টা তাকে কখনো জিজ্ঞস করা সম্ভব হয় নি ৷ সেই থেকে তিনি ইউরুপ এমেরিকার মত অন্য একটি মহাদেশে বসবাস করছেন ৷
কিন্তু সময় যে কাকে কখন কোন পর্যায়ে নিয়ে আসে সেটাই সবচাইতে বড় বিস্ময় ৷ সেদিন একজন বললেন 'এক সময়ের প্রচন্ড প্রতাপশালী এরশাদ সাহেবের অবস্থা এখন সবাই জানেন ৷ পলিটিক্যালি এত নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে নিজেকে সে যেভাবে অপমান করলো এখন একটা মানুষ যে আগ্রহ নিয়ে তার ছবিটা একটা পশুর গলায় দেবে এমন পশুও হয়ত পাওয়া যাবেনা ৷' দাম্ভিক অহংকারীদের জন্য সময়ই যথেষ্ট ৷ সময় খুবই নিষ্টুর প্রতিশোধ পরায়ন ৷
আমার মতে সাধারণ মানুষের দেশ নিয়ে চিন্তাটা মোটেও রাজনৈতিক নয় ৷ যাদের স্বার্থ আছে তাদেরটা রাজনীতি ৷
এরশাদ ক্ষমতায়, আমি তখন খুব ছোট ৷ প্রচন্ড ডানপিঠে আমার এক আত্মীয় কুকুরের গলায় মহামান্য রাষ্ট্রপতি হুসাইন ম: এরশাদের ছবিটি ঝুলিয়ে দিলেন ৷ তারপর তার কপালে যা ঘটার তাই ঘটল ৷ তখনও দেশে কালো পোশাকের ব্যাবের সৃষ্টি হয়নি। হলে হয়ত সোজা ক্রসফায়ার হত ৷ ব্যাপারটা জেল হাজত পর্যন্তই গড়ালো ৷ এ পর্যন্তই শুনেছি ৷ আমার পক্ষে এখানে এর চেয়ে বেশি উদ্ধৃতি দেয়া সম্ভব নয় ৷ বিষয়টা তাকে কখনো জিজ্ঞস করা সম্ভব হয় নি ৷ সেই থেকে তিনি ইউরুপ এমেরিকার মত অন্য একটি মহাদেশে বসবাস করছেন ৷
কিন্তু সময় যে কাকে কখন কোন পর্যায়ে নিয়ে আসে সেটাই সবচাইতে বড় বিস্ময় ৷ সেদিন একজন বললেন 'এক সময়ের প্রচন্ড প্রতাপশালী এরশাদ সাহেবের অবস্থা এখন সবাই জানেন ৷ পলিটিক্যালি এত নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে নিজেকে সে যেভাবে অপমান করলো এখন একটা মানুষ যে আগ্রহ নিয়ে তার ছবিটা একটা পশুর গলায় দেবে এমন পশুও হয়ত পাওয়া যাবেনা ৷' দাম্ভিক অহংকারীদের জন্য সময়ই যথেষ্ট ৷ সময় খুবই নিষ্টুর প্রতিশোধ পরায়ন ৷
তিন.
ইসলামের চরম দুশমন আবু লাহাবকে সবাই চেনেন ৷ তৃতীয় খবরটি আলহ্বাজ ইনু লাহাবের ৷ সারা জীবন যার এন্টি ইসলাম রাজনীতি ৷ কিছু মানুষের নামের আগে আলহাজ টাইটেল দেখে স্বয়ং ইবলিসও মনে হয় বলে 'তখন আবু লাহাবের নামের আগে হাজী লাগালেও মন্দ হত না' ৷ আবু লাহাবরাও তাদের মত করে হ্বজ করত ৷ নবী করিম (সঃ) দুনিয়াতে আসার আগেও নবী ইব্রাহিম (আঃ) এর আমল থেকেই মক্কায় মানুষ হজ পালন করে আসছে ৷ ভারতীয় উপ মহাদেশের মানুষ ছাড়া অন্য কোনো দেশের মুসলমানরা নিজের নামের আগে কিংবা পরে আলহাজ বা হাজী টাইটেল যোগ করেন কিনা আমার জানা নেই ৷ আরবরাতো লাগায়ই না ৷ হ্বজ হচ্ছে নামাজ রোজার মতই ইসলামের ৫ রুকনের একটি ৷ যাদের পয়সা আছে যাকাত দেবে হ্বজ করবে ৷ আমার মতে নামের আগে যদি হাজী লাগানো যায় তবে নিয়মিত যারা নামাজ পড়েন তারা নামের আগে 'নামাজি' কিংবা যাকাত যারা দেন নামের আগে 'জাকাতি' লাগলেও পারেন ৷ না কি বিত্তের প্রতিযোগিতা হ্বজ কোরবানী এসব ছাড়া অন্যগুলো দিয়ে জমেনা ?তবে এটা সত্য আবু লাহাবেরা এখনো হ্বজ করে ৷ ১৯৯৮ সালে লতিফ সিদ্দিকীও হ্বজে গিয়েছিলেন ৷ অথচ তিনি মনে মনে ইসলামকে ঘৃনা করতেন ৷ চাপে পরে তার মত অনেকেই হ্বজে যান ৷ এবার কিছু বাম রাজনীতিবিদও গিয়েছিলেন ৷ এসেই আলহাজ টাইটেলটি নামের আগে লাগিয়ে সভা সমাবেশও করছেন ৷ উদ্দেস্য কিছুই না লতিফ সিদ্দিকী বলছেন নেত্রী বললে হ্বজ ও ধর্ম বিরুধী বক্তব্য প্রত্যাহার করবে। হয়ত অন্যরা ও নেত্রীর হুকুমেই হজে গিয়েছেন ৷ কে জানে কার মনে কি ? উনারা আমাদের পয়সায় হ্বজ করবেন আর আমরা তাদের ধমকে রাজনৈতিক আলাপ বন্ধ করব ৷ আমাদের তাদের বিরুদ্ধে কিছু বলাটাই রাজনীতি, ইহা মহা পাপ ৷ হাওয়া পাল্টালে এই পাপও যে পুন্যের দামে বিকে ৷
বেশতো ভালই ৷ হয়ত এজন্যই চা দোকানের চাচা নিজের নিরাপত্তার জন্য এসব ফাও আলাপ শুনতেও চান না বুঝতে ও চান না ৷ রাজনৈতিক আলাপ মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তৈরী করে ঠিক; কিন্তু পুরানো সম্পর্ক ভেঙ্গে খানখান করে ৷ তাই আমিও চাই ভুল বানানেই হউক রাজনৈতিক আলাপ নিষেধ ৷
২৬ অক্টোবর ২০১৪
লন্ডন।
লন্ডন।