পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী (মূল সেতু) দেওয়ান মো. আব্দুল কাদের জানান, এসব স্থাপনা এসে পেঁৗছলেই আনুষ্ঠানিকভাবে মূল সেতুর কাজ শুরু হবে। শিগগিরই দেশের মানুষও মূল সেতুর দৃশ্যমান অগ্রগতি নিজ চোখে দেখতে পাবে। স্বপ্নের সেতু বাস্তবরূপ লাভ করছে দেখে পদ্মাপারের লাখো মানুষও খুশি বলে তিনি জানান। এদিকে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া মোহনার গভীর সুমদ্রে পদ্মা সেতুর তৃতীয় শিপমেন্টের মালামাল খালাস গত বুধবার বিকাল থেকে শুরু হয়েছে। বিশেষ ব্যবস্থায় কাস্টমসের কার্যক্রম সেখানেই হচ্ছে বলে জানা গেছে।
সেনাবাহিনীর ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগ্রেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শাহ্ নূর জিলানী (পিএসসি) জানান, পদ্মা সেতু এলাকার মাওয়ায় ব্যাপক ভাঙন ঠেকাতে এবং এ অঞ্চলের বাড়িঘর রক্ষা করে মানুষগুলোকে পদ্মার রাহুগ্রাস থেকে উদ্ধারে জরুরি আপৎকালীন প্রতিরক্ষা বাঁধের কাজ গত মে মাসে শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, তীর হতে নদীর দিকে প্রায় ১৩০ মিটার পর্যন্ত স্তরে স্তরে বালুর বস্তা ফেলে নদীর তলদেশ সমান করে ভাঙ্গণ রক্ষায় বাঁধ দেয়া হয়েছে।
ব্রিগেডিয়ার বলেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর নদীর তলদেশে আধুনিক যন্ত্র দিয়ে জরিপ করে দেখা গেছে, গেলো বর্ষায় এ কাজের কোন ক্ষতিই হয়নি। ফলে আপৎকালীন বাঁধটি এ অঞ্চলের জন্য আপাতত নিরাপদই বলা যায়। প্রায় ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ের পানি উন্নয়ন বোডের্র নক্সা অনুযায়ী ১৩শ' মিটার দৈর্ঘ্যের এ প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনী বালুর মান পরীক্ষার জন্যও অধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেছে।
তিনি বলেন, কাজের মান বজায় রাখা ও মনিটরিং করতে সেনাবাহিনী এখানে বালুর মান নির্ণয়নের জন্য বিশেষ যন্ত্র বসিয়েছে। এ যন্ত্রের মাধ্যমে বালুর মান পরীক্ষা করে বস্তায় ভরে নদীতে ফেলা হয়। তাছাড়া ভিডিও রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে কাজের মনিটরিং করা হয়।
জেনারেল নূর বলেন, ১৪ লাখ জিও ব্যাগ ভর্তি বালু নদীতে ফেলা হয়েছে। প্রাথমিক ও জরুরি ভিত্তিতে এ তীর রক্ষা বাঁধ দিয়ে পদ্মা সেতুর এ এলাকাকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষা করা হচ্ছে। তাছাড়া মাওয়া ঘাটকে শিমুলিয়ায় স্থানান্তরের রাস্তা নির্মাণের কাজও সেনা বাহিনী শুরু করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় সেনাবাহিনী প্রায় ২ কি.মি রাস্তা নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনী দোগাছি সার্ভিস এড়িয়া-১ তেও সেনাবাহিনী সিমেন্ট, বালু, রড, ইট, পাথরের মান নির্ণয়নের জন্য একটি আধুনিক পরীক্ষাগারও স্থাপন করেছে। মূলত সেনাবাহিনীর ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগেড ২০ বেঙ্গল বেটেলিয়ান পদ্মা সেতুর সকল ধরণের নিরাপত্তার কাজ করছে। আর ২০ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্যাটেলিয়ানের কর্নেল সারোয়ারের নেতৃৃত্বে পদ্মা সেতুর এ প্রান্তে প্রায় ২ কিমি অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ গত বছর শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালের মাঝামাঝি এসব কাজ সেতু কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা রয়েছে।
পদ্মা সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (নদী শাসন) শারফুল ইসলাম জনান, সিনো হাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেন নামে চায়নার একটি কোম্পানি নদী শাসনের কাজের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এ ব্যাপারে তাদের সাথে সমঝোতা হয়েছে। এখন শুধু চুক্তি বাকি। চুক্তি হলেই তাদেরকে কার্যাদেশ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, প্রায় ৮ হাজার ৭ শ' ৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যায়ের নদী শাসনের এ প্রকল্পে মাওয়া প্রান্তে প্রায় ২কিমি ও জাজিরা প্রান্তে প্রায় ১২ কিলোমিটার নদী শাসনের কাজ হবে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড মাওয়া প্রান্তে আরো ৪ থেকে ৬ কি. মি. নদী শাসনের কাজ করবে বলে জানা গেছে।
বিশাল এ সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী (পূর্ণবাসন প্রকল্প) মো. তোফাজ্জেল হোসেন জানান, পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য সর্বমোট ১১ শ' হেক্টরেরও অধিক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। তার মধ্যে মাওয়া প্রান্তের জশলদিয়া ও কুমারভোগ পুনর্বাসন প্রকল্পসহ দুটি অতিরিক্ত পূর্ণবাসন কেন্দ্রের জন্য ৩০ দশমিক ০৮ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। এসব পুনর্বাসন কেন্দ্রে মোট ৯৯৮টি প্লট তৈরি কার হয়েছে। এরমধ্যে ৪৫০টি প্লট ইতিমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিকদের মধ্যে বিলি করা হয়েছে। বাকীগুলোও প্রক্রীয়াধীন রয়েছে।
এদিকে লৌহজং উপজেলার পশ্চিম কুমারভোগের জয়নাল বয়াতির ২০ শতাংশের বাড়ি পদ্মা সেতুর জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। অধিগ্রহণের যাবতীয় ক্ষতিপূরণ এবং এনজিওর মাধ্যমে অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ পাওয়ার পরও বয়াতী ৫ শতকের পরিকল্পিত প্লট পাচ্ছেন। তাই এই বৃদ্ধ বেজায় খুশি।
বয়াতীর স্ত্রী সূর্যবানু পুরনো বাড়ি হারানোয় মনকষ্ট থাকলেও আবার সেতু নির্মাণের কর্মযজ্ঞতায় তিনি বেজায় খুশি। তিনি বলেন, বিশাল এই সেতুর সাথেই মিশে থাকবে তার পুরনো বাড়ির স্মৃতি। স্থানীয় সাংসদ অধ্যাপিকা সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, পদ্মা সেতু নির্মিত হলে দক্ষিণাঞ্চল ও মুন্সীগঞ্জ শুধু নয়, গোটা দেশের অর্থনীতিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। সেতুটির গুরুত্বপূর্ণ অংশ মুন্সীগঞ্জে তার নির্বাচনী এলাকার হওয়ায় তিনি সৌভাগ্য বলে দাবি করেন।
তিনি বলেন, সঠিকভাবে বোঝানো গেছে বলেই মানুষ জমি দেয়াসহ সব ক্ষেত্রেই সহযোগিতা করছে। সেতুটি সুষ্ঠু ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং সঠিক নেতৃত্বের কারণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানান।
পদ্মা সেতুকে ঘিরে মাওয়া-জাজিরা সেনানিবাস হচ্ছে। এখানে কর্মরত সেনাবাহীনির ৯৯ কম্পোজিট ব্রিগ্রেড ইতোমধ্যেই কাজ শুরু করেছে। এই ব্রিগ্রেডের আওতায় দুই হাজার সেনা সদস্য কাজ করছে। এই সেনা সদস্যরা আপাতত পুনর্বাসন কেন্দ্রে উঠেছে। এই ব্রিগেডের কমযজ্ঞে এখানে বিশেষ মাত্রা যুক্ত হয়েছে।
