Latest News

বৈধতা দিলে মঈন-ফখরুদ্দীন সরকার বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাতো - খালেদা

এসবিএন ডেস্ক: ১২ নভেম্বর, বুধবার  কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠে ২০ দলীয় জোট আয়োজিত সমাবেশে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, এদেশের মানুষ আমাকে তিনবার প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছে। এই শেষ সময় এসে বলছি ক্ষমতা চাই না। দেশের মানুষের সঙ্গে থাকতে চাই। উন্নয়ন ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়তে চাই। ক্ষমতায় আসা প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন,  মঈন-ফখরুদ্দীন সরকার আমাকে বলেছিল— আমি যদি তাদের বৈধতা দেই, তাহলে তারা বিএনপিকে ক্ষমতায় বসাবে। তাদের সঙ্গে আমি কোনো আপোষ করিনি। সেদিন তাদের বলেছিলাম— তোমরা বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তোমরা ক্ষমতায় বসানোর কে। দেশের জনগণ যাকে চাইবে তারাই ক্ষমতায় বসবে। আমি কারো ডিকটেশনে কাজ করি না।
নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগাম নির্বাচনের দাবিতে বিভিন্ন জেলায় গণসংযোগের অংশ হিসেবে কিশোরগঞ্জে জনসভার আয়োজন করা হয়। সরকারের বিরুদ্ধে বিরোধী দলকে দমন-পীড়নের অভিযোগ তুলে প্রতিরোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেন, ‘বেশি অত্যাচার-নির্যাতন হলে ঈশা খাঁর ঢাল-তলোয়ারের কথা আপনাদের মনে আছে? আপনারা তা বুঝে নেবেন। আমি যখনই আন্দোলনের ডাক দেব, আপনারা অতীতের মতো সাড়া দেবেন।’
গুম ও হত্যাকাণ্ডের জন্য র্যাব এবং বিরোধী দলের ওপর গুলিবর্ষণের জন্য পুলিশকে দায়ী করে এই দুটি সংস্থাকে অস্ত্র ও গোলাবারুদ না দিতে অন্য রাষ্ট্রগুলোর প্রতি আহ্বান জানান খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, বিদেশিদের বলব— এই দুটি প্রতিষ্ঠান জঙ্গি দমনের নামে দেশের যুবকদের হত্যা করছে। সাধারণ মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ করছে।
নারায়ণগঞ্জের সাত হত্যাকাণ্ডে র্যাবের সম্পৃক্ততার অভিযোগ তুলে এই বাহিনীকে প্রশিক্ষণ না দিতেও জাতিসংঘের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
দুর্নীতি দমন কমিশন বাতিলের দাবি জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, এটি দুর্নীতির কমিশন। এটি দুর্নীতির আখড়া। এটি ক্ষমতাসীনদের দায় মুক্তির কমিশন। তাদেরকেও বিদায় করতে হবে।
খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে দলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক উত্সাহ-উদ্দীপনা। কিশোরগঞ্জের প্রবেশপথ ভৈরব-মেঘনা সেতু থেকে সার্কিট হাউস পর্যন্ত ৫৭ কিলোমিটার পথের বিভিন্ন স্থানে নির্মাণ করা হয়েছে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ জেলা নেতাদের প্রতিকৃতি সংবলিত কয়েকশ তোরণ।
জনসভায় অংশ নিতে সকাল থেকেই জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিএনপি ও বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা গুরুদয়াল কলেজ মাঠে আসতে শুরু করেন। পড়ন্ত বিকালে জনসভাস্থল পেরিয়ে আশপাশের এলাকা লোকে লোকরণ্য হয়ে যায়।

২০০৬ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় খালেদা জিয়া সর্বশেষ কিশোরগঞ্জ এসেছিলেন। ২০০৮ সালে নির্বাচনী প্রচারে অংশ নিতে ভৈরবে এলেও ওই সময় তিনি জেলা শহরে আসেননি।
গত ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর ঢাকার বাইরে এটি খালেদা জিয়ার ষষ্ঠ জনসভা। সর্বশেষ গত ১ নভেম্বর নাটোরে জোটের এক জনসভায় বক্তব্য দেন তিনি।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কথার প্রসঙ্গ টেনে খালেদা জিয়া বলেন, দলীয় ও অযোগ্য লোক বসিয়ে রাষ্ট্রায়াত্ত ব্যাংক ধ্বংস ও দেউলিয়া করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন তারা ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বলেননি আমি ব্যর্থ হয়েছি। অর্থাত্ এই সরকার শুধু অবৈধই নয়; তারা ব্যর্থ সরকার। তাদের ক্ষমতায় থাকার কোনো অধিকার নেই।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের নানা দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, শেয়ারবাজার দুর্নীতি করে রাষ্ট্রয়াত্ত ব্যাংকগুলো ফোকলা করে দিয়েছে। এখন ব্যাংকগুলোকে বাঁচিয়ে রাখতে জনগণের ট্যাক্সের টাকা সেখানে দেয়া হচ্ছে। এর মানে তারা দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। দুর্নীতিবাজরা এখন শেখ হাসিনার ভাষায় দেশপ্রেমিক।
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ আসার পথে রাস্তার দুরবস্থার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, দেশের কী অবস্থা। দেশে কোনো উন্নয়নমূলক কাজ হয় না। দেশে নির্বাচিত সরকার নেই।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপির কর্মসূচি হচ্ছে শান্তিপূর্ণ। অথচ সেই শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হয়। আওয়ামী লীগ প্রতিনিয়ত সভা-সমাবেশ করছে; কিন্তু বিএনপিকে করতে দেয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে কোনো কারণ ছাড়াই পুলিশ মোতায়েন থাকে। ৭ নভেম্বর বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের জন্য অনুমতি চাইলেও তা করতে দেয়া হয়নি। জনগণের মন থেকে এই দিনকে মুছে ফেলতেই সরকার এ সমাবেশ করতে দেয়নি। 
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আগামী দিনে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেয়া হলে, অন্য কোনো পথ থাকবে না। তখন যে কর্মসূচি দেব সেই কর্মসূচিতে আপনারা থাকবেন?
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সিরাজ-উদ-দৌলা ও মীর জাফর আছে। মীর জাফররা জিয়াউর রহমানকে হত্যা করেছে। ক্ষমতাসীনদের তিনি নব্য মীর জাফর আখ্যা দিয়ে বলেন, এদেরকে বিদায় করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। তাহলেই এই অবৈধ ও ব্যর্থ খুনি সরকার বিতাড়িত হবে। পুরনোকে ঝেড়ে ফেলে দুর্নীতিকে মুক্ত করে নতুনভাবে যাত্রা শুরু করব। পরিবর্তন আনব, পরিবর্তন আসবেই। 
খালেদা জিয়া বলেন, ওয়ান-ইলেভেনে মিথ্যা অভিযোগে আমার বিরুদ্ধে পাঁচটি এবং দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্যা মামলা দেয়া হয়। ওই সময়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর বিরুদ্ধে পনেরোটিসহ তাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সাত হাজার মামলার সবই তুলে নেয়া হলেও আমাদের মামলাগুলো সচল রাখা হয়েছে। যার বিচার কাজ চলছে এখন।
বিচারকদের উদ্দেশে বলেন, সরকারদলীয়দের মামলা তুলে নেয়া হলেও আমাদের মিথ্যা অভিযোগে দায়ের করা মামলাগুলো কেন তুলে নেয়া হবে না। যদি সুষ্ঠু বিচার না করেন, তাহলে যত বড়ই বিচারপতি হোন না কেনো; আল্লাহই এর বিচার করবেন। সবাইকে পরপারে হিসাব দিতে হবে।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং স্বেচ্ছাসেবক লীগ— এই তিন লীগ এক হয়ে সারাদেশে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। এই তিন লীগই ক্ষমতাধর। এরা কারো ধার ধারে না। দেশে এখন লুটপাট ও দুর্নীতি চলছে। আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে। এসব কারণে দেশি-বিদেশি কেউ এখন আর বিনিয়োগ করছে না।
জেলা বিএনপির সহসভাপতি শরিফুল আলমের সভাপতিত্বে জনসভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ, মির্জা আব্বাস, নজরুল ইসলাম খান,  চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. ওসমান ফারুক, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, অর্থ সম্পাদক আব্দুস সালাম, জেলা সভাপতি ফজলুররহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com