আশুরার দিনে যারা তাজিয়া তৈরি করে পথে প্রান্তরে পর্তন কুর্দন ও অন্যান্য অনৈসলামিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ইমাম হুসাইন রা. এর স্মৃতি বিজড়িত ঘটনাকে লোক চোখে তুলে ধরতে চায় তা ইসলাম সমর্থন নয়
মো: লুৎফুর রহমান বাবু, প্যারিস: গত ২২ নভেম্বর শনি বার সন্ধ্যায় প্যারিসের অভারভিলার সোনার বাংলা রেষ্টুরেন্টে ফ্রান্সের ইন্সটিটিউট অফ আল কুরআন এন্ড সোসিয়াল সাইন্স(আই কিউ এস এস )এর উদ্যেগে পবিত্র আশুরার তাৎপর্য ও শিক্ষা শীর্ষক সেমিনার ও আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।
এস এম হায়দারের সভাপতিত্বে ও শামিম মোল্লার পরিচালনায় আলোচনা অনুষ্ঠান ও সেমিনারে অংশগ্রহণ করে বক্তব্য রাখেন এডভোকেট রমিজ উদ্দিন, আব্দেল জলিল,মাষ্টার সুরুজ আলী, অধ্যাপক সামসুল ইসলাম, মৌলানা বেলাল আহমেদ, আবু তাহের, মৌলানা ইলিয়াস আহমেদ, জহুরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান প্রমুখ।অনুষ্ঠানের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মৌলানা বদরুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতে কুর আন ও নাত পরিবেশন করেন ক্বারি নাসিম আজাদ।
মূল প্রবন্ধে মৌলানা বদরুল ইসলাম বলেন, ১০ মুহাররম হযরত আলী রা. এর নয়নমণি নবী তনয় ফাতিমার রা.-এর কলিজার টুকরা ইমাম হুসাইনের স্বপরিবারের উনিশজন সদস্যসহ তাঁর বাহাত্তর জন অনুসারীকে যেভাবে ইয়াজিদ বাহিনী কর্তৃক নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করতে হয়েছিল, কিয়ামত পর্যন্ত বিশ্ব মুসলিমের হৃদয়কে যে ব্যথিত করবে তাতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই। আর তাই মুহাররম মাসের আগমনে নতুন করে মুসলমানদের হৃদয়ের নিভৃতে মুহররমের নির্মম স্মৃতি যেন সকল ঐতিহাসিক ঘটনাকে ম্লান করে দেয়। ঈমানদার মাত্রই এহেন নির্মম ঘটনায় মর্মাহত হবে এবং হওয়াই ঈমানের দাবী।
আমাদের কিছু সংখ্যক অজ্ঞ মুসলমান কারবালার হৃদয় বিদারক ঘটনাকে স্মরণ করে নিজেদের মনগড়া কিছু কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়ে এই দিনের তাৎপর্যকে নষ্ট করে। ঐদিন তারা তাজিয়া তৈরি করে পথ ঘাটে বুক থাবড়িয়ে মাতম করে। ইমাম হুসাইনের কৃত্রিম কবর তৈরি করে অনৈসলামিক ‘কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়।
আসলে আশুরার দিনে যারা তাজিয়া তৈরি করে পথে প্রান্তরে পর্তন কুর্দন ও অন্যান্য অনৈসলামিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে ইমাম হুসাইন রা. এর স্মৃতি বিজড়িত ঘটনাকে লোক চোখে তুলে ধরতে চায় তা ইসলাম সমর্থন নয় ।
যদিও অনেকের ধারণা কারবালার শোকাহত ও মর্মস্পশী ঘটনাই মুহাররম মাসের বৈশিষ্ট্য। আসলে তা ঠিক নয়। পৃথিবীর শুরু থেকেই মাহে মুহাররম দশম দিবস অতি পূণ্যময় ও তাৎপর্যপূর্ণ এবং এ মাসটি অত্যন্ত সম্মানীত ও মর্যাদাপূর্ণ হিসাবে বিবেচিত। জাহিলিয়াতের যুগেও আরবের মুর্খরা এ মাসটিকে সবিশেষ গুরুত্ব দিত। এমনকি এ মাসকে অতীব গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যপূর্ণ বিবেচনা করে অন্যায়, অবিচার, জুলুম-অত্যাচার, ঝগড়া-বিবাদ, দাঁঙ্গা-হাঙ্গামা, রাহাজানি ও যুদ্ধ-বিগ্রহ এড়িয়ে চলতো। আশুরা শুধু উম্মতে মোহাম্মদীর জন্যই নয় বরং পূর্ববর্তী উম্মতের কাছেও এই দিনটি একটি ফজিলতপূর্ণ দিন হিসাবে বিবেচিত হতো।
সভাপতি এস এম হায়দার তার বক্ত্যবে বলেন, শুধু আশুরা উপলক্ষ্যে নয়, জীবনের অন্যান্য সময়ও যেন আমরা ইসলামকে অনুসরণ করতে পারি ।বিশেষকরে আমাদের নতুন প্রজন্মকে যেন অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামি শিক্ষায় শিক্ষিত করি, সে বিষয়টি সবার খেয়াল রাখা উচিত। তিনি আরও বলেন, আল কুরআন একাডেমীর মাধ্যমে আমরা ইসলামী বিশেষ দিন সহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করে যাচ্ছি।আমাদের এ কার্যক্রমে আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।
সেমিনার ও আলোচনা শেষে মোনাজাত পরিচালনা করেন অভারভিলা বাংলাদেশ জামে মসজিদের খতিব আব্দুস শহিদ।