Latest News

নারী ও শিশু পাচার বাড়ছেই

এসবিএন ডেস্ক:  বাংলাদেশ থেকে নারী ও শিশু পাচারের মাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশে নারী ও শিশু পাচারের একটি উৎস এবং ট্রানজিট রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত। প্রতিদিন এদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী এবং শিশু সীমান্ত দিয়ে অথবা বিমানে পাচার হয়ে যাচ্ছে। ইউনিসেফ ও সার্কের এক হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বছর প্রায় সাড়ে ৪ হাজার নারী ও শিশু পাচার হচ্ছে।  পাচারকৃত নারী ও শিশুদের নিয়োগ করা হচ্ছে পতিতালয়ে বা অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ এবং শ্রমঘন অমানবিক কর্মক্ষেত্রে৷  তবে সরকার, বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও বেসরকারী সাহায্য সংস্থা নারী ও শিশু পাচার প্রতিরোধে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহন করেছে৷
নারী ও শিশু পাচার নেটওয়ার্কের সদস্যদের মধ্যেও নারী রয়েছে। ৪০ ভাগ মানব পাচারকারী নারী স্থলপথে সীমান্ত অতিক্রমের মাধ্যমেই বেশিসংখ্যক নারী ও শিশু পাচার হয়। গোটা বিশ্ব জুড়েই রয়েছে পাচারকারীদের নেটওয়ার্ক৷ এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে তারা গরীব ঘরের ছেলে, মেয়ে ও নারীদের পাচারের উদ্দেশ্যে সংগ্রহ করে৷ তারা নারী পাচারের জন্য কতিপয় কৌশল অবলম্বন করে৷ যেমন-দেশ ও বিদেশে চাকুরির মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে, জোরপূ্র্বক অপহরণ করে, খাবার-জামাকাপড় দেওয়ায় প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে থাকে৷ কখনো পাতানো বিয়ের মাধ্যমে দরিদ্র ও অশিক্ষিত কিশোরী ও যুবতীদের ফাঁদে ফেলে৷ কোন কোন পাচারকারী চক্র শিক্ষিত ও সুন্দরী মেয়েদের দূর্লভ বৃত্তি, ফেলোশিপ এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরির ওয়ার্ক পারমিট দেখিয়ে প্রলুব্ধ করে৷ তারা পাচারকৃত নারীদের অনেক সময় মক্ষীরানীদের কাছে বিক্রি করে দেয়৷ পরবর্তী সময়ে তারা সমাজে পতিতা হিসেবে চিহ্নিত হয়৷ অনেক মহিলা দরিদ্রতা ও নির্যাতনের হাত থেকে রেহাই পেতে স্বেচ্ছায় এ পেশায় এসে থাকে৷ অনেকে উন্নত জীবনের আশায় পাচারকারীদের প্রলোভনে পা দিয়ে দেশের বাইরে পাড়ি জমায়৷
ভারত-পাকিস্তান ছাড়াও লেবানন, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে গৃহকর্মীর নামেও নারী পাচার করা হয়। পরে তাদের দেহব্যবসায় বাধ্য করা হয়। এ কারণেই জুন মাসে সংসদীয় কমিটি বিদেশে গৃহকর্মী না পাঠানোর সুপারিশ করেছে। জাতীয় সংসদের সরকারি প্রতিষ্ঠান কমিটির ৮৩তম বৈঠকে এ সুপারিশ করা হয়। এদিকে বিদেশ গিয়ে নারী শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধে মহিলা আইনজীবী সমিতি অভিবাসী গৃহকর্মীদের তথ্য ও ছবি সংবলিত ডাটাবেজ তৈরির সুপারিশ করেছে।
নারী ও শিশুদের পাচার করার উদ্দেশ্যের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- পতিতাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা, পর্ণগ্রাফি সিনেমায় ব্যবহার করা, মধ্যপ্রাচ্যে উটের জকি হিসেবে ব্যবহার করা, ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত করা, শরীরের রক্ত বিক্রি করা, অঙ্গ-প্রতঙ্গ কেটে ব্যবসা করা, মাথার খুলি, কঙ্কাল রপ্তানি করা৷
বাংলাদেশে নারীদের পাচার-ভোগান্তির হাত থেকে বাঁচাতে সরকার এরই মধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে।  সম্প্রতি মন্ত্রিসভা পাচার হওয়া নারী, শিশু উদ্ধার প্রত্যাবাসন এবং পুনর্বাসনের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের প্রস্তাব অনুমোদন করেছে।
অভিজ্ঞজনদের মত- প্রবাসে কর্মরত নারীর নিরাপত্তার কথা ভেবে আইনকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। নারীরা  বিদেশে কোন ধরনের চাকরি নিয়ে যায়, তা যাচাই করতে হবে। এই পাচার প্রতিরোধে সমাজের সকল অংশের মাঝে নারী ও শিশু পাচার প্রক্রিয়া এবং এর ফলাফল সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করতে না পারলে  নারী ও শিশুদের পাচার রোধ করা সম্ভব হবে না বলে  অভিজ্ঞজনরা মনে করেন৷

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com