কুদ্দুস ... ... ...
তাহমিনা শারমিন
বাড়ীটির নাম শান্তির নীড়। দোতলা সাদা বাড়ী। খুব বড় না হলেও
মোটামুটি দেখার মত এই বাড়ীটি। সদস্য সংখ্যা মাত্র তিন জন। অবশ্য তিনজন বললে ভূল
হবে। সব মিলিয়ে হবে. . . সাদিক (বাড়ীর ছোট সাহেব), মিনা (ছোট আপা) এবং তাদের মা
(আম্মা)। বাড়ীর কর্তা মানে ওদের বাবা মারা গেছেন প্রায় ৮-৯ বছর হল। কিন্তু রেখে গেছেন
অঢেল পৈত্রিক সম্পত্তি। যা দেখাশোনা করার জন্য প্রায়ই বাইরে থাকেন আম্মা। ও হ্যা.
. . আরো আছে, এ বাড়ীর দাড়োয়ান হাসমত,
পার্মানেন্ট বুয়া শেফালী এবং সবচেয়ে আদরের কুদ্দুস।
ভাবছেন এই ‘কুদ্দুস’ টা কে? ভাবছেন
সদস্যদের কথা বলা শেষ। কিন্তু না! এ বাড়ীর সকল আশ্রয়প্রাপ্ত প্রাণীই বাড়ীর সদস্য
বলে গণ্য। হাস্যকর হলেও সত্যি; অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, বাড়ীতে একটি ছোট কাল রঙের গরুও
আছে। যার নাম পারবতী,
অবস্থান বাড়ীর বাগানের পাশের দোচালা ঘরটাতে। এছাড়াও বাড়ীর
দোতলার বারান্দায় আরামে বসবাস করে অনেকে। সরি, বসবাস বললে ভূল হবে রাজত্ব করে
২৫টি মুরগী। এদের প্রত্যেকের আবার আলাদা আলাদা অর্থবহ নাম আছে। এদের সার্বক্ষণিক
দেখাশোনা করে মিনা। মিনার এত এত পোষ্য প্রাণীদেরকে কেউই পশু বলে সম্বোধন করতে
পারবেনা। এটা মিনা;
মানে ছোট আপার অর্ডার। মিনার একটি সর্বাধিক আদরের পাখীটির
নাম কুদ্দুস। কুদ্দুস একটি মোরগের নাম। এখন বর্ষাকাল। তাই মাঝে মাঝেই হঠাৎ করে
বৃষ্টির আবির্ভাব হয়। এমনই এক সকালে বৃষ্টির দিনে হঠাৎ কলিংবেলের শব্দ।
ক্রিং.. ক্রিং.. ..
(রুমের ভেতর থেকে সাদিকের গলা শোনা গেল ও পড়ার রুমে ছবি আঁকছিল।)
সাদিক: শেফালী. . . শেফালী....?
শেফালী: কি ছোট সাব..?
সাদিক: দেখত কে এল?
শেফালী: দেখতাছি। দেখতাছি। ইস, কাপড়
কয়ডা কাঁচার ও কোন শান্তি নাই। যহন তহন খালি ক্রিং ক্রিং..!
অসহ্য,( বলে,
হাত আচঁল দিয়ে মুছতে মুছতে সদর দরজা খুলতে গেল। দরজা খুলেই
বাংলার পাঁচ আঁকা মুখটা একেবারে রসগল্লার মত হল শেফালীর !)
দরজার ওপাশে টুলু মামা..
-
কি শেফালী ? কেমন আছ ?
শেফালী হাসতে হাসতে বলল,,
-
ভালই আছি মামা। আফনেরা কেমন আছেন ? এই ডলক
বিষ্টির মইদ্যে আইলেন কেমনে? মামীরে আনেন নাই ?
-
ভাল,
ভাল। তুই যদি এখনই এত প্রশ্ন করিস; তাহলে যে
সাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে তো এই বর্ষাতেই আমার গলা শুকিয়ে কাঠ হবে রে! তাই
না.. !!!???
এ কথা বলে মামা ও শেফালী খুব হাসল আর ইশারায় অন্যজনের
অবস্থান সম্পর্কে খোঁজ নিল। এর মাঝে সাদিক ও বড় আপা; অর্থাৎ
সাদিকের মায়ের সাথেও সৌজন্য আলাপ হয়ে গেল।
-
ও কোথায় বড় আপা?
-
কে?
মিনা? ও তো রুমেই আছে।
-
কি করছে?
-
আর কি; সবসময় যা করে তাই করে হয়তো।
যার কথা ইশারায় বলা হল; সে আর কেউ না। এ বাড়ীর মেয়ে মিনা।
মিনা সম্পর্কে বলতে গেলে অনেক কথা বলা লাগে। কিন্তু আজ সংক্ষেপে বলি। ও বেশ রাগী; কিন্তু
বেশিক্ষণ রেগে থাকতে পারে না। বিশেষ কিছু কর্মকান্ডের কারণে মিনার কিছু খ্যাতিও আছে
পাড়ায়; এমনকি আত্বীয় স্বজনদের কাছেও। সেই খ্যাতির জন্য সবাই মিনাকে নিয়ে বেশ মজা
করে।!!! বলতেনা বলতেই দো’তলা থেকে মিনা বেড়িয়ে নিচে ড্রয়িংরুমে নেমে এল। টুলু মামাকে একনজরে ভাল করে
দেখেই মুখ ভার করে সোফায় এসে বসে বসে রাগে মুখ ভ্যাংচাল কয়েকবার। দৃশ্যটা শেফালীর
বেশ পরিচিত। ব্যাপক মজা পায় ও মিনার রাগ দেখে।
-
কি রে মা! তোর কি হল? সবাই সুস্থ্য আছে তো?
মিনা একথা শুনে টুলু মামা ও সাদিকের দিকে একবার তাকিয়ে মুখ
বাকাঁ করে আবারও বসে রইল। মামা কিছুটা আন্দাজ করলেও পুরোটা বুঝতে না পেরে শেফালীর
সাহায্যের জন্য তাকালো। কিন্তু ওতো আরো অজ্ঞ। এ ব্যাপারে কোন কথা বলার না থাকায় ও
ওর কাজে চলে গেল। অন্যদিকে সাদিক মামাকে পেয়ে সেই রকম খুশি। সাথে পেয়েছে টফি আর
কয়েক রকমের মার্বেল। মার্বেলগুলো নিয়ে সাদিক তার একোরিয়ামে সাজালো। মিনা চুপ করে
দেখল। কিন্তু কিছু বললনা। মিনা ও সাদিকের মা এমনটা দেখে হেসে বলল - টুলু তোরা বস, আমি
তোদের জন্য চা-বিস্কুট আনি।
আচ্ছা ভাগ্নে; আজ সূর্য কোন দিকে উঠেছে রে?
-
মামা , আজ তো সারাদিন সূর্য ই উঠেনি। দেখছ না কি বৃষ্টি হচ্ছে আজ!!
-
সূর্যই উঠেনি! বলিস কিরে!? তাহলে কি হবে রে?
-
কেন মামা? কি ?!!!
-
আজ তো মহাবিপদ!!!
-
কত নম্বর বিপদ মামা?
-
১০ নম্বর ওে ভাগ্নে!!
-
১০ নম্বর??!!!
-
হ্যাঁ! দেখতে পাচ্ছিস না ? মহারানীর মুখে কোন হাসি নেই, কথাও
নেই। এমন মুখ ভার করা রাণীর জন্যইতো সূর্য মামা উঠতেই পারে নি।
কথাটা বলে সাদিক ও মামা দু’জনে বিষয়টি ভাল করে আবিষ্কার করল।
বড় আপা ফিরে এসে আবার বসল।
-
কি রে টুলু? কতদিন পর এলি, মা কেমন
আছে?
-
ভাল আছে আপা। আসার সময় তোমার জন্য এই রুমালটা দিল। তুমি
নাকি নকশা করতে চেয়েছ?
এই নাও।
-
হ্যাঁ রে । অনেক দিন ধরেই পুরোনো কাজের কথা মনে পড়ে গেল।
তাই এটা চেয়েছিলাম।
-
হু।
-
কিরে টুলু! সবাই এমন শান্ত হয়ে আছিস কেন? এমনিতে
তো কারোর জন্য এক মুহুর্ত অবসর মেলেনা। আজ কি হল তোদের?
-
আপা,
আজ মনে হয় আমাদের মহারানীর মন ভাল নেই। ওর সবার খোঁজ
নিলাম। কিন্তু ইনি তো ভাল- মন্দ কিছুই বলছেন না। এতক্ষণ ভালই ছিলাম, কিন্তু
এখন মনে হচ্ছে কিছু গন্ডগোল আছে।
-
কেন রে! কি হয়েছে? মিনার সব কিছু ঠিকঠাক এনেছিস তো?
শেফালী ট্রে তে করে চা- বিস্কুট নিয়ে এল। ও দিকে
ল্যান্ডফোনে কল এল। মা ফোন পিক করতে গেল।
-
শেফালী, তোমার বর কোথায়?
-
ওয় তো গেডের সামনেই। ক্যা? আইছেন যে গেট খুলছে কেডায়? তহন
দেহেন নাই?
-
দেখেছিতো। কিন্তু আমি তো ওকে একটা কাজ দিয়েছিলাম। সেটাতো
এখন করা দরকার।
সাদিক - কি কাজ মামা ?
টুলু মামা - আরে ভাগ্নে, আমাদের কুদ্দুসের মায়ের জন্য এক
খাঁচা লেয়ার চিক্স এনেছিলাম। কিন্তু বাইরে বৃষ্টির জন্য ভেতরে আনতে পারলাম না। যদি
কুদ্দুসের মা .. .. একটু . . .!!!
এ কথা বলে শেষ করার আগেই সবাই মুচকি মুচকি হাসতে চেষ্টা
করছে। আর মিনা খুশিতে চোখ জলজল করে বলল...।
মিনা - মামা; তুমি এতক্ষণ বাচ্চাগুলোকে বাইরে
রাখলে কোন্ সেন্স এ?
বলেই ছাতাদানী থেকে বড় ছাতাটা নিয়ে বেড়িয়ে গেল মুরগীর
ছানাদের আগমন জানানোর জন্য।
মিনা - হাসমত ভাই? হাসমত ভাই! তুমি এক্ষুনি এখানে
আসো ।
হাসমত - জি! আপা, আমি কেমনে আইতাম? আমার
এইখানে তো মামায় মুরগীর বাচ্চা রাইখা গেছে। আমি সইরা গেলে
যদি বিড়াল আইয়া বাচ্চা রইয়া যায়?!!!
মিনা - আচ্ছা তুমি ওখানেই থাক। আমি আসতেছি।
বলে মিনা দ্রুত ছাতা নিয়ে হাসমতের দায়িত্ব থেকে বাচ্চাদের
খাঁচাটা নিয়ে দোতলায় ওর রুমের বারান্দায় গেল। মিনার পেছন পেছন সাদিক, মামা আর
মা ও গেল।
সাদিক - কি আপু ? এবার তো বলা যায় আজ সূর্য উঠেছে।!
তাইনা মামা? এবারতো বলবে যে সূর্য আজ উঠেছে।
মিনা প্রশান্তির হাসি হেসে মামার দিকে তাকিয়ে বলল- হু, আমার ছোট
মামা তাহলে সত্যিই এবার কথা রেখেছে।
টুলু মামা - তবে হ্যাঁ, একটা কতা বলি; বাচ্চাদেরকে
কিন্তু বাড়তি যত
নিতে হবে মনে রেখ।
মিনা - হু, তাতো রাখবোই।
মিনার মা হেসে বলল- হে; এবার তো আরো ভাল হল। সব কাজ কর্ম
রেখে সারাদিন ওদেরকে নিয়েই পড়ে থাকার আরো সুব্যবস্থা হল। এমানতেই খাবার সময় পায়
না। এবার ঘুমাবার সময় হয় কিনা কে জানে?!!!
এ কথা বলে মা চলে গেল। টুলু মামা মিনার দিকে সামান্য বিচলিত
ভাবে তাকালো। কিন্তু মিনা এক মনে নতুন বাচ্চাদের সেবায় মগ্ন।
একি কথা মিনা? তুমি কিন্তু এমন কিছু করবেনা, যাতে
তোমার ক্ষতি হয়। তুমি অনিয়ম করে অসুস্থ্য হলে তোমার বাচ্চাদেরকে কে এত যত করবে বল ?
-
না মামা। আমি সবই ঠিকঠাক করতে পারবো।
-
তবুও তুমি ওদের যত ভালবাস, তুমি না থাকলে হয়তো এটা সম্ভব হত
না। চালিয়ে যাও ভাগ্নি। আমি, সাদিক আছি তোমার সাথে।
শেফালী - আপা, এইবারেরগুলা লইয়া মোট কতজন হইল?
একথা শুনে মামা মুচকি হেসে চেয়ার টেনে বসল। সাদিক ও হেসে
মামার দিকে তাকিয়ে এবং মামা- ভাগ্নে শেফালীর দিকে তাকিয়ে বিষ্ময়ে হাসল। শেফালী
একটু অবাক হল।
মিনা একটু রেগে গিয়ে- শেফালী? তুমি সব বিষয়ে এত কথা বল কেন? যাও; এবার
তোমার কাজে যাও।
শেফালী - যাইতাছি , যাইতাছি।
বলে আবারও হেসে হেসে কুটিকুটি হল। মামা একটু অবাক হল।
সাদিক- মামা তুমি জাননা?
টুলু মামা- কি ব্যাপার ভাগ্নে?
মিনা- আমি বলছি, শোন। তুমি আজ বিশটি বাচ্চা এনেছ।
আর আমার আগের ছিল পাঁচটি মুরগী। সব মিলিয়ে পঁচিশটি। আর এটার জন্যই শেফালী এমনটা
করল।
টুলু মামা- কিন্তু এভাবে এত হাসার কি হল? বিষয়টা
তো বুঝলাম না ।
সাদিক- আসলে এ বাড়ীর প্রতিটি প্রাণীকেই আপু এ বাড়ীর সদস্য
করে রাখে। যেমনঃ আমি,
মা,
আপু , শেফালী,হাসমতের মত পারবতী (গরু) আর কুদ্দুস ।
টুলু মামা- পারবতী মানে তোমাদের কালো গরুটা। কিন্তু কুদ্দুস
টা কি?
মিনা - মামা; অবজেকশন! এটা কি? কথাটা
ঠিক না। বল ‘ ও কে’?
টুলু মামা- ওকে, ওকে, আমি সরি।
ওকে?
মিনা- এই যে আমার কুদ্দুস। লাল মোরগ টাকে কোলে নিয়ে দেখাল।
টুলু মামা চোখ কপালে তুলে, হাসি পেটে চেপে মেনে নিল পাগলী
ভাগ্নির কথা।- ব্যাশ,
ব্যাশ।
বৃষ্টি শেষে বিকেলে মামা, মিনা ও সাদিক মিলে বাচ্চাদের
খাবার ও ঔষধের জন্য বের হয়েছে।
ওদিকে বাড়ীতে দেশের বাড়ী থেকে ছোট চাচ্চু এসেছে। বাসায় ফিরে
সবাই খুব গল্প গুজব করল। মিনা সন্ধ্যায় বাচ্চাদের শেষবেলায় দেখার জন্য সবাইকে নিয়ে
উপরে বারান্দায় গেল।
সাদিক- জানো চাচ্চু! আজ আমরা আপুর নতুন বিশটা মুরগীর
বাচ্চার জন্য খাবার আর ঔষধ আনতে বিকেলে বেড়িয়েছিলাম।
চাচ্চু- তাই নাকি?
সাদিক- আর টুলু মামাইতো আজকে এই ছোট বাচ্চাগুলো এনে দিল।
চাচ্চু- মিনা তাহলে আজকাল বেশ গৃহীনি হয়ে উঠেছে।
সাদিক- হু। দেখছেন না কি সুন্দর করে ওদের সব ব্যাবস্থা
সাজিয়েছে !
চাচ্চু - বাহ! বাহ! খুব সুন্দর ।
শেফালী এসে বলল, সবাইকে মা ডাকছে নীচে যেতে। রাতের
খাবার খাওয়ার জন্য। এক দৌড়ে সবাই নিচে নেমে এল। শুধু মিনা ও টুলু মামা বাচ্চাদের
সেবায় শেষ সময়টুকু কাটিয়ে;
ঠিকঠাক করে দেখে রেখে আসবে।
মিনা- চল মামা এবার নিচে যাই। মা হয়ত অপেক্ষা করছে। দেরি
দেখলে পরে আমাদের দু’জনকেই বকবে। চল খেয়ে আসি। তারপর রাতে সবাই লুডু খেলব।
টুলু মামা- চল যাই।
এ কথা বলেই হঠাৎ করেই মামা বড় মুরগীর খাঁচায় খেয়াল করে দেখল
লাল মোরগটা নেই। মামা মিনাকে ডেকে বলল- সে কি মিনা! কুদ্দুস কোথায়?
মিনা - কেন মামা? ও তো ওদের খাচাঁয়ইতো আছে।
মামা- আমি তো দেখতে পাচ্ছিনা।
মিনা- কই দেখি দেখি ?
মিনা পাগলের মত খুজে কুদ্দুস কে না পেয়ে শ্ক পেল। ভেকরটা
যেন অজানা আকঙ্কে গরম হয়ে গেল। দৌড়ে নিচে গিয়ে কারও কোন কথা না শুনে রান্নাঘরে
ঢুকলো। হাড়ি ঘেটে দেখল রান্না হয়েছে মুরগী। ময়লার ঝুড়িতে পরে আছে লাল পালক। মিনা
কিছুক্ষণের জন্য স্থবির হয়ে গিয়েছিল।
সাদিক- আপু কি হল? আস খেতে আস। শেফালী তো সবই খাবার
টেবিলে রেখেছে।
মিনা- শেফালী, তুমি মুরগী কোত্থেকে রান্না করেছ? ফ্রিজ
থেকে বের করে রান্না করেছ না কি বাজার করা হয়েছিল?
শেফালী কোন কথা না বলে চুপচাপ দাড়িয়ে আছে।
মা - কেনরে কি হয়েছে?
মিনা - শেফালী তোমাকে কি বলেছি? কথার
উত্তর দেওনা কেন.?
এরই মধ্যে সাদিক, চাচ্চু খেতে বসেছে। মা, মিনা ও
টুলু মামা মাত্র টেবিলে বসল।
টুলু মামা - কি হল শেফালী, উত্তর দাও।
শেফালী- আম্মা, আজকা সকাল থেইক্কা বিষ্টি। আর
হাসমত আজকা বাজার থেইকা আইতেও দেড়ি করছিল। আর আমি ছোট আপার মুরগীরে খাবার দেওয়ার
সময় মোরগটা খাঁচা থেইকা বের হইয়া গেছিল। আর আমি. .
মিনা ঝড়ের বেগে চেয়ার থেকে উঠে রেগে ওর ঘরে চলে গেল। কষ্টে
গলা ধরে আসছিল ওর। কোন কথা বলার ভাষা খুঁেজ পাচ্ছিল না। এতক্ষণে বিষয়টা সবার
বোধগম্য হল। মিনা ঘরে গিয়ে বাকী বাচ্চাদের কাছে বসে ফুফিঁয়ে কাদঁতে লাগল। এ যেন এক
করুন ব্যাথাভরা হৃদয়ের অকৃত্রিম ভালবাসায় ব্যথিত ক্রন্দন। যা হয়ত ভাষায় প্রকাশ করা
যায় না। সাদিক ও টুলু মামা দৌড়ে মিনার কাছে গিয়ে বসল। মিনা হাত- পা ছড়িয়ে ভাইকে
ধরে কাদঁছে। এমন এক হৃদয়বিদারক দৃশ্য দেখে টুলু মামাও আর থাকতে পারল না। সেও এক
লুকোনো কান্নায় আবেক ভাষাল। মা, চাচ্চু আর শেফালী ও ঘরে এল। এরপর শেফালীও নিজেকে সামলাতে না
পেরে কেঁেদই ফেলল। ও বুঝতে পারছে না এখন কি করা উচিৎ। মিনা রাগে শেফালীকে ঘর থেকে
বের করে দিয়েছে। সবাই মিনাকে শান্তনা দিয়ে চলে গেল। কিন্তু মিনা কুদ্দুসের জন্য
কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়েছে। পরদিন ঘুম ভাঙল ভোর ৬টায়। বারান্দায় গিয়ে মিনা দেখল
উঠানের বাগানে কুদ্দুস ঘুরে বেরাচ্ছে। খুশিতে এক দৌড়ে মা, সাদিক, মামা ও
চাচ্চুকে ডেকে নিয়ে বাগানে গেল। সবাই বাগানে গিয়ে কুদ্দুসকে দেখে যেন প্রাণে
শান্তি ফিরে এল। মামা দেখ,
আমার কুদ্দুস। আমার লাল কুদ্দুস। ও ফিরে এসেছে। আমি জানি ওর
কিচ্ছু হতে পারেনা। আমাকে ছেড়ে ও কোথাও হারাবে না। মিনা কুদ্দুসকে কোলে নিয়ে ওর
ঘরে চলে গেল। সবাই মিনা ও কুদ্দুসের ভালবাসা দেখে হাসতে লাগল।
তাহমিনা শারমিন ঢাকা । |