Latest News

গর্ভাবস্থায় পোষাক

ডাঃ ফারহানা মোবিন: 
গর্ভাবস্থা জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়ে চাই বাড়তি যত্ন। সামান্য অসাবধানতা থেকে ঘটতে পারে অনেক বিপদ। তাই গর্ভাবস্থার প্রথম থেকেই সচেতন হউন। খাবার, পোষাক, জীবনযাত্রা সব কিছুতে সামান্য সচেতনতা আপনাকে দেবে আরো বেশী সতেজতা। পোষাক নির্বাচনের ক্ষেত্রে শুরু থেকেই যথেষ্ট মনোযোগী হউন। খেয়াল রাখতে হবে, যেন পোষাক একই সাথে গর্ভাবস্থার উপযোগী ও যুগোপযোগী ফ্যাশন সম্পর্কিত হয়। গর্ভাবস্থার প্রথম দিকে অনেকেরই প্রচুর পরিমাণে বমি হয়। এই সময় যতোটা সম্ভব ঢিলেঢালা পোষাক পরুন। সুতি কাপড় হলে সবচেয়ে ভালো। এই সময়ে পেট তেমন বড় হয় না। তাই যুগের উপযোগী ফ্যাশন সম্পর্কিত সালোয়ার কামিজ, বাসায় ঢিলেঢালা জামা বা ম্যাক্সি পড়তে পারেন। খেয়াল রাখবেন যেন ঘামে ভেজা জামা বা পোষাক পরতে না হয়। এতে দেহে বাসা বাঁধবে নানা রকম রোগ-জীবাণু, যা দ্রুত আক্রমণ করবে শরীরকে বা গর্ভস্থ শিশুকে। টেট্রন, নিলেন, জর্জেট, সিল্ক, কাতান, রেশম কাপড় যতোটা বেশী পরিহার করা যায়, ততোটাই ভালো। সুতি কাপড় ত্বককে দেবে আরাম। আর সেই সাথে এই কাপড়ে ঘামের পরিমাণও কমে যাবে। তাই এই সময় সুতিই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট। বাসার বাইরে কর্মজীবি না হলে সুবিধা মতো পোষাক পরিধান ও পরিবর্তন করুন। গরমের দিনে বা ধূলোবালি থেকে রক্ষার জন্য সর্বদা পরিষ্কার ও আরামদায়ক পোষাক পরুন। রান্না করলে রান্নার তেল মশলা লেগে ঘামে কাপড় ভিজতে পারে। তাই রান্না শেষে পোষাক পরিবর্তন করুন। সব সময় গোসল সম্ভব না। তাই রান্না শেষে পোষাক পরিবর্তন করুন। সব সময় গোসল সম্ভব না। রান্না শেষে ভালো করে হাত, মুখ ধুয়ে ফেলুন। একদিন কাপড় পড়ার পরে তা অবশ্যই ধুয়ে ফেলুন। আর যারা কর্মজীবি অর্থাৎ বাসার বাইরে কাজ বা চাকরি করেন, তারা পোষাকের প্রতি আরো মনোযোগী হউন।
 যদি প্রতিষ্ঠানের পোষাক পরতে হয়,  তবে তা যেন গর্ভাবস্থায় নিরাপদ হয়, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখুন। আজকাল বিভিন্ন বড় বড় ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলোতে ‘প্রেগনেন্সি ড্রেস’ পাওয়া যায়। অর্থাৎ গর্ভবতী মায়েদের জন্য ঢিলেঢালা কামিজ, পায়জামা, ম্যাক্সি, ফতুয়া, টপস পাওয়া যায়। এই ধরণের পোষাক পরুন। কিনতে না পারলে, সুতি কাপড়ের ঢিলা পোষাক বানান। একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যে, গর্ভাবস্থায় দেহের গড়ন পরিবর্তিত হয়ে যায়। ওজন অনেক বেড়ে যায়। তাই পেটে চাপ না লাগে, এমন পোষাক পরুন। যারা প্রতিষ্ঠানের পোষাকে ফুলপ্যান্ট বা জিন্সের পোষাক পরেন, তারা অতিরিক্ত টাইট করে বেল্ট ব্যবহার করবেন না। কিছু পোষাক আলাদা করে ফেলতে হবে গর্ভাবস্থার জন্য। আর কিছু পোষাক রাখতে হবে নবজাতককে খাওয়ানোর জন্য।যাদেরকে নিয়মিত রিক্সা, বাস বা ব্যক্তিগত গাড়ীতে যাওয়া আসা করতে হয়, রাস্তার জ্যামে দীর্ঘসময় বসে থাকলে তখন কোমরে ব্যাথা হতে পারে। এই জন্য ব্যবহার করুন অ্যাবডোমিনাল বেল্ড (অনফড়সরহধষ নবষঃ), যা ব্যবহার করতে হয় গর্ভাবস্থার পরে, পেটের আকার পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য। কিন্তু ডেলিভারীর পূর্বেই ব্যবহার করতে পারেন, যাদেরকে প্রচুর পরিমাণে বাসার বাইরে ভ্রমণ করতে হয়। অ্যাবডোমিনাল বেল্ট বা বাইন্ডার ব্যবহার করলে পেট নড়াচড়া করবে কম। তখন ব্যথা কম লাগবে। দেহের ওজন ও পেটের বৃদ্ধির সাথে সাথে পেট নীচের দিকে ঝুলে পড়ে। তখন জোরে ঝাকুনি লাগলেই ব্যথা হয়। তাই বাইন্ডার জার্নির সময় পরতে পারেন। সব সময়ের জন্য না। বাইন্ডার পোষাকের উপর পরলে দেখতে বাজে লাগবে। তাই কামিজ বা জামার নীচে বাইন্ডার পড়ুন। এই জন্য ঢিলা জামা হলে সুবিধা হবে। বাইরে নিয়মিত যেতে হলে শাড়ীর পরিবর্তে থ্রীপিস পড়ুন। এতে হাঁটা চলাতে সুবিধা হবে। সপ্তাহে অন্তত একদিন বাসার সবার কাপড় স্যাভলন দিয়ে পরিষ্কার করুন। এতে রোগ জীবাণু মরবে।
গর্ভবতী নারীর পোষাক, খাবার, ঘুমানোর জায়গা হওয়া উচিৎ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। এতে রোগ জীবাণু কমবে। আর নিরাপদ গর্ভাবস্থার জন্য জন্ম নিবে সুস্থ্য সবল শিশু।

লেখিকা:   ডাঃ ফারহানা মোবিন
মেডিকেল অফিসার, গাইনী এ্যান্ড অবস,
      স্কয়ার হসপিটাল, ঢাকা।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com