Latest News

খণ্ডকথা ১০: একটি বাচ্চার চোখে কয়েকটি উন্মত্ত জানোয়ার

আজিম খান চৌধুরী :  ঐ নিষ্ঠুর অমানবিক ভিডিও ক্লিপটি দেখে রাতে আমার মত অনেকেরই ভালো ঘুম হয়নি ৷ একটা পশুও নিজের জাত ভাইয়ের ঘাড় মটকায় না ৷ আর আমরা মানুষ, আমরা দিনে দিনে এতটাই অসভ্য আর ইতর হচ্ছি৷ একটা মানুষের বাচ্চার আর্তনাদে ওদের বুক কাঁপলো না ! ক্লাস ফোর এর ছাত্র৷ কতইবা বয়স হবে ছেলেটির- ১২ কিংবা ১৩ বছর ৷
এই বয়সের ছেলে মেয়েরা দুষ্টামি করবে, অন্যের বাড়ির ফল চুরি করে খাবে ৷ বলছিনা এগুলো খুব ঠিক ৷ কিন্তু আপনি আমি এই বয়সে কতটুকু ফেরেস্তা ছিলাম ৷ একটুও কি দুষ্টামি করিনি ? ছেলেটি কী এমন চুরি করেছিল, যার জন্য রড দিয়ে পিটিয়ে এতটা নির্মম ভাবে হত্যা করা হবে ?

তারা এতটাই পাষন্ড, এতটুকু করেই ক্ষান্ত হয়নি! এই জঘন্য কান্ডের ভিডিও করে নিজেরাই তা সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করলো ৷ তাদের অট্ট হাসির ভয়ংকর বিদঘুটে শব্দগুলো একটা পাষানকেও ভিতু করে তুলবে ৷ বাঁধা অবস্থায় আর্তনাদ করে নুয়ে পড়া ছেলেটি যখন পানি চাচ্ছিল, তাকে বলা হল শরীরের ঘাম খেতে!  তাদের কাছে বোতল ভর্তি পানি ছিল কিন্তু তারা তা দিল না ৷ ছেলেটির বার বার বেঁচে থাকার আকুতি, হাজার হাজার মানুষ যারা এই ভিডিওটি দেখেছে তাদের সবাইকে অসহায় প্রতিপন্ন করে গেছে ৷ অসহায় মানুষগুলো হয়ত আমার মত দাঁতে দাঁত কটমট করছেন আর না হয় নিজেদের চোখে সব দেখে চোখ মুছেছেন লজ্জা আর গ্লানিতে ৷

তারা ভেবেছিল তাদের এমন বাহাদুরির জন্য এই সমাজের মানুষগুলো বাহবাহ দিবে ৷ তাদের হিংস্রতার বিচার তো দুরের কথা, তার বিরুদ্ধে কথা বলার মানুষও পাওয়া যাবেনা ৷ হায়েনাগুলো মাঝে মাঝে সস্তা বাংলা সিনেমার ডায়লগ দিচ্ছিল, নোংরা সিনেমা দেখে এসব কী শিখেছে তারা ? এসব দেখেই কি ওরা নিজেরা পশু হওয়ার প্রেকটিস করছে নাকি আগে থেকেই ওরা পশু ছিল, এখন ভুল করে মানুষের সমাজে বসবাস করছে ?
তবে এসব হত্যাকারীদের ঘাবড়ানোর কিছু নেই ৷ কিছুদিন আত্ম গোপন করে রইবে ৷ আত্নীয় স্বজন ব্যাগ ভর্তি পয়সা নিয়ে থানা পুলিশ ম্যানেজ করবে ৷ হাজারও নতুন ইস্যুর তলায় চাপা পরে যাবে ১৩ বছরের ছেলেটির কথা ৷ একটা সময় কারোরই আর মনে থাকবে না ৷ মনে থাকবে শুধু মা বাবার আর কিছু প্রিয়জনদের ৷ ছেলেটিকে তের বছর করতে মায়ের হয়ত হাজারটি বিনিদ্র রাত কাটাতে হয়েছে ৷ ছেলে বড় হবে, দুঃখ ঘুচাবে- সেই স্বপ্ন নিয়ে বিভোর ছিল ৷ ছেলেটির কথা কেবল তারাই ভুলবে না ৷
এধরনের বহু নারকীয় ঘটনা আমাদের দেশে ঘটে৷ এসবের তদন্ত হয়না, কারও শাস্তি হয়না ৷ মোবাইল ফোনের ডিজিটাল ক্যামেরায় লাইভ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন যারা, হয়ত ডিজিটাল পদ্ধতিতেই রক্ষা পাবে ! রাজনৈতিক আশ্রয়ে ধন্য হয়ে ইহলৌকিক জীবন যাপনে এতটাই ব্যস্ত হবে, এই বাচ্চাটাকে হত্যা করার জন্য সামান্য অপরাধ বোধও ওদের অন্তরে আর স্থান পাবেনা ৷ একটা সময় বেঁচে যাওয়ার আনন্দ পার্টি করবে ওরা ৷


পুনশ্চ: এই কথাটা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, আমাদের জীবনের মুল্য দিনে দিনে মুল্যহীন হয়ে পড়ছে ৷ যেন প্রাণ গুলো আর প্রানের দামে বিকে না ৷ প্রতি বছর লঞ্চ ডুবে মানুষ মরছে ৷ এইতো মাত্র ক'দিন আগে লোক দেখানো যাকাত বিতরণের আয়োজনে কত জনের প্রাণ গেল ৷ এর কি বিচার হবে ? যারা লোক দেখানো যাকাত দিচ্ছে, তারা পারতো এই পয়সা দিয়ে কম সংখ্যক কিছু মানুষকে স্ববলম্বী করতে ৷ ইসলাম মানুষকে লুকিয়ে দান খয়রাত করতে উৎসাহিত করে ৷ কিন্তু এতে কি মনের খায়েশ মিটবে ?

লন্ডন
১৩ জুলাই ২০১৫

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com