আজিম খান চৌধুরী : সম্প্রতি রাজনের সঙ্গে আরো অনেক রাজন যোগ হচ্ছে ৷ নির্দয়তা যেন আমাদের রক্তে মিশে আছে ৷ এসব দুই একটি নিষ্ঠুরতা এতটাই বিরাট আমাদের শত শত উদারতাকে এক নিমিষেই যেন ম্লান করে দেয় ৷
আপনি বাংলাদেশে জন্মেছেন আর আপনি যদি বলেন আমি কোনদিন রাস্তার পাশে মানুষ জন জটলা পাকিয়ে হাত পা বাঁধা ছিচকে চোর পেটাতে দেখেননি তবে সেটা হবে প্রায় মিথ্যার কাছাকাছি একটি কথা ৷ আপনাকে অবশ্যই এইধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে, একবার নয় দু'বার নয় বহুবার বার ৷ কিল-ঘুষি খেয়ে পদদলিত হয়ে লাঠি বুটের আঘাতে আঘাতে একটা মানুষ যখন মৃত্যুযন্ত্রণায় লুটিয়ে পড়েছে, মৃত্যুর অন্ধকারে বিলীন হতে তার মাত্র কয়েক মিনিট বাকি ঠিক তখন আপনিও জীবনের প্রথম এবং শেষ চান্স মনেকরে শার্টের স্লিভটা একটু উপরে উঠিয়ে গেলেন আরেকটা ঘুষি দিতে ৷ লোকটাকে বাঁচাতে আপনি এগিয়ে গেলেন না উল্টা বাসায় গিয়ে সোফায় বসে সবাইকে চোর মারার বাহাদুরির গল্প শুনালেন ৷ অথচ এই আপনি আপন পেটের ডাক শুনেও মাঝে মাঝে ভয়ে পা দু'টা সোফায় তুলে বসেন ৷ আপনার শেষ ঘুষিতে চোরটা মরলেও খুব একটা অসুবিধা নাই ৷ আমরা চোর মারায় ওস্তাদ ৷ আমরা মানুষ, যে কাউকে একটা অপবাদ দিয়ে খুব সহজেই মেরে ফেলতে পারি ৷
একে একে কামরুল, ময়না মিয়া সবাই ধরা পড়ল ৷ আজ হয়ত রাজনের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় আর লুকানো গেলনা ৷ কাল কিন্তু নিশ্চিত সমান ঘটনাটাই ঘটবে একটু আড়ালে ৷ পরবর্তী ময়না বলবে বাপরে বাপ খবরদার এসব কাজ একটা ভাঙ্গা নষ্ট ক্যামেরার সামনেও আর করা যাবেনা ৷ তখন কি হবে ? ক্যামেরার সামনে সাপের মত মানুষ পিটিয়ে হত্যা করা নতুন নয় ৷ তার চাইতে লোমহর্ষক নিকৃষ্ট ঘটনা এর আগেও বহু ঘটেছে ভবিষ্যতেও ঘটবে ৷ সেদিন একজন বললেন 'ভাই বুঝলেন না এসব হচ্ছে ফেইসবুক ভড়ং' ৷ আমি বললাম 'ভড়ং বলেন আর যাই বলেন, এই ভরংটা ছিল বলেই ১২ লক্ষ টাকা দিয়েও কিন্তু বিষয়টা সামাল দেয়া যায়নি' ৷
আমাদের কি যে সৌভাগ্য, দেশে এত চমৎকার একটা পুলিশী ব্যবস্থা, মানুষ মেরে কিংবা জঘন্য কোন কাজ করে সামান্য কিছু খরচ পাতি করলেই চলে ৷ আজকাল থানা পুলিশ শুনতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিরাট অঙ্কের টাকার বান্ডিল ৷ অবশ্য পুলিশেযে ভালো মানুষ নেই তা না তবে তারা সংখ্যায় খুব অল্প এবং অসহায় ৷
আমরা খুব ভালো ভাবেই জানি চুরি মানেই বিরাট অপরাধ ৷ আমাদের মগজে গেথে আছে চোর ধরেই মেরে ফেলতে হয় যেভাবে আমাদের দেশে সাপ ইঁদুর ধরেই মেরে ফেলা হয় ঠিক সে রকম ৷
সরল হিসাবে চোর দুই প্রকার, কেউ পেটের তাড়নায় অনোন্যপায় হয়ে চুরি করে আর কেউ রাঘব বোয়াল, তারা ধন কুবের হওয়ার নেশায় মত্ত, কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপি ৷ তাদের চুরির পরিমান দেখলে পিলে চমকে যায় ৷ অথচ রাঘব বোয়ালদের কেউ কিছু করতে পারেনা ৷ এদের ইঙ্গিত করেই হয়ত কবি সুকান্ত লিখেছিলেন:
'দেখ, এই মোটা লোকটাকে দেখ / অভাব জানে না লোকটা, / যা কিছু পায় সে আঁকড়িয়ে ধরে
/ লোভে জ্বলে তার চোখটা ৷
মাথা উঁচু করা প্রাসাদের সারি / পাথরে তৈরি সব তার, / কত সুন্দর, পুরোনো এগুলো! / অট্রালিকা এ লোকটার ৷'
কেউ জানতেও চায়না একটা মানুষ কেন জীবনের ঝুকি নিয়ে সামান্য তুচ্ছ মূল্যের কিছু চুরি করতে আসে ৷ যারা পেটের দায়ে চুরি করে তাদের ঘরে খাবার নেই, পরনে কাপড় নেই, ঘরে বাঁচ্চা কাচ্চা না খেয়ে আছে ৷ আমি তাদের দোষটাকে দোষ মনে করিনা দোষটা হলো রাষ্ট্রের ৷ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে মানুষের অন্য বস্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা ৷ চুরের বিচারের আগে সকল প্রকার অব্যবস্থার একটা বিহিত হওয়া জরুরি ৷
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgAmYZ6sE1WymuzjLSEp7aBquSSZGSG-QDAccpuSmO9tiyzeicoIAhyphenhyphenmWCR2f0CVna_1W-iE2g_pLKWZwz8opXPF0kJRudJQD1S6eOaHVxbDFO1-mImirGS03SM_O-A_nC4Le82z5fuuuI/s200/rakib.jpg)
আমরা শুধু ওই নিরীহ কাউকে সুবিধামত পেয়ে গেলে হিন্দি চুল ছেড়ার তালে ব্যাস্ত হই ৷ ফেইসবুকে ভাল মানুষী দেখালেও সবার ভিতর একটা অমানুষ লুকিয়ে আছে ৷ আমি আমাকেও বলছি, কেননা আমি বাংলাদেশী ৷ আমার মনে হয় নিজের ভিতরের অমানুষটাকে যে যত বেশি লুকাতে পারে সেই ততো ভালো মানুষ ৷
কোনো ক্রমে রাজন বেঁচে গেলে এই সমাজে ন্যায্য বিচার পাওয়াতো দুরে থাক সে বিচার চাইতে গেলে আরো বিপদে পরতো ৷ রাজন রকিব ওরা মরে গিয়ে বিরাট এক যন্ত্রণায় অবসান ঘটিয়েছে, বেঁচে থেকে ভাঙ্গা গুড়া হাড় নিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করত ৷ মরে গিয়ে তারা অন্তত দেখিয়ে যেতে পারল আমরা কতটা নিষ্ঠুর কতটা অমানুষ ৷
লন্ডন
৬ আগষ্ট ২০১৫
আপনি বাংলাদেশে জন্মেছেন আর আপনি যদি বলেন আমি কোনদিন রাস্তার পাশে মানুষ জন জটলা পাকিয়ে হাত পা বাঁধা ছিচকে চোর পেটাতে দেখেননি তবে সেটা হবে প্রায় মিথ্যার কাছাকাছি একটি কথা ৷ আপনাকে অবশ্যই এইধরনের বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে, একবার নয় দু'বার নয় বহুবার বার ৷ কিল-ঘুষি খেয়ে পদদলিত হয়ে লাঠি বুটের আঘাতে আঘাতে একটা মানুষ যখন মৃত্যুযন্ত্রণায় লুটিয়ে পড়েছে, মৃত্যুর অন্ধকারে বিলীন হতে তার মাত্র কয়েক মিনিট বাকি ঠিক তখন আপনিও জীবনের প্রথম এবং শেষ চান্স মনেকরে শার্টের স্লিভটা একটু উপরে উঠিয়ে গেলেন আরেকটা ঘুষি দিতে ৷ লোকটাকে বাঁচাতে আপনি এগিয়ে গেলেন না উল্টা বাসায় গিয়ে সোফায় বসে সবাইকে চোর মারার বাহাদুরির গল্প শুনালেন ৷ অথচ এই আপনি আপন পেটের ডাক শুনেও মাঝে মাঝে ভয়ে পা দু'টা সোফায় তুলে বসেন ৷ আপনার শেষ ঘুষিতে চোরটা মরলেও খুব একটা অসুবিধা নাই ৷ আমরা চোর মারায় ওস্তাদ ৷ আমরা মানুষ, যে কাউকে একটা অপবাদ দিয়ে খুব সহজেই মেরে ফেলতে পারি ৷
একে একে কামরুল, ময়না মিয়া সবাই ধরা পড়ল ৷ আজ হয়ত রাজনের বিষয়টি প্রকাশ হয়ে যাওয়ায় আর লুকানো গেলনা ৷ কাল কিন্তু নিশ্চিত সমান ঘটনাটাই ঘটবে একটু আড়ালে ৷ পরবর্তী ময়না বলবে বাপরে বাপ খবরদার এসব কাজ একটা ভাঙ্গা নষ্ট ক্যামেরার সামনেও আর করা যাবেনা ৷ তখন কি হবে ? ক্যামেরার সামনে সাপের মত মানুষ পিটিয়ে হত্যা করা নতুন নয় ৷ তার চাইতে লোমহর্ষক নিকৃষ্ট ঘটনা এর আগেও বহু ঘটেছে ভবিষ্যতেও ঘটবে ৷ সেদিন একজন বললেন 'ভাই বুঝলেন না এসব হচ্ছে ফেইসবুক ভড়ং' ৷ আমি বললাম 'ভড়ং বলেন আর যাই বলেন, এই ভরংটা ছিল বলেই ১২ লক্ষ টাকা দিয়েও কিন্তু বিষয়টা সামাল দেয়া যায়নি' ৷
আমাদের কি যে সৌভাগ্য, দেশে এত চমৎকার একটা পুলিশী ব্যবস্থা, মানুষ মেরে কিংবা জঘন্য কোন কাজ করে সামান্য কিছু খরচ পাতি করলেই চলে ৷ আজকাল থানা পুলিশ শুনতেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে বিরাট অঙ্কের টাকার বান্ডিল ৷ অবশ্য পুলিশেযে ভালো মানুষ নেই তা না তবে তারা সংখ্যায় খুব অল্প এবং অসহায় ৷
আমরা খুব ভালো ভাবেই জানি চুরি মানেই বিরাট অপরাধ ৷ আমাদের মগজে গেথে আছে চোর ধরেই মেরে ফেলতে হয় যেভাবে আমাদের দেশে সাপ ইঁদুর ধরেই মেরে ফেলা হয় ঠিক সে রকম ৷
সরল হিসাবে চোর দুই প্রকার, কেউ পেটের তাড়নায় অনোন্যপায় হয়ে চুরি করে আর কেউ রাঘব বোয়াল, তারা ধন কুবের হওয়ার নেশায় মত্ত, কোটি কোটি টাকার ঋণখেলাপি ৷ তাদের চুরির পরিমান দেখলে পিলে চমকে যায় ৷ অথচ রাঘব বোয়ালদের কেউ কিছু করতে পারেনা ৷ এদের ইঙ্গিত করেই হয়ত কবি সুকান্ত লিখেছিলেন:
'দেখ, এই মোটা লোকটাকে দেখ / অভাব জানে না লোকটা, / যা কিছু পায় সে আঁকড়িয়ে ধরে
/ লোভে জ্বলে তার চোখটা ৷
মাথা উঁচু করা প্রাসাদের সারি / পাথরে তৈরি সব তার, / কত সুন্দর, পুরোনো এগুলো! / অট্রালিকা এ লোকটার ৷'
কেউ জানতেও চায়না একটা মানুষ কেন জীবনের ঝুকি নিয়ে সামান্য তুচ্ছ মূল্যের কিছু চুরি করতে আসে ৷ যারা পেটের দায়ে চুরি করে তাদের ঘরে খাবার নেই, পরনে কাপড় নেই, ঘরে বাঁচ্চা কাচ্চা না খেয়ে আছে ৷ আমি তাদের দোষটাকে দোষ মনে করিনা দোষটা হলো রাষ্ট্রের ৷ রাষ্ট্র নিশ্চিত করবে মানুষের অন্য বস্র বাসস্থান শিক্ষা চিকিৎসা ৷ চুরের বিচারের আগে সকল প্রকার অব্যবস্থার একটা বিহিত হওয়া জরুরি ৷
![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgAmYZ6sE1WymuzjLSEp7aBquSSZGSG-QDAccpuSmO9tiyzeicoIAhyphenhyphenmWCR2f0CVna_1W-iE2g_pLKWZwz8opXPF0kJRudJQD1S6eOaHVxbDFO1-mImirGS03SM_O-A_nC4Le82z5fuuuI/s200/rakib.jpg)
আমরা শুধু ওই নিরীহ কাউকে সুবিধামত পেয়ে গেলে হিন্দি চুল ছেড়ার তালে ব্যাস্ত হই ৷ ফেইসবুকে ভাল মানুষী দেখালেও সবার ভিতর একটা অমানুষ লুকিয়ে আছে ৷ আমি আমাকেও বলছি, কেননা আমি বাংলাদেশী ৷ আমার মনে হয় নিজের ভিতরের অমানুষটাকে যে যত বেশি লুকাতে পারে সেই ততো ভালো মানুষ ৷
কোনো ক্রমে রাজন বেঁচে গেলে এই সমাজে ন্যায্য বিচার পাওয়াতো দুরে থাক সে বিচার চাইতে গেলে আরো বিপদে পরতো ৷ রাজন রকিব ওরা মরে গিয়ে বিরাট এক যন্ত্রণায় অবসান ঘটিয়েছে, বেঁচে থেকে ভাঙ্গা গুড়া হাড় নিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করত ৷ মরে গিয়ে তারা অন্তত দেখিয়ে যেতে পারল আমরা কতটা নিষ্ঠুর কতটা অমানুষ ৷
লন্ডন
৬ আগষ্ট ২০১৫