কমিশনার মিজানুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তাকে প্রত্যাহারের বিষয়টি জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত করা হচ্ছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতার উদ্বোধন শেষে স্বরাষ্টমন্ত্রী বলেন, মিজানের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাকে ডিএমপি থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়েছে।
নারীকে জোর করে তোলে নিয়ে বিয়ে ও নির্যাতনের বিষয় গণমাধ্যমে প্রকাশের পর তোলপাড় শুরু হয়। পুলিশের সেবা সপ্তাহ চলাকালে একজন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের ঘটনায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও বিব্রতবোধ করেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তার বিষয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশ সপ্তাহের অনুষ্ঠান শেষে মিজানের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু হবে। কোনো ব্যক্তির দায় বাহিনী নেবে না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে না। অপরাধ করে কেউ পার পাবে না। পুলিশের অনেক সদস্যও বিভিন্ন অপরাধে কারাগারে রয়েছে।
ডিআইজি মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন মরিয়ম আক্তার ইকো নামের এক নারী। তিনি অভিযোগে বলেন, চাকরির জন্য বান্ধবীর পরিচয় সূত্রে ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মিজানুর রহমানের সঙ্গে ফোনে কথা হয় ইকোর। ফোনে কথা বলার সময় অশোভন ইঙ্গিত করতেন মিজান। তিনি নানাভাবে বোঝাতে চাইতেন তার স্ত্রী বিদেশে থাকেন। তাকে নিয়ে সংসার করবেন না। ইকোকে ভালোলাগে তার। ওই সময়ে কানাডা প্রবাসী এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ের কথা হচ্ছিলো ইকোর। বিষয়টি জানতে পারেন ডিআইজি মিজান। সময়টা গত বছরের ১৪ই জুলাই। তখনই ঘটে ঘটনা। পান্থপথের স্কয়ার হাসপাতাল সংলগ্ন বাসা থেকে কৌশলে ইকোকে ৩০০ ফুট এলাকায় তুলে নিয়ে যান পুলিশ কর্মকর্তা মিজান। সেখানে মারধর করেন ইকোকে। ৩০০ ফুট এলাকা থেকে ওই নারীকে বেইলি রোডের বাসায় নিয়ে যান মিজান। ওই বাসায় ওষুধের মাধ্যমে অজ্ঞান করা হয় তাকে। পরদিন দুপুরে ঘুম ভাঙলে ঘুমানোর পোশাক পরিহিত অবস্থায় দেখতে পান নিজেকে। ওই সময়ে শরীরে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন তিনি।
পরে মিজানের ওই বাসায় তিনদিন আটকে রাখা হয়েছিল ইকোকে। আটকে রাখার পর বগুড়া থেকে তার মাকে ১৭ই জুলাই ডেকে আনা হয় ওই বাসায়। ৫০ লাখ টাকা কাবিননামায় মিজানকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। পরে লালমাটিয়ার ৫০ হাজার টাকা মাসিক ভাড়ায় একটি বাসায় তাকে স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে রাখেন মিজান। ওই নারীর অভিযোগ, চার মাস স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সংসার করেছেন তারা। তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। একদিন তিনি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মিজানকে স্বামী হিসেবে পরিচয় দিয়ে অফিস মুডে থাকা একটি ছবি ফেসবুকে আপলুড করেন। ছবিটি অল্প সময়েই অনেকের মতো পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে পড়ে। ক্ষিপ্ত হন মিজান। ছবিটি সরিয়ে ফেলতে তিনি দ্রুত লালমাটিয়ার বাসায় ছুটে যান। এ নিয়ে প্রচ- বাকবিত-া হয়। সম্পর্কের অবনতি ঘটে এই ছবিতেই। সমাজিকভাবে ডিআইজি মিজানের স্ত্রী পরিচয়ের অধিকার প্রতিষ্ঠায় অটল থাকেন ইকো। পরে তাকে শায়েস্ত করতে ভাঙচুরের মিথ্যা একটি মামলা দিয়ে ওই নারীকে গত ১২ই ডিসেম্বর কারাগারে পাঠানো হয়। সেই মামলায় জামিন পাওয়ার পর মিথ্যা কাবিননামা তৈরির অভিযোগে আরেকটি মামলায় ইকোকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ইকো অভিযোগ করেন, পুলিশ কর্মকর্তা প্রভাব খাটিয়ে তাকে দুই দফায় জেল খাটান। জামিনে বেরিয়ে এসে ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ওই নারী। এ ছাড়া ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের আইজিকে চিঠি দেন ইকোর মা কুইন তালুকদার। তার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম আক্তারকে গত বছরের জুলাই মাসে বিয়ে করেন মিজানুর রহমান। ২০১৯ সাল পর্যন্ত সেই তথ্য গোপন রাখার শর্ত দিয়েছিলেন স্ত্রীকে। কিন্তু মরিয়ম তা না মানায় মিজান তাকে নির্যাতন শুরু করেন।