Latest News

খণ্ডকথা ১৩ : ইউনূস মিয়ার সুযোগ

আজিম খান চৌধুরী : আমাদের ছোট্ট শহর । কারো কষ্টের কথা এখানে চাপা থাকে না । সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ ৷ ইউনুস মিয়ার চারটি ছোট ছোট বাচ্চা সদ্য এতিম ৷ কাঁদছে ৷ পুলিশের গুলিতে ওদের বাবা নিহত হয়েছে ৷ ওদের শান্তনা দেয়ার মত অনেকেই অনেক কথা বলবেন কিন্তু ওরা ওদের বাবাকেই ফেরত চাইছে ৷
শুনেছি নিজামুদ্দিন আউলিয়া একসময় ডাকাত ছিলেন ৷ নিজামুদ্দিন আউলিয়ার সঙ্গে আমার ব্যাক্তিগত পরিচয় নাই সুতরাং তিনি কিভাবে খারাপ থেকে ভাল হয়েছিলেন দেখিনি, তবে অনেক খারাপ মানুষকে চোখের সামনে ভালো হতে দেখেছি ৷ সুযোগ পেয়েছিল বলে এই মানুষগুলো খারাপ থেকে ভাল হয়েছিল ৷
একজন যত দোষীই হউক, তারপরেও আমরা চাই মানুষকে সংশোধনের সুযোগটুকু যেন রাষ্ট্র দিতে পারে, দেয়ার ক্ষমতা অর্জন করতে পারে ৷ এটা যে একটা নাগরিক অধিকার দেশটার সংবিধান কিন্তু তাই বলে, ক্রিমিনোলজিও তাই বলে ৷ প্রতিটি মানুষের জন্য নিরপেক্ষ স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাটা মৌলিক অধিকারের মত ৷
হাজারও অবিচারের ভিড়ে নিরপেক্ষ বিচার কি জিনিস সেটা হয়তো বাঙালি একদিন ভুলেই যাবে ৷ কিন্তু নিজের সঙ্গে যখনই অবিচার নামের দৈত্যটির পরিচয় ঘটবে তখন ঠিকই বলবে বাবা তুমি কে ?
জি আমি অবিচার, আমাকেই তুমি তোমরা তিনি তিনারা সবাই মিলে প্রশ্রয় দিতে ৷ আমার আরেক নাম পাপ, আমি এতই খারাপ আমি আমার বাপকেও ছাড়িনাই ৷ সুতরাং তুমি কোন হরিদাস পাল ?

আজকাল বড়োলোকের নোংরামিও অনেকের কাছে ফ্যাশন ৷ তারা ইয়াবার ব্যবসা করতে পারবে তারা হিরোইনের ব্যবসা করতে পারবে ৷ ডিজে পার্টি হবে সেখানে নেশার টাকা জোগাড় করতে কত মায়ের বুক খালি হবে ৷ তাদের সামনে পেছনে থাকবে লম্বা হাতের ইশারা ৷
গরিবের ভালোই কেউ দেখতেই পারেনা ওদের আবার নোংরামি ৷
কে জানি বলেছিল আমাদের নিয়ে, কবিদের মত করে;
গরিবেরা সাধারণত সুন্দর হয় না । গরিবদের কথা মনে হ’লে সৌন্দর্যের কথা মনে পড়ে না কখনো । গরিবদের ঘরবাড়ি খুবই নোংরা, অনেকের আবার ঘরবাড়িই নেই । গরিবদের কাপড়চোপড় খুবই নোংরা, অনেকের আবার কাপড়চোপড়ই নেই । গরিবেরা যখন হাঁটে তখন তাদের খুব কিম্ভুত দেখায় । যখন গরিবেরা মাটি কাটে ইট ভাঙে খড় ঘাঁটে গাড়ি ঠেলে পিচ ঢালে তখন তাদের সারা দেহে ঘাম জবজব করে, তখন তাদের খুব নোংরা আর কুৎসিত দেখায় ।
শুনেছি হিটলারও নাকি গরিব ছিল, ছোটবেলায় শোষণের শিকার হয়েছিল ৷ প্রতিশোধের স্পৃহা নিয়ে অভিবাবকহীন এই চারটি বাচ্চা যখন বেড়ে উঠবে, তখন তাদের পাষান হৃদয় যেন অন্য পাষানের রেকর্ড না ভাঙে ৷ আর যদি ভাঙে তখন তাদের যেন কেউ কিঞ্চিৎ মানবিক হওয়ার আবদার না করে ৷

‘মেইড ইন বাংলাদেশ’
এই ছবি গুলোতে আমার মতো কিছু মানুষের ভালোবাসার নাম আর হৃদয়ের স্পন্দন সুই-সুতোয় বুনা আছে? কাপড়ের দোকানগুলোতে যখনই যাই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ল্যাবেল গুলো দেখার চেষ্টা করি ৷ যখনই দেখি 'মেইড ইন বাংলাদেশ' তখনি গর্বে বুক কয়েক ইঞ্চি ফুলে যায় ৷ সাথে ভিনদেশি থাকলে গর্বের সাথে ব্যাপারটা দেখাই ৷ সবাই হয়তো ব্যাপারটা বুঝে না, বলে 'তাতে কি'? তার পরেও দেখাই, কিন্তু এসব নিরুৎসাহতে আমার কিচ্ছু যায় আসে না ৷
সাধারণত যারা গার্মেন্টসে কাজ করেন তাদেরকে আমাদের সমাজে কিভাবে মূল্যায়ন করা হয় তা আমরা সবাই জানি ৷ কিন্তু যে নিম্ন মুজুরীর বিনিময়ে তারা দেশের নামটি কাপড়ে বুনে বিদেশীদের কাছে পৌছিয়ে দিচ্ছে তাতে দেশের সুনাম মর্যাদা বহুগুনে বৃদ্ধিপায় ৷
প্রতিটা শ্রমজীবী মানুষের হাতের ছোয়ায় গড়ে ওঠা এই পণ্যগুলো বিলাতের মাটিতে আমাদের মনে একটু হলেও দেশকে মনে করিয়ে দেয় ৷ তখন কষ্ট করে হলেও একটার জায়গায় অনেকগুলো কিনি ৷ যারাই আমার দেশের প্রোডাক্টগুলো রাখে কেন জানি তাদের স্টোরটাতে সবসময় যেতে ইচ্ছে হয় ৷
সেদিন একজন বললেন বাংলাদেশের এই শিল্পটার শ্রমিকদের সময় খুব দুঃসময়ের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে ।
আমাদের এই আনন্দটুকু বাঁচিয়ে রাখার, সুনাম ধরে রাখার একটাই খুব সহজ উপায়- সেটা হচ্ছে পোশাক কারখানা ও পোশাক কারিগরদের অবহেলা না করা। নিষ্ঠার দিক থেকে সত্যিকারের দেশ প্রেমিকতো তারাই ৷

লন্ডন 

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com