মুনজের অাহমদ চৌধুরী: শুক্রবার অাসে, শুক্রবার যায়। এমনই এক শুক্রবার সকালে নাস্তা সেরে দাড়ি ঠিক করতে সেলুনে গিয়ে ছিলেন অাব্বা। বাসার নিচের সেলুনে। অার ফেরা হয় নি। সড়কের ফুটপাত দিয়ে হাটলেও উল্টো দিক থেকে অাসা দ্রুতগামী যান মাথার পেছনে ধাক্কা দেয় অাব্বাকে। অাইসিইউ, হাসপাতাল, সব চেষ্টা ব্যার্থ হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার দুপুরে অামার সাথে শেষবার কথা হয় ফোনে। তখন কি জানতাম, এ কথাটাই শেষ কথা হবে।
শুক্রবার দুপুরের রান্নার চুলায় চড়লেও অাব্বার অার খাওয়া হয়নি। অাম্মাকে, অামাদের তিন ভাইবোনকে বলা হয়নি শেষ কথা। চার দিন মৃত্যুর সাথে লড়ে এসময় নিঃশ্বাস চীরতরে বন্ধ হয়ে যায় অাব্বার।
একজন অাইনজীবি সড়কে খুনের শিকার হন। পরিবারের দ্যার্থহীন অভিভাবককে হারিয়ে পরিবারটি শোকাতুর হয়। একজন স্ত্রীর জীবনে নেমে অাসে অকাল বৈধব্য। ছেলে দুটো হারায় তাদের বাবাকে। ভার্সিটিতে সবে ভর্তি হওয়া কন্যাটি হারায় তার পরম বন্ধু পিতাকে। অামাদের সংসারে কোন কিছুর জন্য অভাব নেই, অভাব শুধু বাবার।
একজন অাইনজীবি সড়কে খুনের শিকার হন। পরিবারের দ্যার্থহীন অভিভাবককে হারিয়ে পরিবারটি শোকাতুর হয়। একজন স্ত্রীর জীবনে নেমে অাসে অকাল বৈধব্য। ছেলে দুটো হারায় তাদের বাবাকে। ভার্সিটিতে সবে ভর্তি হওয়া কন্যাটি হারায় তার পরম বন্ধু পিতাকে। অামাদের সংসারে কোন কিছুর জন্য অভাব নেই, অভাব শুধু বাবার।
রোদ-বৃষ্টির দিনগুলিতে অামাদের তিন ভাইবোনকে স্মৃতির কিনারে রেখে তিনি থাকেন শাহ মোস্তফা ( রহঃ) এর মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে।
অাব্বা জানো, তোমার মতোন করে অামার নামটা ধরে পৃথিবীতে অার কেউ ডাকতে পারে না। উচ্চারনটায় নামটার অতখানি মমতা, ক্ষমতা নিয়ে ডাকবার কেউ ছিল না; তুমি ছাড়া। তুমি যে জনক অামার। এ জীবনে তোমার ডাক অার কখনো শুনতে পারব না। তোমার নামটা এখনো সেলফোনের কন্টাক্ট লিষ্টে সবার অাগে অাসে, স্মৃতির জ্বলজ্বলে অধ্যায়ে তুমি থাক।
জানো অাব্বা, বাসায় সবকিছু অাগের মতোন নেই। তুমি না থাকায় অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। এখন অার দেশে থাকলেও তাহাজ্জুদের নামাজের সময় কেউ ডেকে বলে না, চা বানাচ্ছি, তুই খাবি ? বারান্দাটা অাগের মতোন অাছে। শুধু কেউ সেখানে অাকাশের দিকে তাকিয়ে অার সিগারেট খায় না। সিগারেট ছাড়তে অাম্মার অনুরোধ উপেক্ষা করে।
জানো অাব্বা, বাসায় সবকিছু অাগের মতোন নেই। তুমি না থাকায় অনেক কিছুই পাল্টে গেছে। এখন অার দেশে থাকলেও তাহাজ্জুদের নামাজের সময় কেউ ডেকে বলে না, চা বানাচ্ছি, তুই খাবি ? বারান্দাটা অাগের মতোন অাছে। শুধু কেউ সেখানে অাকাশের দিকে তাকিয়ে অার সিগারেট খায় না। সিগারেট ছাড়তে অাম্মার অনুরোধ উপেক্ষা করে।
হ্যা, অবশ্যই অামার অাইনজীবি পিতার পরিবারের ক্ষমতা ছিল সেই ঘাতক সিএনজি চালককে মামলা দেবার। জেলে ঢোকাবার।
পরিবারটি তা করেনি। কারন, ঘাতক চালকের বিরুদ্ধে মামলা দিলে সে হয়ত জেলে থাকত কিছুদিন। তাতে, তার পরিবারটি অনাহারে, অভাবে থাকত ক'দিন।
কিন্তু, তাতে করে কি সড়কে মানুষ হত্যা বন্ধ হত? হত না। কারন, দেশের সিষ্টেমটাই ' সিষ্টেম' হয়ে গেছে।
কিন্তু, তাতে করে কি সড়কে মানুষ হত্যা বন্ধ হত? হত না। কারন, দেশের সিষ্টেমটাই ' সিষ্টেম' হয়ে গেছে।
👇দুই
এই সিষ্টেমটার সিষ্টেম হবার দায় কোন দলের নয়, অামাদের নষ্ট রাজনীতির। কারন, রাজনীতিই সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে। রাজনীতিবিদরা যতক্ষন নীতিতে ফিরবেন না, দেশ ততক্ষন ফিরবে না কল্যান রাষ্ট্রের গন্তব্যে।
মাঝে মধ্যে যারা সিষ্টেমটাকে পথে ফেরাবার কথা বলে তারা 'দেশদ্রোহী', 'ষড়যন্ত্রকারী'।
একদিন, হয়ত অামার দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় স্বজন হারিয়ে জোর গলায় কান্নাও অপরাধ হবে। গনতান্ত্রিক সভ্য সমাজে তখন হয়ত নিচু গলায়, ঘরের ভেতরে গিয়ে কাদঁবার অধ্যাদেশ জারি হবে।
সেলফোনের কিবোর্ড বেয়ে নামতে থাকা এ অশ্রুর বুকভেজা বনর্নাও অপরাধ ! যদি তা সংক্রমিত করে অাপনাকে ? অামার অশ্রু অাপনাকে অাক্রান্ত করবে কেন? কেন করবে বিরক্ত। গনতন্ত্র তো অন্যকে বিরক্ত করার ক্ষমতা দেয়নি!
কি কি বলা যাবে, লেখা যাবে- এর একটা সরকারী অাচরনবিধিও সম্ভবত গনতন্ত্রে থাকে ! উন্নয়নের গনতন্ত্রে! না থাকলে দ্রুত প্রনয়নের জোর দাবি জানাই। বাবার কাছে এই যে চিঠিটা লেখা, সেটা তো এখনো অপরাধ নয়,হবার পরিস্থিতি হয়নি। এখনো সেটা ফেসবুকের গায়ে বন্ধুদের পড়তে দেয়াটা অপরাধ।
কি কি বলা যাবে, লেখা যাবে- এর একটা সরকারী অাচরনবিধিও সম্ভবত গনতন্ত্রে থাকে ! উন্নয়নের গনতন্ত্রে! না থাকলে দ্রুত প্রনয়নের জোর দাবি জানাই। বাবার কাছে এই যে চিঠিটা লেখা, সেটা তো এখনো অপরাধ নয়,হবার পরিস্থিতি হয়নি। এখনো সেটা ফেসবুকের গায়ে বন্ধুদের পড়তে দেয়াটা অপরাধ।
তবু, অাবার অাগামীকালের পথ ধরে শুক্রবার অাসবে। গত শুক্রবারের চেয়ে কোন না কোন ভাবে সেটা অালাদা হবে-ই।
অামাদের প্রধানমন্ত্রী একদিন এই রাজপথে অান্দোলনের পথ বেয়েই স্বৈরাচার হটিয়েছিলেন। পিতৃহত্যার বিচার করেছিলেন। জনকের মৃত্যুবার্ষিকী এই অাগষ্টেই। অামরা যদি অামাদের পিতার হত্যার বিচার চাই তবে তা অপরাধ হয়। অাশ্চর্য, খুব অাশ্চর্য সময়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি জনতার কথা শুনতেন, তবে তাকেঁ বলতাম; পিতৃহত্যার বিচার লাগবে না, বিচার চাইব না। রিমান্ড শেষে কারাগারে যাওয়া ২২ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রকে মুক্তি দিন। অাপনার বাবার, পিতা হারাবার দিনে কারাবন্দি ছাত্রগুলো অন্তত যেন তাদের বাবার কাছে ফিরে যেতে পারে।
১০ আগষ্ঠ ২০১৮ ইং
লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিক।
‘মুক্তমত’ বিভাগে লেখক মুনজের আহমদ চৌধুরীর লেখাগুলো-