Latest News

স্পেনের গণমাধ্যমে বাংলাদেশের নুসরাত হত্যার রায়

সাহাদুল সুহেদ: বাংলাদেশে ফেনীর সোনাগাজীর আলোচিত মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি  হত্যা মামলার রায়কে গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে স্পেনের সংবাদ মাধ্যম। বাংলাদেশের আদালত ১৬ জনের মৃত্যুদ-ের যে রায় দিয়েছেন সে সংবাদ স্পেনের জাতীয় দৈনিক ‘এল পাইস’, ‘এল পেরিয়োডিকো’, ‘লা ভানগুয়ারদিয়া’, টেলিভিশন চ্যানেল ‘লা সেক্সতা’, ‘টেলি সিঙ্কো’ সহ  স্থানীয় বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।
জাতীয় দৈনিক ‘এল পাইস’ নুসরাত হত্যা মামলার রায়ের সংবাদের শিরোনাম করে ‘বাংলাদেশে এক যুবতীকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ১৬ জনের মৃত্যুদ-ের রায়।’ গত ২৪ অক্টোবর প্রকাশিত পত্রিকাটির সংবাদটিতে লিখা হয়- বাংলাদেশের একটি আদালত ১৯ বছর বয়সী এক যুবতীকে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে ১৬ জন ব্যক্তির মৃত্যুদ-ের রায় দিয়েছে। নুসরাত জাহান রাফি নামের ঐ যুবতী ইসলামিক বিদ্যালয়ের পরিচালক কর্তৃক যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন বলে অভিযোগ ছিলো। দ-প্রাপ্তদের মধ্যে হলেন সিরাজ-উদ-দৌলাসহ  বেশ কয়েকজন শিক্ষক, স্থানীয় নেতা এবং নুসরাতের সহপাঠি যাদের মধ্যে দুই জন ছাত্রী রয়েছেন। এপ্রিল মাসে সংঘটিত এই অপরাধটি দেশজুড়ে বিক্ষোভের সৃষ্টি করে এবং দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন।

স্পেনের আরেক জাতীয় দৈনিক ‘এল পেরিয়োডিকো’ এর আন্তর্জাতিক বিভাগে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল - পেনা দে মুয়েরতে পারা ১৬ পারসোনাস পর কিমার ভিভা আ উনা খভেন এন বাংলাদেশ’। অর্থাৎ ‘বাংলাদেশে জীবন্ত পুড়িয়ে এক যুবতীকে মারার জন্য ১৬ ব্যক্তিকে মৃত্যুদ-’। নুসরাত হত্যার প্রতিবাদে নারী সংহতির ব্যানারে সংবাদ সংস্থা এএফফি‘র একটি ছবিও ‘এল পেরিয়োডিকো’ পত্রিকাটিতে প্রকাশিত হয়। ২৪ অক্টোবর প্রকাশিত পত্রিকার সংবাদটিতে আরো বলা হয়- একজন ইসলামি শিক্ষকের যৌন নির্যাতনের জন্য যুবতীর মৃত্যু হয়। ঘটনার পর দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যাতে দ্রুত বিচার কার্য সম্মন্ন হয়।
‘টেলি সিঙ্কো’ টেলিভিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম দেয়া হয়- নুসরাত জাহান রাফি তার নিজ ইসলামি স্কুলে যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় তাকে জীবন্ত পুড়ানোর জন্য ১৬ জনকে মৃত্যুদ- দেয়া হয়েছে।
নুসরাত জাহান হত্যাকা-ের রায়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে ‘লা সেক্সতা’ টেলিভিশনের ওয়েবসাইটেও। ২৫ অক্টোবর প্রকাশিত টেলিভিশনের ঐ সংবাদে বলা হয়- ১৯ বছরের যুবতী নুসরাত জাহান নিজ ইসলামি বিদ্যালয়ের পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন। অভিযোগ প্রত্যাহার করতে অস্বীকার করায় একাধিক ব্যক্তি তাকে জীবিত পুড়িয়ে দেয়। ঐ যুবতী হত্যার দায়ে ১৬ ব্যক্তিকে মৃত্যুদ-ের রায় দিয়েছে দেশটির আদালত। সংবাদের শেষাংশে উল্লেখ করা হয় যে, বাংলাদেশে স্থানীয় এনজিও সংস্থা ‘অধিকার’ এর তথ্য অনুযায়ি দেশটিতে ২০১৮ সালে বাংলাদেশে ৩২ জন নাবালিকাসহ কমপক্ষে
৪৭ জন নারী যৌন নির্যাতনে মৃত্যু করেন ও ৬৩৫ টি যৌন নির্যাতনের মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।
২৪ অক্টোবর ‘লা ভানগুয়ারদিয়া’ পত্রিকার আন্তর্জাতিক বিভাগে শিরোনাম হয়েছে ‘এক শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে হত্যার জন্য বাংলাদেশে ১৬ জনের মৃত্যুদ-ের রায়’। সংবাদে উল্লেখ করা হয়- মাদ্রাসার পরিচালকের বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ করায় ১৯ বছর বয়সী নুসরাত জাহানকে তার স্কুলের
ছাদে জীবন্ত পুড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। সংবাদে আরো বলা হয়- নুসরাত বাংলাদেশের একজন রক্ষণশীল পরিবারের মেয়ে এবং দেশটির রাজধানী থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে একটি ছোট শহর ফেনীর একটি বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতেন। ২৭ মার্চ বিদ্যালয়ের পরিচালক তাকে তার অফিসে ডেকে নিয়ে তাকে স্পর্শ করেন। মৃত্যুর পূর্বে সে তার শেষ বিবৃতিতে জানিয়েছিল- ‘আমার শেষ নি:শ্বাস থাকা পর্যন্ত আমি এ অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই করবো।’
‘লা ভানগুয়ারদিয়া’ পত্রিকার সংবাদে উল্লেখ করা হয়-  যে দেশে এরকম মামলার রায় হতে অনেক বছর লাগে, সেখানে নুসরাত হত্যার রায় খুব দ্রুত হয়েছে।

নুসরাত হত্যা মামলার রায়ের সংবাদ ‘এল মুন্ডো’, ‘এল ডিয়ারিও’, ‘এল কনফিডেনশিয়াল’ সহ স্পেনের  বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে।

প্রসঙ্গত, নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা শুরু থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে প্রচার করেছে স্পেনের সংবাদমাধ্যমগুলো। এর ছয় মাসের মধ্যেই ১৬ জনের ফাঁসির রায় প্রদান করলেন বাংলাদেশের আদালত।


যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com