Latest News

ব্রুনাইয়ের জঙ্গলে আটক ৫ বাংলাদেশি : আদম পাচার চক্রের নেপথ্যে যুবলীগ নেতা

এসবিএন ডেস্ক : উচ্চ বেতনে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ব্রুনাইয়ে নিয়ে  সেদেশের এক পাহাড়ি জঙ্গলে পাঁচ বাংলাদেশিকে আটক রাখার সংবাদ পাওয়া গেছে। ঐ জঙ্গলে একটি কাঠের ঘরে আটকে রেখে তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে। মানবপাচারের শিকার ওই পাঁচ হতভাগ্য বাংলাদেশি হলেন-গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার জয়নাল আবেদীন, আক্কেল আলী, ফারুক হোসেন, মাহাবুব হোসেন ও রুবেল মিয়া।
নাবিরবহর গ্রামের হতভাগ্য ছয় যুবককে মোটা বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে পাচার করে দেয় স্থানীয় আদম ব্যবসায়ীরা। রফিকুল ইসলাম নামে এক যুবলীগ নেতা রয়েছেন এই চক্রের নেপথ্যে।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি গ্রাম নাবিরবহর এলাকা দারিদ্র্যের নির্মম কশাঘাতে পীড়িত একটি জনপদ। দরিদ্র এই মানুষগুলোকে উচ্চ আয়ের রঙিন স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা করেছে মানব পাচারকারী চক্রটি।
প্রতারিত মানুষগুলোর স্বজনরা জানান, জমি-জিরাত, গরু-গহনা বিক্রি করে ছয় যুবককে মানব পাচারকারীদের হাতে তুলে দিয়ে বিদেশে পাঠিয়েছিলেন তারা। অনাহার-অর্ধাহারে দিন কাটছে তাদের। পরিবারের লোকজনদের শুধু দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন তারা। দীর্ঘ ছয় মাস পর সম্প্রতি দেশে ফিরে আসেন পাচার হওয়া ছয় জনের মধ্যে হাবিব নামে একজন। এই কয়েক মাসে অনাহার-অর্ধাহার, নির্মম নির্যাতনে শুকিয়ে যাওয়া হাবিব জানান, দালাল চক্র ব্রুনাইয়ের একটি জঙ্গলে নিয়ে একটি কাঠের ঘরে আটকে রাখে। কোনো কাজ না দিয়ে বরং তাদের অন্য দালালের কাছে বিক্রির চেষ্টা করতে থাকে।
কর্মহীন, হতাশাযুক্ত জীবনে খাদ্যাভাব আর নির্যাতনের কারণে দেশে ফেরার ইচ্ছে তাদের সকলের। স্বজনরা এ নির্মমতার খবর পেয়ে পাচার হওয়াদের দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য দালালদের চাপ দিলে দালালরা আরেক দফা টাকা দাবি করেন।
বিদেশে পাঠানোর জন্য বহু কষ্টে  জনপ্রতি ৪ লাখ টাকা দালালদের দেয়া হয়েছিল। এখন ফিরিয়ে আনার জন্য আরও দেড় লাখ টাকা দাবি করা হচ্ছে। এত টাকা দিয়ে জয়নাল আবেদীন, আক্কেল আলী, ফারুক হোসেন, মাহাবুব ও রুবেল মিয়াদের ফিরিয়ে আনতে পারছেন না তাদের দরিদ্র স্বজনরা। নিরুপায় হয়ে ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের কাছে ধরনা দিয়ে চলেছেন তারা। তাদের আহাজারিতে যেন আকাশও ভারি হয়ে ওঠেছে। আক্কেল আলীর স্ত্রী লালবানু জানান, তার কোলে থাকা শিশুর জন্য অন্যের বাড়ি থেকে দুধ পর্যন্ত চেয়ে খাওয়াতে হচ্ছে। তিনি তার স্বামীকে দেশে ফিরে আনার দাবি জানান।
অন্যদিকে দালাল চক্রের হোতা সেলিম হোসেন বহাল তবিয়তে এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি তার অন্য সহযোগী ব্রুনাই প্রবাসী কামরুল ইসলামের ওপর দোষ চাপিয়ে নিজে দায়মুক্ত থাকতে চাইছেন। তিনি জানান, আমার এ বিষয়ে করার কিছু নেই, যা করেছে কামরুলই করেছে। এ চক্রের নেপথ্যে থাকা ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম এ ব্যাপারে পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হলে সাংবাদিকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। ফুলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জাকিরুল ইসলাম বলেন, আমি এ রকম ছয়জনের অভিযোগ পেয়েছি, বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। তবে এখন পর্যন্ত আমি যা শুনেছি তা হূদয়বিদারক। পাচার হওয়া মানুষগুলোকে খাবারও দেওয়া হচ্ছে না। দ্রুত ফিরিয়ে আনা না হলে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। এজন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

যোগাযোগ

Editor:Sahadul Suhed, News Editor:Loukman Hossain E-mail: news.spainbangla@gmail.com